তালের উপকারিতা ও অপকারিতা

তাল দেখতে অনেকটা গোলাকার, এই ফলটি কাঁচা অবস্থায় খাওয়া যায় এবং পেকে গেলেও খাওয়া যায়। কাঁচা অবস্থায় এই ফল খেতে অনেকেই পছন্দ করে। বিশেষ করে এই ফলটি কাঁচা অবস্থায় বাচ্চাদের অনেক প্রিয়। রাস্তাঘাটে এই ফলটি বিভিন্ন বিক্রেতার কাছে দেখা যায়। অন্যান্য ফলের তুলনায় কাঁচা অবস্থায় খেতে অনেক সুস্বাদু। এছাড়াও অন্যান্য ফলের তুলনায় এর ফলের দাম অনেক কম। পাকা তাল ও বীজ দুটোই আমরা খেতে পছন্দ করি। পেকে যাওয়ার আগে অর্থাৎ কাঁচা অবস্থায় এই ফলের বীজ বা তালশাঁস খাওয়া যায়। এর পাশাপাশি পাকা তালের অনেক চাহিদা রয়েছে কেননা এই ফল দিয়ে নানা ধরনের পিঠা তৈরি করা যায়। তাল গাছের কাণ্ড থেকেও রস সংগ্রহ হয় এবং তা থেকে গুড়, পাটালি, মিছরি, তাড়ি ইত্যাদি তৈরি হয়। সুস্বাদু এই ফলটি খেতে যেমন মিষ্টি এবং এর চাহিদা রয়েছে অনেক। তেমনি এই ফলের অনেক পুষ্টিগুণ রয়েছে যা আমাদের শরীরের জন্য অনেক উপকারী।

তাল খাওয়ার উপকারিতা কি

ফলটি সাধারণত ভাদ্র মাসে পাওয়া যায়। আমাদের এই দেশে পরিচিত একটি ফল। এই ফলটি নানা ধরনের পিঠা তৈরি জন্য ব্যবহার করা হয়। এই ফলটির বেশ উপকারিতা রয়েছে যা আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য খুবই উপকারী। তাল কাঁচা অবস্থায় এর শাঁস খাওয়া হয় এবং পাকা অবস্থায় এর রস খাওয়া হয়। উভয়ে অনেক উপকারিতা রয়েছে। তালের এই স্বাস্থ্য উপকারিতা পাওয়ার জন্য অবশ্যই খাদ্য তালিকা এই ফলটি রাখা উচিত। তাহলে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন ও ক্যালসিয়াম রয়েছে। যেমন ভিটামিন এ , সি, জিংক, পটাশিয়াম, আয়রন, ক্যালসিয়ামসহ আরও অনেক খনিজ উপাদান। এছাড়াও অ্যান্টি-অক্সিজেন ও অ্যান্টি-ইনফ্লামেটরি উপাদান রয়েছে।

তাল যেমন একটি সুস্বাদু ফল এর ঔষধি গুনাগুন রয়েছে বিভিন্ন অসুখ দূর করার ক্ষেত্রেও এর ভূমিকা রয়েছে। তাল রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে তোলার পাশাপাশি শ্বেতপদর ভালো করে, ধাতের জন্য অনেক ভালো, হাড়ের সুরক্ষায়, দৃষ্টি শক্তি বাড়াতে, র*ক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে, ক্যান্সার প্রতিরোধ করে, স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি করে, পুরনো কাশি দূর করে, বমি বমি ভাব দূর করতে সাহায্য করে, বুক ধরফর কমে যায়, কোষ্ঠকাঠিন্য ও অন্ধের রোগ ভালো করতে সাহায্য করে, আরো বেশ কিছু গুনাগুন রয়েছে ।

