শবে মেরাজ কবে ২০২৪ বাংলাদেশ, কেন পালন করা হয়, ইতিহাস ও হাদিস

আরবি ক্যালেন্ডার হিজরী রজব মাসের ২৬ তারিখ শবে মেরাজ পালিত হয়। বাংলাদেশের সকল ধর্মপ্রাণ মুসলমান এই দিনটি উপলক্ষে অনেক এবাদত করে থাকে। তাই অনেকেই আছেন যারা শবে মেরাজ কবে জানতে চেয়ে ইন্টারনেটে অনুসন্ধান করেন। আজকের পোস্টে আমরা বিস্তারিত তুলে ধরবো শবে মেরাজ কবে বা কয় তারিখে শবে মেরাজ এর সঠিক ইতিহাস।

শবে মেরাজের যে ঘটনা ঘটে সেটি আরবি ক্যালেন্ডার এর নবম মাসে গঠিত হয়। আর আমরা জানি আরবি ক্যালেন্ডার এর নবম মাস রজব মাস নামে পরিচিত। তাই সকল মুসলমান শবে মেরাজের ঘটনা কে সামনে রেখে এই দিনটি কবে তা জানতে চেয়ে অনুসন্ধান করে। ২০২৪ সালের শবে মেরাজ বা লাইলাতুল মেরাজ কবে হবে সে সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরা হয়েছে।

শবে মেরাজ কবে ২০২৪

সকল ধর্মপ্রাণ মুসলমান শবে মেরাজ সম্পর্কে নানান ধরনের ঘটনা জেনে থাকে। যার জন্য সবাই শবে মেরাজে বিভিন্ন ধরনের ইবাদত করার জন্য মশগুল হয়ে থাকে। তাই এ বছর ইংরেজি সাল অনুযায়ী শবে মেরাজ অনুষ্ঠিত হবে ৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ রোজ বৃহস্পতিবার। তাই যারা এখনো জানেন না কবে শবে মেরাজ অনুষ্ঠিত হবে। তারা সবাই কে পোস্ট শেয়ার করার মাধ্যমে জানিয়ে দিন বাংলাদেশের শবে মেরাজ কবে হবে।

আরও জানুনঃ 

শবে মেরাজ কি?

আমাদের মুসলমানের মধ্যে অনেকেই আছে যারা জানেনা শবে মেরাজ আসলে কি। শবে ও মেরাজ দুইটি আরবি শব্দ। যেখানে এই শব্দ দুটির অর্থ হচ্ছে আরোহন। আমরা অনেকেই জানি আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এই রাতে আসমানে গমন করেন। অন্যদিকে আল্লাহর কাছ থেকে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের হুকুম নিয়ে আসেন। তারপরে থেকে সকল মুসলমান দিনে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করে। এই জন্য এই দিনটি আমাদের মাঝে বিশেষ ভাবে পালিত হয়ে থাকে।

শবে মেরাজ কেন পালন করা হয়?

আমাদের প্রিয় নবী আল্লাহর নিকটস্থ লাভ করার পর যখন পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের জিম্মাদারী নিয়ে পৃথিবীতে আসলেন। তারপরে থেকে সকল মুসলিম নর-নারীর জন্য পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ ফরজ হয়ে গেল। তারপর থেকে শবে-মেরাজ কে একটু ভিন্নভাবে সবাই দেখে। যার জন্য অনেকেই লাইলাতুল মিরাজের রাত্রিযাপন করে বিভিন্ন ইবাদত পালন করে থাকে। বিস্তারিতভাবে নিচে তুলে ধরেছি শবে মেরাজের ইতিহাস ও শবে মেরাজ সম্পর্কে সহিহ হাদিস।

শবে মেরাজ কত তারিখে ২০২৪

যারা এখনো জানেন না ইংরেজি নববর্ষ অনুসারে শবে মেরাজ কবে অনুষ্ঠিত হবে। তাদেরকে জানাতে চাই এ বছর শবে মেরাজ অনুষ্ঠিত হবে ফেব্রুয়ারি মাসের  ৮ তারিখ রোজ বৃহস্পতিবার। আশা করি আপনারা জেনে গেছেন শবে মেরাজ কবে পালিত হবে।

শবে বরাত কবে ২০২৪ বাংলাদেশে, দেখুন ২০২৪ সালের শবে কদর কবে, শবে মেরাজ কবে

বাংলাদেশের শবে মেরাজ কবে ২০২৪

শবে মেরাজ বা লাইলাতুল ইসরা। আমাদের প্রিয় নবী‌জি সা. এর জীবনে ঘটা এক অ‌বিষ্মরণীয় ঐ‌তিহা‌সিক রজনী। যে রাতে আমাদের নবী‌জি সা. উর্ধ্বজগত সায়র করে‌ছিলেন। এ‌টি আমাদের নবী‌জির জন্য মহা সম্মানের,‌ আমাদের জন্য মহা‌ গৌরবের। কিন্তু এ রাতের সাথে আমাদের দেশে কতেক অবাস্তব ও ভি‌ত্তিহীন প্রথা জ‌ড়িত রয়েছে। মানুষ দ্বীনের নামে এগুলো পালন করে প্রতা‌রিত হচ্ছে। অথচ এগু‌লো পালনের কোনো ভি‌ত্তি নেই। এগুলোকে দ্বীনী কাজ বলা যা‌বে না।

