বাংলাদেশ আজ শাবান মাসের চাঁদ দেখা যায়নি অর্থাৎ ২০২৪ সালের শবে বরাত অনুষ্ঠিত হবে ২৫ ফেব্রুয়ারী দিবাগত রাতে। অন্যদিকে শবে বরাত উপলক্ষে বাংলাদেশের সকল সরকারি প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকবে ২৬ ফেব্রুয়ারী। শবে বরাত উপলক্ষে বাংলাদেশের মুসলিমদের মাঝে বিভিন্ন ধরনের ইবাদত বন্দেগীর আয়োজন করা থাকে। কিন্তু এই শবে বরাতের ফজিলত ও গুরুত্ব অনেকেই জানেনা। আজকের পোষ্টে শবে বরাতের ফজিলত ও গুরুত্ব নিয়ে ইসলামিক হাদিসের আলোকে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। আপনি যদি শবে বরাতের ফজিলত ও গুরুত্ব সম্পর্কে জানতে চান। তাহলে নিচে থেকে বিস্তারিতভাবে শবে বরাতের ফজিলত ও গুরুত্ব জেনে নিন।
Contents
শবে বরাতের ফজিলত ও গুরুত্ব
যেই রাতটি আমাদের কাছে শবে বরাত বলে পরিচিত, হাদীস শরীফে এটিকে বলা হয়েছে লাইলাতুন নিসফ মিন শাবান বা মধ্য শাবানের রজনী। শবে বরাত ফার্সী শব্দ, এর অর্থ ভাগ্য রজনী। আর আরবিতে এই রাত্রকে বুঝাতে লাইলাতুল বারাআত বা মুক্তির রজনী কথাটি ব্যবহৃত হয়। মধ্য শাবানের এই রাত্রিতে কি ভাগ্য লিখা হয়? কুরআনে ভাগ্য লিখার কথা বলা হয়েছে সেটা আসলে কোন রাত? এই রাতের ফজিলতের ব্যাপারে হাদীসের দলিল আছে কী কী? আমরা এই রাতে যা করি আর এই রাত সম্পর্কে যেই ধারণা ও বিশ্বাস পোষণ করি তা কতটা সুন্নাহ সম্মত? এই রাতের আমল কী? পরদিনের রোজা সম্পর্কে হাদীস কী বলে? এ রাতে প্রচলিত শিরক ও বিদআতের কাজগুলো কী কী? এই সকল বিষয় নিয়ে আলোকপাত করার চেষ্টা করা হবে এই পোস্টে।
শবে বরাতের ফজিলত
শবে বরাতের রাত নিয়ে এখন প্রতি বছর চরম বিতর্কের সৃষ্টি হয়। একদল বলে এই রাতের সব কিছুই বাতিল। আরেক দল বলে এই রাতই সর্বশ্রেষ্ঠ রাত। কেউ বলছেন শবে বরাতের রাতে কোনো আমলই করা যাবে না। কেউ আবার বলছেন সারা রাত জেগে নামাজ পড়তে হবে। কুরআন সুন্নাহর আলোকে আলেমগণের বিভিন্ন লেখনী ও আলোচনা অধ্যয়ন করে এই রাতের সুন্নাহ সমর্থিত আমল ও ফজিলত এবং আমাদের সমাজে যেসব শিরক-বিদআত এই রাতকে কেন্দ্র করে প্রচলিত আছে; সেগুলো বিস্তারিত তুলে ধরার চেষ্টা করা হবে ইনশাআল্লাহ।
- শবে বরাতের নামাজের নিয়ম ও দোয়া | জানুন রোজা কয়টি ও নামাজ কয় রাকাত
- শবে বরাতের নামাজ কবে – দেখে নিন শবে বরাতের নামাজ কত তারিখ
শবে বরাতের গুরুত্ব
শবে বরাতের উপর বেশির ভাগ লেখার সাথে এই লেখার একটা পার্থক্য রয়েছে। তা হচ্ছে এখানে আমি চেষ্টা করব দুই গ্রুপের কথাই তুলে ধরার। অর্থাৎ পক্ষে বিপক্ষের উভয়ের বক্তব্য ও উভয়ের দলিল এখানে উল্লেখ করার চেষ্টা করব। আর এগুলোর ব্যাপারে আলেমদের মত অনুসারে উপসংহার টানব। সবশেষে থাকবে বরেন্য কিছু আলেমদের আলোচনা, আর্টিকেল ও বইয়ের রেফারেন্স। তাই লেখার দৈর্ঘ্য খানিকটা বড়ই হবে। ইনশাআল্লাহ সবকিছু অধ্যয়নের পর আপনার সামনে আলোর পথটি পরিষ্কার হয়ে যাবে।
আরও দেখুনঃ
শবে বরাত কী? হাদীসের আলোকে শবে বরাত কি?
