তেতুলের উপকারিতা ও অপকারিতা

টক ফলের নাম বললে প্রথমে তেঁতুলের নাম আসে। কিছু তেঁতুল টক হয় এবং কিছু তেতুল টক ও মিষ্টি হয়। টক ও মিষ্টি তেতুল অনেকের কাছে প্রিয়। এই ফলটি কাঁচা ও পাকা উভয় অবস্থায় খাওয়া যায়। যদিও বসন্তকালীন এই ফল কিন্তু এটি সংরক্ষণ করে সারা বছর রাখা যায়। এছাড়াও বাজারে সারা বছর পাওয়া যায়। তাই এই ফল অন্যান্য টক ফলের চেয়ে চাহিদা অনেকটাই বেশি। তবে অনেকেরই ধারণা তেঁতুল খাওয়া স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর এবং তেঁতুল খেলে র*ক্ত পানি হয়। এই ধারণা ভুল, তেঁতুলে রয়েছে প্রচুর পুষ্টি ও ভেষজ গুণ। আপনি জানলে অবাক হবেন অন্যান্য ফলের তুলনায় এর পুষ্টিগুণ বেশি।

অনেকেই ভাবে যেহেতু তেঁতুল টক জাতীয় এই ফলে তেমন উপকারিতা নেই। তবে তেঁতুলের অনেক উপকারিতা রয়েছে যা অন্যান্য ফলের তুলনায় অনেকটাই বেশি। এই ফলের বেশ কিছু স্বাস্থ্য উপকারিতা রয়েছে যা আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য অনেক উপকারী। এই ফলের ঔষুধি গুনাগুন রয়েছে এর ফলে বিভিন্ন অসুখ থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। এর পাশাপাশি তেঁতুল দেহে উচ্চ র*ক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে এবং হৃদরোগীদের জন্য খুবই উপকারী।

তাই বলা যায় তেতুলের স্বাস্থ্য উপকারিতা পাওয়ার জন্য। খাদ্য তালিকায় এই ফলটি রাখা উচিত। পরিমাণ মতো খেতে পারলে পাওয়া যাবে বেশ স্বাস্থ্য উপকারিতা। আমরা এই পোস্টে তেতুলের স্বাস্থ্য উপকারিতা সম্পর্কে তুলে ধরেছি। আশা করা যায় এখান থেকে আপনি খুব সহজে জানতে পারবেন তেতুলের স্বাস্থ্য উপকারিতা সম্পর্কে।

তেতুলের উপকারিতা কি

তেতুল খেতে পছন্দ করে না এরকম মানুষ খুব কম পাওয়া যাবে। তেতুলের খোসা ফেলে দিয়ে পাকা তেতুলের সাথে লবণ মিশিয়ে ও মরিচের গুঁড়া মিশিয়ে খেতে অনেকেই পছন্দ করে। এই ফল জ্যাম, জেলী, আচার, সিরাপ ও পানীয় তৈরী করেও খাওয়া যায়। এই ফলের অনেক স্বাস্থ্য উপকারিতা হয়েছে যেগুলো আমাদের জন্য খুবই উপকারী।

  • প্রতি ১০০গ্রাম পাকা তেতুলে জলীয় অংশ ২০.৯ গ্রাম, মোট খনিজ পদার্থ ২.৯ গ্রাম, আঁশ ৫.৬ গ্রাম, খাদ্যশক্তি ২৮৩ কিলোক্যালোরি, আমিষ ৩.১ গ্রাম, চর্বি ০.১ গ্রাম, শর্করা ৬৬.৪ গ্রাম, ক্যালসিয়াম ১৭০ মিলিগ্রাম, আয়রন ১০.৯ মিলিগ্রাম, ক্যারোটিন ৬০ মাইক্রোগ্রাম, ভিটামিন বি ২ ০.০৭ মিলিগ্রাম, ভিটামিন সি ৩ মিলিগ্রাম,
  • ফসফরাস ১১৩ মিলিগ্রাম,পটাশিয়াম ৬২৮ মিলিগ্রাম, ভিটামিন ই ০.১ মিলিগ্রাম, বিটা ক্যারোটিন ৬০ মাইক্রোগ্রাম, সেলেনিয়াম ১.৩ মিলিগ্রাম, সোডিয়াম ২৮ মিলিগ্রাম, দস্তা ০.১২ মিলিগ্রাম, ম্যাগনেসিয়াম ৯২ মিলিগ্রাম, তামা ০.৮৬ মিলিগ্রাম।