কাঁচা তাল খাওয়ার উপকারিতা

আমাদের পরিচিত ফল তাল। এই ফল পাকা অবস্থায় খাওয়া যায় এবং কাঁচা অবস্থায় এর শ্বাস খাওয়া যায়। রাস্তাঘাটে অনেক বিক্রেতা কাঁচা তাল বিক্রি করে। অন্যান্য ফলের তুলনায় এই ফলটির দাম কম হওয়ায় সকলের চাহিদার মধ্যে থাকে।

  • এই ফল দেখতে গোলাকার কাঁচা তালের শাঁস অনেকটাই গোল। তবে তাল খাওয়ার বেশ উপকারিতা রয়েছে কাঁচা তালের শাঁসের পুষ্টিগুণ সম্পর্কে আমাদের জেনে রাখা উচিত। আমরা যে ফল বা যে খাবার খাচ্ছি সে ফল বা খাবারের উপকারিতা সম্পর্কে জেনে রাখা উচিত। তাহলে চলুন জেনে নেওয়া যাক।
  • প্রতি ১০০ গ্রাম তালের শাঁসে রয়েছে ৮৭ কিলোক্যালরি, ৮ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম, জলীয় অংশ ৮৭.৬ গ্রাম, আমিষ .৮ গ্রাম, ফ্যাট .১ গ্রাম, কার্বোহাইড্রেটস ১০.৯ গ্রাম, খাদ্যআঁশ ১ গ্রাম, ক্যালসিয়াম ২৭ মিলিগ্রাম, ফসফরাস ৩০ মিলিগ্রাম, লৌহ ১ মিলিগ্রাম, থায়ামিন .০৪ গ্রাম, রিবোফাভিন .০২ মিলিগ্রাম, নিয়াসিন .৩ মিলিগ্রাম, ভিটামিন সি ৫ মিলিগ্রাম। কাঁচা তাল খাওয়ার উপকারিতা যা নিচে আলোচনা করা হয়েছে।

তাল শাঁস খাওয়ার উপকারিতা

গ্রীষ্মকালীন এই ফলটি অনেকের চাহিদার মধ্যে থাকে, তালের শ্বাস খেতে অনেকেই পছন্দ করে। তালের শাঁস খেতে শুধু সুস্বাদু নয় এর অনেক উপকারিতা রয়েছে যা আমরা এখানে আলোচনা করেছি

  • যেহেতু এটি গ্রীষ্মকালীন ফল। রোদে তীব্রতা বেড়ে যায় এ সময় তালের শাঁস খাওয়ার মাধ্যমে অনেকটাই পানি শূন্যতা দূর করা যায়।
  • খাবারে রুচি বাড়াতে সাহায্য করে। যারা তালের শ্বাস খেতে পছন্দ করে তারা মুখের রুচি অনেকটাই বাড়িয়ে তুলতে পারবে। খাবারের রুচি বাড়াতে অনেকটাই কার্যকারী তালের শাঁস।
  • শরীর সুস্থ ও সবল রাখার জন্য রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে তোলা উচিত যা সাহায্য করে তাল। তালে শাঁসে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টি অক্সিডেন্ট, যা শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে দিতে সাহায্য করে।
  • লিভার সুরক্ষায় তালের শাঁস এর ভূমিকা রয়েছে। তালের শাঁস লিভারের সমস্যা দূর করতে সাহায্য করে।
  • তাহলে রয়েছে ভিটামিন এ, যা রাত কানা রোগ সারাতে সাহায্য করে। এছাড়াও দৃষ্টিশক্তিকে প্রখর করতে সাহায্য করে।
  • র*ক্ত শূন্যতা দূর করে তাল, যারা তালের শ্বাস খেতে পছন্দ করে তারা র*ক্তশূন্যতা দূর করতে পারবে অনেকটাই।
  • বয়সের সাথে সাথে হাড়ের গঠন দুর্বল হতে থাকে। এক্ষেত্রে তাহলে শ্বাস খাওয়ার মাধ্যমে হাড়ের গঠন মজবুত করা যায়।
  • তালে শাঁসে ক্যালসিয়াম থাকায় এটি আমাদের দাঁতের জন্য অনেক ভালো । এটি আমাদের দাঁতের এনামেল ভালো রাখে এবং দাঁতের ক্ষয় রোধ করে। তাই তাল খাওয়া উচিত।