শবে বরাত শব্দ দুটি ফার্সি ভাষা থেকে এসেছে। ফার্সিতে শব অর্থ রাত আর বরাত অর্থ হচ্ছে ভাগ্য। একত্রে অর্থ দাঁড়ায় ভাগ্য রজনী বা ভাগ্য নির্ধারিত হয় যে রজনীতে। ইসলামের আবির্ভাবের প্রায় ৫০০ বছর পরে এই “শবে বরাত” পরিভাষাটা প্রথম ব্যবহৃত হয়। রাসূলের (সা) যুগে, সাহাবীদের যুগে, তাবেয়ীদের যুগে, তাবে-তাবেয়ীদের যুগেও এই পরিভাষাটি প্রচলিত ছিল না। আমরা এই রাতকে যেভাবে উদযাপন করি ইসলামের আবির্ভাবের প্রথম ৫০০ বছরে এভাবে এই রাতকে উদযাপন করা হত না।
শবে বরাত ২০২৪
শবে বরাতের সুন্নাহ ভিত্তিক পরিভাষা হচ্ছে “লাইলাতুন নিসফ মিন শাবান” বা মধ্য শাবানের রাত্রি। আল্লাহর রাসূল (সা) ও সাহাবিরা এই রাতকে উক্ত নামেই অবহিত করতেন। ইসলামের কোনো পরিভাষাকে অন্য ভাষায় নিজস্ব শব্দ দিয়ে বলাতে আলেমগণ আপত্তি করেন না। যেমন আমরা সালাতকে নামাজ বলি।
নামাজ কথাটা বললে আমরা ঐসব কাজের সমষ্টিকেই বুঝি যেগুলো হাদীসে সালাত শব্দ দ্বারা বুঝানো হয়েছে। আমাদের দেশে সালাতকে নামাজ বলা প্রচলিত। কিন্তু আমরা যদি সালাত কথাটা বলি তাহলে নবীজির (সা) মুখের একটা শব্দকে আমরা উচ্চারণ করলাম। এটা আরো ভাল। যদি সালাতকে নামাজ বা সাওমকে রোজা বলি তাতেও অসুবিধা নাই।
এটা নাজায়েজ না। কিন্তু পরিভাষাগুলো ব্যবহারগত যেই সুন্নাহ সেটা আদায় হল না। ব্যক্তিগত ভাবে তাই আমি চেষ্টা করি সালাত, সাওম এই শব্দগুলো ব্যবহার করতে। কিন্তু অনেক সময়ই অভ্যাসগত কারণে নামাজ-রোজা বলে ফেলি। এটা আসলে দোষণীয় কোনো ব্যাপার না। তাহলে লাইলাতুন নিসফ মিন শাবান বা মধ্য শাবানের রাতকে শবে বরাত বলায় আমাদের আপত্তি কেন? এটাও তো নামাজ-রোজার মত ফার্সি শব্দই!