তেতুলের উপকারিতা বাংলা

তেতুলের পুষ্টিগুণ সম্পর্কে আমরা উপর থেকে জানতে পেরেছি। এই ফলটি আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য কতটা উপকারী তা জেনে রাখা প্রয়োজন। তেতুল খাওয়ার মাধ্যমে বেশ উপকারিতা পাওয়া যায় যা স্বাস্থ্যের জন্য অনেক ভালো। অন্যান্য ফলের তুলনায় তেতুলের উপকারিতা বেশি। এখানে আলোচনা করা হয়েছে তেতুল খাওয়ার মাধ্যমে আমাদের শরীরে কতটা উপকারে আসতে পারে। তাহলে জেনে নেওয়া যাক।

তেঁতুল খাওয়ার মাধ্যমে হজম শক্তি বৃদ্ধি করা যায়। এর পাশাপাশি হার্ট ভালো রাখে, ত্বক উজ্জ্বল করে, ক্যান্সার প্রতিরোধ করে, ‌ লিভার সুরক্ষিত রাখে, ওজন কমাতে সাহায্য করে, ক্ষত সারাতে সাহায্য করে, সর্দি কাশি দূর করে, বাতের ব্যথা কমায়, ডায়াবেটিস কমায়, জন্ডিস রোগে উপকারী, খাবারে রুচি বাড়ায়, হাত-পা জ্বালা করলেও এই শরবতে উপকার পাওয়া যায়, র*ক্তে কোলেস্টেরল কমায়, এছাড়াও আরো বিভিন্ন গুণাগুণ রয়েছে যেগুলো আমাদের জন্য উপকারী।

তেতুলের উপকারিতা ও অপকারিতা

তেঁতুলের পুষ্টিগুণ সম্পর্কে আমরা উপর থেকে জানতে পেরেছি। এর উপকারিতা আমাদের জন্য কতটা কার্যকারী আমরা তা আলোচনা করব। তেতুলের ওষুধে গুনাগুন আমাদের শরীরের বিভিন্ন অসুখ দূর করতে সাহায্য করে। শরীর স্বাস্থ্য ভালো রাখতে সাহায্য করে। তাই বলা যায় অন্যান্য খাবার তালিকায় তেঁতুল রাখা উচিত।