তাই বলা যায় অন্যান্য ফলের তুলনায় তালের উপকারিতা অনেকটাই বেশি। অন্যান্য মুখরোচক ফলের তুলনায় তালের চাহিদা অনেক কম তালের এই উপকারিতা পাওয়ার জন্য অন্যান্য খাবারের পাশাপাশি খাবার তালিকায় তাল রাখা উচিত।

পাকা তালের উপকারিতা ও অপকারিতা

পাকা তাল খেতে অনেকেই পছন্দ করে বিশেষ করে পাকা তালের রস দিয়ে পিঠা বানিয়ে খেতে অনেকেই পছন্দ করে। পাকা তাল নানান ভাবে খাওয়া যায়। যেমন তালের পিঠা, তালের কেক, তালের বড়া, তালের জুস, তালসত্ত্ব এর পাশাপাশি তালের রসের সঙ্গে নারকেল, দুধ, চিনি, কলা মিশিয়ে আরও নানা স্বাদের খাবার তৈরি হয়। তাই বাঙ্গালীদের পাকা তাল অনেকেরই পছন্দ। তবে পাকা তাল খাওয়ার বেশ কিছু উপকারিতা রয়েছে যা এখন আমরা আলোচনা করব।

  • পাকা তালের প্রতি ১০০ গ্রাম খাদ্যযোগ্য অংশে রয়েছে খাদ্যশক্তি ৮৭ কিলোক্যালরি, জলীয় অংশ ৭৭.৫ গ্রাম, আমিষ .৮ গ্রাম, চর্বি .১ গ্রাম, শর্করা ১০.৯ গ্রাম, খাদ্য আঁশ ১ গ্রাম, ক্যালসিয়াম ২৭ মিলিগ্রাম, ফসফরাস ৩০ মিলিগ্রাম, আয়রন ১ মিলিগ্রাম, থায়ামিন .০৪ মিলিগ্রাম, রিবোফ্লাভিন .০২ মিলিগ্রাম, নিয়াসিন .৩ মিলিগ্রাম ও ভিটামিন সি ৫ মিলিগ্রাম।

পাকা তাল খাওয়ার বেশ কিছু উপকারিতা নিচে উল্লেখ করা হয়েছে।

  • পুরনো কাশি দূর করে– দীর্ঘদিন ধরে কাশি দূর করার জন্য তালের ভূমিকা রয়েছে। যারা চার চামচ তালের রস দুধের সাথে মিশিয়ে খেতে পারবে তারা এর সমস্যা দূর করতে পারবে। সকাল বিকাল কয়েকদিন খেলে পুরোনো কাশি ভাল হয়ে যায়।
  • বুক ধরফর কমে যায়– অনেকের বুক ধরফর এর সমস্যা রয়েছে। তিন বা চার চামচ তালের রস দুধের সাথে মিশিয়ে সকাল বিকাল কয়েকদিন খেলে বুক ধরফরানী কমে যায় ।
  • দাঁত ও হাড় সুস্থ রাখতে– তালে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন সি ও ক্যালসিয়াম রয়েছে। তালের রসে থাকা ভিটামিন সি ক্যালসিয়াম ও ফসফরাস আমাদের দাঁত ও হাড়কে সুস্থ সবল রাখতে সাহায্য করে।
  • ক্যান্সার প্রতিরোধ– ক্যান্সার প্রতিরোধে তালের ভূমিকা রয়েছে। তাল অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট গুণসমৃদ্ধ হওয়ায় ক্যান্সার প্রতিরোধে সক্ষম।
  • শ্বেতপদর– শ্বেতপদর এই সমস্যা অনেকের রয়েছে। এই সমস্যা দূর করার জন্য আধা কাপ তালের টাটকা রস সকাল বিকাল দুই বার করে কয়েকদিন খেলে ভাল হয়।