শবে বরাত কথাটা বললে আমরা যদিও শাবানের ১৫ তারিখ কেই বুঝাই কিন্তু এই “শবে বরাত” কথাটার মধ্যে একটা বাড়তি উত্তেজনা আছে। একটা বাড়তি গুরুত্ব বহন করে আমাদের সমাজে। কারণ শবে বরাত কথার অর্থ হচ্ছে ভাগ্য নির্ধারণের রাত। কিন্তু হাদীসের আলোকে আমরা জানতে পারি নবী (সা) ও সাহাবিরা (রা) এই রাতকে ভাগ্য নির্ধারণের রাত হিসাবে গণ্য করতেন না।
লাইলাতুন নিসফ মিন শাবানের আরবি আরেকটি পরিভাষা আছে। তা হচ্ছে “লাইলাতুল বারাআত”। লাইলাতুল বারাআত কথাটাও হাদীসে আসে নাই। কিন্তু মধ্য শাবানের রাতের মূল থিমের সাথে আরবি “লাইলাতুল বারাআত” কথাটার মিল রয়েছে। আরবিতে “লাইলাতুল বারাআত” আর ফার্সিতে “শবে বরাত” কথাটা কিন্তু উচ্চারণগত দিক থেকে কাছাকাছি। কিন্তু অর্থের দিক থেকে রয়েছে আকাশ পাতাল পার্থক্য।
শবে বরাত নিয়ে হাদিস ২০২৪
আরবির লাইলাতুল বারাআত শব্দের অর্থ হচ্ছে মুক্তির রজনী। অর্থাৎ যে রাত্রে মানুষকে মুক্তি দেয়া হয়, মাফ করে দেয়া হয়। হাদীস থেকে আমরা জানতে পারি মধ্য শাবানের রাত্রে আল্লাহ তায়ালা সকল মানুষকে মাফ করে দেন, শুধু দুই শ্রেণীর মানুষকে ক্ষমা করেন না। যারা মনে হিংসা বিদ্বেষ পোষণ করে আর যারা আল্লাহর সাথে শিরক করে। তাহলে বুঝা যাচ্ছে আরবিতে লাইলাতুল বারাআত কথাটা হাদীসের ভাষ্য অনুযায়ী লাইলাতুন নিসফ মিন শাবানের থিমের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ। অর্থাৎ এ রাতে আল্লাহ সবাইকে ক্ষমা করে দেন, তাই আরবিতে একে লাইলাতুল বারাআত বা ক্ষমার রজনী বলা হয়।
কিন্তু ফার্সিতে শবে বরাত বললে কথাটার অর্থ হয় ভাগ্য নির্ধারনের রজনী! ক্ষমা করে দেয়া আর পরবর্তী বছরের ভাগ্য লিখার কনসেপ্ট দুইটা তো ভিন্ন জিনিস! তাহলে ক্ষমার রাতকে আমরা কেন বলি ভাগ্য নির্ধারনের রাত? অনেক মানুষ এই দিনে ভাল খাবার খায়। তাদের বিশ্বাস হচ্ছে এতে পরবর্তী বছর ভাল খাওয়া জুটবে। স্বীকার করি বা না করি, আমরা সবাই সম্পদের জন্য লোভী। আমাদের লোভাতুর মন তাই শবে বরাতকে আমাদের কাছে বিশেষ গুরুত্ববহ করে তুলেছে। কুরআন হাদীস ও সহীহ মতে ভাগ্য নির্ধারণের কথা থাকুক বা না থাকুক! পাগলের সুখ যেমন মনে মনে, আমাদের মনের অবস্থাও সেরকম। এ রাতকে ভাগ্য নির্ধারনের রাত বানিয়ে বসে আছি!
শবে বরাতের হাদীস স্বীকৃত ফজিলত ও আমল
এ রাতের বিশেষ মর্যাদা ও ফজিলতের ব্যাপারে সবচেয়ে প্রসিদ্ধ হাদীসটি হচ্ছে সাধারণ ক্ষমা বিষয়ক। এই রাতে আল্লাহ দুই শ্রেণীর মানুষ ব্যাতীত সবাইকে ক্ষমা করে দিবেন। দুই শ্রেণী হচ্ছে ১। যারা আল্লাহর সাথে শির্ক করে ২। যাদের অন্তরে হিংসা-বিদ্বেষ আছে।
আবূ মূসা আল-আশআরী (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, আল্লাহ মধ্য শাবানের রাতে আত্নপ্রকাশ করেন এবং মুশরিক ও হিংসুক ব্যতীত তাঁর সৃষ্টির সকলকে ক্ষমা করেন। (ইবনে মাজাহ ১৩৯০, হাদীসের মানঃ হাসান সহীহ)