লাইলাতুল মেরাজ কবে ২০২৪

লাইলাতুল মেরাজের রাতের ঘটনা নবী করিম সাঃ কে ঘিরে। এই রাত্রে নবীজি আসমানে গমন করেন অতঃপর আল্লাহর সাথে দেখা করেন। তারপর থেকে আমরা এই দিনটিকে লাইলাতুল মিরাজ হিসেবে চিনি। এই দিনটি বাংলাদেশে ফেব্রুয়ারি মাসের ৮ তারিখ রোজ বৃহস্পতিবার উদযাপন করা হবে।

শবে মেরাজের ইতিহাস

এসব ভি‌ত্তিহীন আমল পালন করলে সওয়াব হওয়া তো দূরের কথা, বরং গোনাহগার হবে। আল্লাহ রাসূলের কাছে জবাব‌দীহী করতে হবে। আসুন জেনে নিই, এ রা‌ত্রি কে‌ন্দ্রিক কোন‌টি বাস্তব আর কোন‌টি অবাস্তব।

বাস্তবতা

১) নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাই‌হি ওয়াসাল্লামের জীবনে এক‌টি রজনী এমন গত হয়েছে, যাতে তি‌নি প্রথমে মক্কা থেকে বাইতুল মুকাদ্দাস গিয়েছেন। যাকে কুরআনের ভাষায় ‘ইসরা’ বলে। এ পর্যন্ত বিশ্বাস করা ফরয; অস্বীকার কুফর। কারণ এ‌ অংশ কুরআন মাজীদ দ্বারা প্রমা‌ণিত। এটাকে অস্বীকার করার অর্থ কুরআনকে অস্বীকার করা। আর কুরআন অস্বীকার করা কুফর।

তারপর সেখান থেকে ‌তি‌নি সশরীরে আসমানে উর্ধ্বজগতে প‌রিভ্রমণ করে‌ছিলেন। এর নাম ‘মিরাজ’। এটিও বিশ্বাস করা জরু‌রি। তবে এ অংশে সন্দেহ পোষণ করা ইলহাদ ও যিন্দীকী, তথা ধর্মদ্রোহীতা হবে।

‌তি‌নি ঠিক কত তা‌রিখে ইসরা ও মিরাজে গমন করে‌ছিলেন, বিশ্বাসের জন্য তা নির্ধারণ করা জরু‌রি নয়। তবে ২৭ রজব বেশ প্র‌সিদ্ধ। ঐ‌তিহা‌সিকগণ আরও অনেক তা‌রিখ উল্লেখ করেছেন।

মিরাজ যেমন আমাদের নবী‌জির জন্য সম্মান ও মর্যাদার, তেম‌নি আমাদের জন্য অনেক অনেক গৌরবের। এ‌টি আল্লাহ তাআলার এক মহা নিদর্শন। ইসলাম ও মুস‌লিম উম্মাহর ই‌তিহাসে এ‌টি এক‌টি স্মরণীয় তা‌রিখ। এবং নবী‌জির জীবনের এ‌টি এক জ্বলজ্বলে অধ্যায়। ব্যস, এতটুকুই!

অবাস্তবতা

‌কিন্তু এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে বহু ভি‌ত্তিহীন কাজকর্ম। যেমন :

১) প্র‌তিবছর এ‌টিকে একবার করে উদযাপন বা স্মরণ করা।
২) এ‌টিকে লাইলাতুল কদর বা লাইলাতুল বরাআত এর মতো ম‌হিমা‌ন্বিত ও ফযীলতপূর্ণ মনে করা।
৩) এ তা‌রিখে দিনের বেলা রোযা রাখা।
৪) এ রাতে ইবাদত বন্দেগী অন্য রাতের চেয়ে বে‌শি করা।
৫) এ রাতে বিশেষ নামায আছে মনে করা।
৬) এ রাতে মস‌জিদে জমায়েত হওয়া।
৭) এ রা‌ত উপলক্ষে মস‌জিদে ওয়াজ-মাহ‌ফিলের আয়োজন করা।
৮) মি‌ষ্টি জিলাপী বিতরণের আয়োজন করা।
৯) ভালো খাবার-দাবারের ব্যবস্থা করা, ইত্যাদি।