  • ত্বক উজ্জ্বল করে- তেতুল যেমন আমাদের শরীরের বিভিন্ন অসুখ দূর করতে সাহায্য করে। তেমনি ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করে। ক্ষতিকারক আলট্রা ভায়োলেট নামক এর থেকে রক্ষা করে। এছাড়াও তেঁতুলে উপস্থিত হাইড্রক্সি অ্যাসিড ত্বকের এক্সফলিয়েশন করতেও সাহায্য করে। যার ফলে মরা কোষ উঠে যায় এবং ত্বক উজ্জ্বল দেখায়।
  • হজম সমস্যা দূর করে- শরীর সুস্থ ও সবল রাখার জন্য অবশ্যই স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়া প্রয়োজন। এর পাশাপাশি হজম শক্তি বৃদ্ধি পায় এ ধরনের খাবার খাওয়া প্রয়োজন। হজম শক্তি বৃদ্ধিতে সাহায্য করে তেঁতুল। তেঁতুল আমাদের পিত্তথলি থেকে এক রকম উৎসেচক নির্গত হতে সাহায্য করে। যে কারণে হজমের সমস্যা দূর হয়। হজম তাড়াতাড়ি হয়। এছাড়াও তেঁতুলের মধ্যে থাকে প্রচুর পরিমাণ ফাইবার। যা আমাদের রেচনে সাহায্য করে। যাদের কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা রয়েছে তাঁরাও কিন্তু খেতে পারেন তেঁতুল।
  • কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে- কোষ্ঠকাঠিন্যর দূর করার জন্য তেতুলের ভূমিকা রয়েছে। এছাড়াও পেট ব্যথার মত সমস্যা দূর করে তেতুল। তেঁতুলের মধ্যে টার্টারিক অ্যাসিড, ম্যালিক অ্যাসিড এবং পটাশিয়াম আছে, যা কোষ্ঠ্যকাঠিন্য দূর করে।
  • হার্ট ভালো রাখে- প্রত্যেকের জন্যই হার্ট ভালো রাখা প্রয়োজন, সুস্থ স্বাভাবিক জীবন যাপন করার জন্য। হার্ট ভালো রাখতে সাহায্য করে তেঁতুল তাই তেঁতুল খাওয়া উচিত। এতে উপস্থিত ফ্ল্যাভরনয়েড খারাপ কোলেস্টেরল কমায় এবং ভালো কোলেস্টেরল বাড়ায়। এছাড়াও র*ক্তে ট্রাইগ্লিসারাইড (এক ধরনের ফ্যাট) জমতে দেয় না। এতে উপস্থিত উচ্চ পটাশিয়াম র*ক্ত চাপ কম করতে সাহায্য করে।
  • ওজন কমায়- তেঁতুলে হাইড্রক্সি সাইট্রিক অ্যাসিড নামে একটি যৌগ রয়েছে যা শরীরে চর্বি জমা হতে বাধা দেয়। এছাড়াও তেঁতুলে উচ্চ মাত্রায় ফাইবার আছে। আর একই সঙ্গে এটা সম্পূর্ণ ফ্যাট ফ্রি। গবেষণায় দেখা গেছে প্রতিদিন তেঁতুল খেলে ওযন কমে।
  • সর্দি-কাশি সারাতে সাহায্য করে- অনেকেরই এ সমস্যা কারণে বিভিন্ন ধরনের মেডিসিন সেবন করে থাকে। সর্দি কাশি দূর করতে তেতুলের সাহায্য নিয়ে যেতে পারে। এতে উপস্থিত ভিটামিন সি শরীরের ইমিউনিটি বা রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বাড়ায়।
  • স্নায়ুর জন্য ভাল- তেঁতুলে বি ভিটামিন, থায়ামিন রয়েছে- যা স্নায়ুর সঠিক কার্যকারিতা এবং পেশীর বিকাশের জন্য প্রয়োজনীয়। তাই বলা যায় তেঁতুল খাওয়াটা অনেক জরুরি।
  • ডাইবেটিস নিয়ন্ত্রণ- ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ রাখার জন্য বিভিন্ন ধরনের মেডিসিন সেবন করা হয়। এক্ষেত্রে তেতুলের বিচি অনেকটাই সহায়ক। এছাড়াও র*ক্তে চিনির মাত্রা কমায় ও ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ রাখে
  • র*ক্ত পরিষ্কার রাখে- অনেকেরই ধারণা তেঁতুল খাওয়া স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর এবং তেঁতুল খেলে র*ক্ত পানি হয়। কিন্তু তা নয় তেতুল খাওয়ার মাধ্যমে র*ক্ত পরিষ্কার রাখা যায়।
  • খাবারের রুচি বাড়ায়- অনেকেরই খাবারে রুচি না থাকার ফলে খাবারের অনীহা দেখা যায়। এক্ষেত্রে খাবারের রুচি বাড়াতে সাহায্য করে তেঁতুল। যারা তেঁতুল খেতে পারবে তারা অনেকটাই খাবারের রুচি বাড়িয়ে তুলতে পারবে।
  • লিভার সুরক্ষিত রাখে- দেখা গেছে তেঁতুল আমাদের লিভার বা যকৃতকেও ভালো রাখে। পরীক্ষা করে দেখা গেছে নিয়মিত তেঁতুল পাতা ব্যবহার করে উচ্চ মাত্রায় মদ্যপানের ফলে ড্যামেজড লিভার অনেকটা সেরে উঠেছে। তাই লিভার সুরক্ষিত রাখার জন্য তেঁতুল খাওয়া উচিত।
  • হাত-পা জ্বালা দূর করতে- অনেকেরই হাত পায়ের জ্বালাপোড়া দেখা যায়। এক্ষেত্রে তেতুলের শরবত খাওয়ার মাধ্যমে অনেকটাই দূর করা যায়।
  • র*ক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখে- শরীর ভালো রাখার জন্য র*ক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ রাখা জরুরী যা সাহায্য করে তেঁতুল। তেঁতুল র*ক্তে কোলেস্টেরল কমায়। দেহে উচ্চ র*ক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে।
  • এছাড়াও বেশ কার্যকারিতা রয়েছে গর্ভাবস্থায় বমি ভাব দূর করে, শিশুদের পেটের কৃমি কমায়, ভিটামিন সি-এর বড়ো উৎস, তেঁতুল জন্ডিস রোগে উপকারী, মুখের ঘা ও ত্বকের প্রদাহ সারাতে সাহায্য করে। বিশেষজ্ঞরা বলেন, যদি কেউ প্রতি দিন নিয়মিত এক ঘণ্টা দ্রুত হাঁটে ও কমপক্ষে ২৫ গ্রাম করে তেঁতুল খায়, তা হলে হার্ট ব্লক হতে পারে না।

তাই বলা যায় স্বাস্থ্য সুরক্ষায় তেঁতুল খাওয়া উচিত। অন্যান্য ফল খাওয়ার পাশাপাশি এই ফলটিও খাওয়া যায়।