অর্থাৎ ক্ষমা করে দেয়ার এই বেনিফিটটা সবাই পেয়ে যাবে। ঐ দুই শ্রেণীর লোক ছাড়া। এটা একটা সাধারণ ক্ষমা। সকলের জন্য সমান ভাবে প্রযোজ্য। শর্ত দুইটা, অন্তরে শিরক থাকা যাবে না এবং হিংসা বিদ্বেষ থাকা যাবে না। এই শর্ত দুইটা মানলে ঘুমিয়ে থাকলেও এই বোনাস পয়েন্ট আমাদের আমলনামায় যোগ হয়ে যাবে ইনশাআল্লাহ। শবে বরাত সংশ্লিষ্ট এই একটা হাদীস আমার সামনে এসেছে যার মান হাসন সহীহ মানের। আরো অন্য হাদীস থাকতে পারে। এ বিষয়ে বিশেষজ্ঞগণ ভাল বলতে পারবেন হাসান বা সহীহ মানের অন্য কোনো হাদীস রয়েছে কিনা।
কবর জিয়ারত করা ও গুনাহ মাফ করা বিষয়ের একটি হাদীস উল্লেখ করা যেতে পারে।
আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন,
এক রাতে আমি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে (বিছানায়) না পেয়ে তাঁর খোঁজে বের হলাম। আমি লক্ষ্য করলাম, তিনি জান্নাতুল বাকিতে, তাঁর মাথা আকাশের দিকে তুলে আছেন। তিনি বলেন, হে আয়িশা! তুমি কি আশঙ্কা করেছো যে, আল্লাহ ও তাঁর রাসূল তোমার প্রতি অবিচার করবেন? আয়িশা (রাঃ) বলেন, তা নয়, বরং আমি ভাবলাম যে, আপনি হয়তো আপনার কোন স্ত্রীর কাছে গেছেন।
তিনি বলেন, মহান আল্লাহ মধ্য শাবানের রাতে দুনিয়ার নিকটবর্তী আকাশে অবতরণ করেন এবং কালব গোত্রের মেষপালের পশমের চাইতেও অধিক সংখ্যক লোকের গুনাহ মাফ করেন (ইবনে মাজাহ ১৩৮৯, হাদীসের মানঃ যঈফ বা দুর্বল হাদীস)
শবে বরাতের আমল
এই হাদীসের দলীল দিয়ে আমাদের দেশে কবরস্থানগুলোতে শবে বরাতের রাতে মানুষের ঢল মানে। প্রতি দলে দলে মানুষ কবরস্থানে গমন করেন এই হাদীসের উপর আমল করার জন্য। শবে বরাতের উপর যতগুলো হাদীস রয়েছে তারমধ্যে এটিই একমাত্র হাদীস যা আয়িশা (রা) থেকে বর্ণিত আছে। রাসূলের (সা) সারা জীবনে এই রাতে কবর জিয়ারতের একটাই মাত্র ঘটনা হাদীসের কিতাবে পাওয়া যায়। তাও সেই হাদীসটা যঈফ বা দুর্বল। আর আমরা এটাকে অনেকে আমাদের সারা জীবনের আমল বানিয়ে ফেলেছি।
দীর্ঘ রুকু-সিজদা বিশিষ্ট নামাজ পড়ার ব্যাপারে নিচের হাদীসটি উল্লেখ করা হলো।
হযরত আলা ইবনুল হারিস (রহঃ) থেকে বর্ণিত, হযরত আয়েশা (রা.) বলেন, একবার রাসূলুল্লাহ (স) রাতে নামাযে দাঁড়ান এবং এত দীর্ঘ সেজদা করেন যে, আমার ধারণা হল তিনি হয়ত মৃত্যুবরণ করেছেন। আমি তখন উঠে তার বৃদ্ধাঙ্গুলি নাড়া দিলাম। তার বৃদ্ধাঙ্গুলি নড়ল। যখন তিনি সেজদা থেকে উঠলেন এবং নামায শেষ করলেন তখন আমাকে লক্ষ্য করে বললেন, হে আয়েশা অথবা বলেছেন, ও হুমাইরা, তোমার কি এই আশংকা হয়েছে যে, আল্লাহর রাসূল তোমার হক নষ্ট করবেন?