নবী‌জির কোনো সবল কিংবা দুর্বল হাদীস দ্বারা এর কোনো‌ একটি প্রমা‌ণিত নয়।

ফযীলতের কয়েক‌টি রাত বাদ দিলে বছরের অন্য সব রা‌ত্রির মতোই এক‌টি রাত এ‌টি। শবে মেরাজ এক‌টি ঐ‌তিহা‌সিক রজনী, শরঈ রজনী নয়। শরঈ রজনী সেসব রাত, যেগুলোকে ইসলাম ম‌হিমান্বিত ও বিশেষ ফযীলতের রা‌ত্রি বলে ঘোষণা করেছে। যেমনঃ কদরের রা‌ত্রি। আর ঐ‌তিহা‌সিক রা‌ত্রি হলো, যাতে ঐ‌তিহা‌সিক কোনো ঘটনা ঘটেছে। যেমনঃ বদর যু*দ্ধের দিন, মক্কা বিজয়ের দিন।

শবে মেরাজের ইবাদত আর অন্য রাতের ইবাদতের সওয়াব সমান।

শবে মেরাজ পালন করার নিয়ম

শাইখুল ইসলাম তাকী উসসানী দা.বা. ব‌লেছেন : “বিশেষ পদ্ধ‌তিতে এ‌ রাত উদযাপনের কোনো ভি‌ত্তি নেই। এ রা‌ত ইবাদতের ইহতেমাম করা বিদআত। এ‌টি য‌দি ফযীলতের রাত হতো, তা হলে নবী‌জি আমাদের সেটা অব‌হিত করতেন। অথচ পঞ্চম নববী সনে তি‌নি মেরাজ গমন করেছেন। এরপর তি‌নি আরও ১৮ বছর বেঁচে ছি‌লেন; কিন্তু তি‌নি এক‌টি বারের জন্য তা পালন করেন‌নি।

শবে মেরাজ

“এরপর সাহাবায়ে কেরাম আরও একশ’ বছর বেঁচে ছিলেন, তাঁদের মধ্যেও এমন কিছু পালন করতে দেখা যায়‌নি। বরং কোনো কোনো অ‌তি উৎসাহী লোক এ তা‌রিখে রোযা রেখেছে বলে সংবাদ পেয়ে হযরত উমর রা‌যি. খ‌ুব ক্রোধা‌ন্বিত হয়েছেন। এবং ‌লোকদের‌কে প্রকাশ্যে খেতে বাধ্য করেছেন।” (ইসলাহী খুতুবাত, প্রথম খন্ড)

কাজেই এ রাতে স্বাভা‌বিক জীবনযাপন ক‌রি। অ‌তি উৎসাহে গোনাহ কামাই না-ক‌রি। আল্লাহ আমাদেরকে সুন্নত আঁকড়ে ধরার এবং বিদআত প‌রিহার করার তাওফীক দিন। – মাওলানা মুহাম্মাদ সাইফুদ্দীন গাজী

শবে মেরাজ সম্পর্কিত সহীহ হাদিস

আনাস ইবনু(রাঃ)থেকে বর্ণিত রাসুল(সাঃ)বর্ণিত করেছেনঃ বোরাক কে আমার কাছে আনা হল। বোরাক একটি চার পা আলা প্রানী যেটা গাধার চেয়ে বড় এবং খচ্চরের চেয়ে ছোট। সেই প্রানীর পিঠে চড়লাম। সে তার যাত্রা শুরু করল শেষ দৃশটি পর্যন্ত সে তার পা বাড়াল । তারপর আমাকে বাইতুল মাকদিসে নিয়ে আসা হয়। তারপর আমি মসজিদে ঢুকে ২ রাকাত নামাজ আদায় করি। এরপর জীব্রাঈল (আঃ) আমার নিকট এক গ্লাস মদ এবং এক গ্লাস দুধ নিয়ে আসেন। আমি দুধ গ্রহন করি। তখন জীব্রাঈল (আঃ) বললেন ধন্যবাদ আপনি ফিত্রাত (প্রকৃতি) গ্রহন করলেন। তারপর তিনি আমাকে বেহেশত এ নিয়ে যান।

আজকের পোষ্ট থেকে আমরা জানতে পেরেছি শবে মেরাজ কবে এবং শবে মিরাজ কেন পালন করা হয়। অন্যদিকে আপনাদের জন্য শবে মেরাজের ইতিহাস ও তাৎপর্য তুলে ধরেছি। আশা করি এর মাধ্যমে আপনারা সঠিক তথ্য জানতে পেরেছেন। সবার সাথে শেয়ার করে শবে মেরাজ কবে ও ইতিহাস সম্পর্কে জানিয়ে দিন।

Read More

শবে বরাত কবে ২০২৪ বাংলাদেশে, দেখুন ২০২৪ সালের শবে কদর কবে, শবে মেরাজ কবে

Leave a Comment