তেঁতুল খেলে কি ক্ষতি হয়

তেতুল একটি স্বাস্থ্যকর ফল এই ফলে বেশ গুনাগুন রয়েছে যা শরীরের জন্য খুবই উপকারী। তেতুল খাওয়া ভালো তবে বেশি খাওয়া ভালো নয়। অতিরিক্ত তেঁতুল খাওয়ার মাধ্যমে র*ক্তচাপ কমে যেতে পারে।

এলার্জি হতে পারে- যাদের পূর্বে থেকেই এলার্জিজনিত সমস্যা রয়েছে। তাদের এলার্জি আরো বেড়ে যেতে পারে। এছাড়াও অতিরিক্ত তেঁতুল খেলে এলার্জি হতে পারে। কারণে কিছু কিছু মানুষের মধ্যে র‍্যাশ, চুলকানি, ইনফ্লামেশন, অজ্ঞান হয়ে যাওয়া, বমি হওয়া বা শ্বাসকষ্ট হওয়ার মতো লক্ষণ দেখা যায়।

তেঁতুল খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা

তেতুল একটি স্বাস্থ্যকর ফল যা আমরা উপর থেকে জানতে পেরেছি। আমরা তেতুলের পুষ্টিগুণ ও উপকারিতা সম্পর্কে অনেক কিছুই জানতে পেরেছি। তবে কাদের জন্য তেঁতুল খাওয়া থেকে বিরত থাকা উচিত তা জেনে রাখা প্রয়োজন। আবার অনেকে জানতে চায় এর অপকারিতা কি? তাই আমরা তেতুলের উপকারিতা সম্পর্কে তুলে ধরেছি।

বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ প্রতিদিন দশ গ্রামের বেশি তেঁতুল না খাওয়া। মাত্রাতিরিক্ত তেঁতুল খেলে র*ক্তের সিরাম গ্লুকোজের মাত্রা কমে গিয়ে হাইপোগ্লাইসেমিয়া হ’তে পারে।

তেতুলের উপকারিতা ও অপকারিতা

দাঁতের এনামেল নষ্ট হতে পারে- তেঁতুলে প্রচুর পরিমাণ এসিড রয়েছে। এর ফলে দাঁতের এনামেল নষ্ট হতে পারে। এছাড়া মাত্রাতিরিক্ত তেঁতুল খেলে শরীরের ক্ষতি পারে।

তেঁতুল খাওয়ার অপকারিতা

আমরা তেতুল খাওয়ার ক্ষতিকর দিক ও অপকারিতা তুলে ধরেছি। আরো বেশ কিছু অপকারিতা রয়েছে যা এখানে আলোচনা করা হয়েছে।

  • তেঁতুল যেহেতু টক জাতীয় ফল সে ক্ষেত্রে খালি পেটে না খাওয়া ভালো। এছাড়াও অতিরিক্ত তেতুল না খাওয়া ভালো। অতিরিক্ত তেঁতুল খাওয়ার মাধ্যমে পেটের সমস্যা দেখা দিতে পারে।
  • গবেষকরা প্রমাণ দিয়েছেন যে, বেশি পরিমাণে তেঁতুল খেলে পিত্তথলিতে পাথর হতে পারে। ফলে জন্ডিস, তীব্র জ্বর, পেট ব্যথা, বমি বমি ভাব, লিভার ও পরিপাকতন্ত্রের সমস্যা হ’তে পারে।
  • তাই তেতুল খাওয়ার উপকারিতার পাশাপাশি এর অপকারিতা দিকগুলো খেয়াল রাখা উচিত। উপরোক্ত বিষয়গুলো খেয়াল রেখে তেঁতুল খাওয়া উচিত। তবে অতিরিক্ত তেঁতুল খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে।

শেষ কথা

আমরা চেষ্টা করেছি আজকের এই পোস্টে তেতুল খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে তুলে ধরার। আশা করা যায় এই পোস্ট থেকে আপনি খুব সহজে জানতে পেরেছেন। যদি এই পোস্ট আপনাদের কাছে ভালো লেগে থাকে। তাহলে আমাদের ওয়েবসাইট ভিজিট করে দেখতে পারেন। আমাদের ওয়েবসাইটের স্বাস্থ্য বিষয়ে বিভিন্ন ধরনের আর্টিকেল রয়েছে। এগুলো পড়ার মাধ্যমেও আপনাদের উপকারে আসতে পারে।

আরও দেখুনঃ

Leave a Comment