আমি উত্তরে বললাম, না, ইয়া রাসূলুল্লাহ। আপনার দীর্ঘ সেজদা থেকে আমার এই আশংকা হয়েছিল, আপনি মৃত্যুবরণ করেছেন কিনা। নবীজী জিজ্ঞেস করলেন, তুমি কি জান এটা কোন রাত? আমি বললাম, আল্লাহ ও তার রাসূলই ভাল জানেন। রাসূলুল্লাহ (স) তখন ইরশাদ করলেন,
هذه ليلة النصف من شعبان ان الله عزو جل يطلع على عباده فى ليلة النصف من شعبان فيغفر للمستغفرينويرحمالمشترحمين ويؤخر اهل الحقد كماهم
‘এটা হল অর্ধ শাবানের রাত (শাবানের চৌদ্দ তারিখের দিবাগত রাত)। আল্লাহ তাআলা অর্ধ-শাবানের রাতে তার বান্দার প্রতি মনযোগ দেন এবং ক্ষমাপ্রার্থনাকারীদের ক্ষমা করেন এবং অনুগ্রহ প্রার্থীদের অনুগ্রহ করেন আর বিদ্বেষ পোষণকারীদের ছেড়ে দেন তাদের অবস্থাতেই।‘ [শুআবুল ঈমান, বাইহাকী ৩/৩৮২-৩৬৮]
ইমাম বায়হাকী (রহঃ) উক্ত হাদীসটি বর্ণনার পরে একে মুরসাল হিসেবে উল্লেখ করেন। অর্থাৎ এই হাদীসের সনদে বর্ণনাকারীদের মধ্য থেকে সাহাবীর নাম বাদ পড়েছে। অপর একটি হাদীস পাওয়া যায় এই রাতে নামাজ পড়া আর পরদিন রোজা রাখার ব্যাপারে। আলী বিন আবূ তালিব (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, যখন মধ্য শাবানের রাত আসে তখন তোমরা এ রাতে দাঁড়িয়ে সালাত পড় এবং এর দিনে সওম রাখ। কেননা এ দিন সূর্য অস্তমিত হওয়ার পর আল্লাহ পৃথিবীর নিকটতম আকাশে নেমে আসেন এবং বলেন, কে আছো আমার নিকট ক্ষমাপ্রার্থী, আমি তাকে ক্ষমা করবো। কে আছো রিযিকপ্রার্থী আমি তাকে রিযিক দান করবো। কে আছো রোগমুক্তি প্রার্থনাকারী, আমি তাকে নিরাময় দান করবো। কে আছ এই প্রার্থনাকারী। ফজরের সময় হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত (তিনি এভাবে আহবান করেন)।
(ইবনে মাজাহ ১৩৮৮, হাদীসের মানঃ আল্লামা নাসিরুদ্দীন আলবানীর তাহক্বীক অনুযায়ী এটি যঈফ জিদ্দান বা মওযূ অর্থাৎ জাল হাদীস)
উপরের কয়েকটি হাদীস দ্বারা আমরা পাই নফল নামাজ পড়ার কথা, কবর জিয়ারতের কথা আর পরদিন রোজা রাখার কথা। যদিও এই বিষয়ে প্রথম হাদীসটি ব্যতীত বাকি সবগুলো হাদীসের মানই আসলে দুর্বল। এরমধ্যে একটি রয়েছে জাল হাদীসের পর্যায়ের। তাই অনেকেই এই রাতকে খুব বেশি মর্যাদা বা এই রাতকে বিশেষ ইবাদতের রাত হিসাবে আমল করতে অনাগ্রহ দেখিয়ে থাকেন। এর পিছনে তাদের মত হচ্ছে, যদি এই রাত্রিটা এত গুরুত্বপূর্ণ হত বা এ রাত্রের বিশেষ ইবাদত থাকত তাহলে এত শত শত সাহাবীদের মধ্য থেকে সহীহ রেওয়ায়েতে কোনো হাদীসের বর্ণনা নাই কেন? সকল সাহাবীরা এই রাতের ইবাদত সম্পর্কে কেন জানলেন না? সব সাহাবিকেই কেন এই রাতে বিশেষ ইবাদত-বন্দেগীর ব্যাপারে উৎসাহ দেয়া হলো না?