পাকা তাল খাওয়ার উপকারিতা

  • বমি বমি ভাব– বমি বমি ভাব বিভিন্ন কারণে হয়। এই ধরনের সমস্যা দূর করার ক্ষেত্রে তালের ভূমিকা রয়েছে। চার চামচ তালের রস দুধের সাথে মিশিয়ে সকাল বিকাল কয়েকদিন খেলে বমি বমি ভাব চলে যায়।
  • স্মৃতিশক্তি বাড়াতে– যাদের স্মৃতি শক্তি দুর্বল তাদের স্মৃতিশক্তি বাড়াতে অনেকটাই কার্যকারিতা রয়েছে। তালের শাঁস এবং তালের রস আমাদের স্মৃতি শক্তিতে ভালো রাখতে সাহায্য করে।

এছাড়াও তাল খাওয়ার মাধ্যমে মাথা ব্যথা, সর্দি অনিদ্রা রোগ দূর করা যায়। এবং ভিটামিন বি এর অভাব পূরণ করা যায়। তাই বলা যায় পাকা তালের স্বাস্থ্য উপকারিতা পাওয়ার জন্য খাবা তালিকায় তাল রাখা উচিত।

তাল খেলে কি ওজন বাড়ে

অনেকের ধারনা তাল খেলে ওজন বেড়ে যায়, তাদের এই চিন্তা ভাবনা ভুল। তাল ওজন কমাতে সাহায্য করে। তাই যারা তাল খেতে পছন্দ করে তারা খেতে পারবে। তালে ক্যালরির মাত্রা কম এর ফলে ওজন বৃদ্ধিতে বাধা দেয়। এছাড়াও তালের শাঁস শাঁস ওজন কমাতে ভূমিকা রাখে। ক্যালরির পরিমাণ কম থাকায় ওজন কমাতে সাহায্য করে। তাই তাল খেলে ওজন বেড়ে যাওয়ার ভয় থাকে না।

তালের উপকারিতা ও অপকারিতা

স্বাস্থ্য রক্ষার্থে অন্যান্য ফলের মতন তালের ভূমিকা রয়েছে। আমাদের শরীরের ভিটামিন এর অভাব পূরণ করতে এর কার্যকারিতা রয়েছে। এর পাশাপাশি ক্যালসিয়াম ঐর অভাব পূরণ করে। তালের স্বাস্থ্য উপকারিতা সম্পর্কে আমরা উপর থেকে জানতে পেরেছি। তাল খাওয়ার অপকারিতা সম্পর্কে জেনে রাখা প্রয়োজন কাদের ক্ষেত্রে তার খাওয়া সতর্ক হওয়া উচিত তাহলে চলুন জেনে নেওয়া যাক।

তালের স্বাস্থ্য উপকারিতায় বেশি। তাল খাওয়া আমাদের জন্য অনেক উপকারী। যেহেতু তালে ক্যালরির মাত্রা কম এর ফলে ওজন বৃদ্ধিতে বাধা দেয়। যারা শরীরের ওজন বৃদ্ধি করতে চায় তাদের ক্ষেত্রে অতিরিক্ত তাল খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে।

শেষ কথা

আমরা এই পোস্টে তুলে ধরার চেষ্টা করেছি তাহলে উপকারিতা ও অপকারিতা। আপনাদের কাছে যদি এই পোস্ট ভালো লেগে থাকে তাহলে আপনাদের বন্ধুদের মাঝে শেয়ার করতে পারেন। আপনার শেয়ারের মাধ্যমে তারাও জানতে পারবে এ বিষয়ে।

আরও দেখুনঃ

Leave a Comment