আবার যারা এই রাতকে বিশেষ ভাবে ইবাদতের মাধ্যমে কাটাতে চান তারা বলেন যে, নেক আমলের ক্ষেত্রে দুর্বল হাদীসের উপর আমল করা জায়েজ আছে। যেহেতু এই হাদীসগুলো দুর্বল হলেও এগুলোর দ্বারা শরীয়তের কোনো বিধি-বিধান বা সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হচ্ছে না। তাই সাধারণ ভাবে এগুলোর উপর আমল করা যেতে পারে। এগুলো সুন্নাহ হিসাবেই ধর্তব্য হবে ইনশাআল্লাহ।
তবে এই নফল ইবাদত অবশ্যই হতে হবে নিজ বাসগৃহে। বিশেষ করে ঢাকার শহরে এই রাতের চিত্র সম্পূর্ণ পাল্টে যায়। মানুষজন সব মসজিদে জড়ো হয়। যুবক ছেলেপলেরা ভ্যানগাড়ি ভাড়া করে সেটায় করে ৮-১০ জন ঘুরে বেড়ায়। আড্ডা-গল্প, আতশবাজি পটকা ফুটানো এগুলো তো চলতেই থাকে। বিভিন্ন জায়গায় বিশেষ খাওয়া দাওয়ার আয়োজন করা হয় মসজিদের পক্ষ থেকে বা কোনো সংগঠনের পক্ষ থেকে। মাজারগুলোতে মানুষ কয়েক কিলোমিটার লাইন ধরে হলেও ঢুকে। মাজারের ভিতর চলে শিরকের মহোৎসব! মাজারের আসেপাশে বসে ভিক্ষুকদের মেলা। দূর-দূরান্ত থেকে বিভিন্ন মাজারকে টার্গেট করে চলে আসে ভিক্ষুক সিন্ডিকেট। রাস্তার মাঝে লাইন ধরে বসে কুপি বাতি জালিয়ে সেখানে চলে ভিক্ষুকদের কুরআন পড়ার অভিনয়! কবরস্থানগুলোতে চলে বিশেষ মোমবাতি প্রোজ্জ্বলন। আগর বাতি জ্বালানো। এসব থেকে আল্লাহর দোহাই লাগে বিরত থাকুন!
সারা বছরের জন্যেই ফরজ নামাজ ব্যতীত সকল সুন্নত ও নফল নামাজ বাসায় পড়া সুন্নাহ। যে কোনো ফরজ নামাজের ক্ষেত্রেও বাসা থেকে সুন্নত পড়ে গিয়ে ফরজ আদায় করে বাকি সুন্নত বা নফল বাড়িতে এসে আদায় করা সুন্নাহ। রাসূল (সা) বলেছেনঃ তোমাদের ঘরেও কিছু সালাত আদায় করবে এবং ঘরকে তোমরা কবর বানিয়ে নিও না (বুখারী ৪৩২)
তাই আমাদের মধ্যে কেউ যদি অধিক তাক্বওয়ার অংশ হিসাবে উক্ত যয়ীফ বা দুর্বল হাদীসের উপর আমল করতে চাই, তাহলে অবশ্যই এগুলো নিজ বাসস্থানে করব। জমায়েত হয়ে মসজিদে একত্রিত হয়ে করব না।
শবে বরাতকে ভাগ্য রজনী বলার দলিল ও মুফাসসিরগণ কর্তৃক এ মতকে বাতিল করে দেয়ার কারণ
আমাদের দেশের অনেক মানুষকে দেখা যায় শবে বরাতকে ভাগ্য রজনী বলার পেছনে শক্ত বিশ্বাসের উপর দাঁড়িয়ে আছেন। শবে বরাতকে যারা বর্তমানে ভাগ্য রজনী হিসাবে বিশ্বাস করে থাকেন, আমার ব্যক্তিগত কয়েকটি অবজারভেশন হচ্ছে সাধারণত এরা হয় মাজারপন্থী, না হয় কোনো ভন্ড পীরের মুরিদ। এছাড়াও এদের আক্বিদা বিশ্বাসের ক্ষেত্রে এমন অনেক আক্বিদা পোষণ করে যা আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাতের আক্বিদার পরিপন্থি। দেখা যাবে এরা শবে বরাত, শবে মেরাজ, মিলাদুন্নবী এই দিবসগুলো নিয়ে খুব তৎপর। মিলাদুন্নবীর দিন মিলাদ পড়া, নবীর (সা) সম্মানে দাঁড়িয়ে মিলাদ পড়া, তাদের মিলাদের আসরে নবী (সা) উপস্থিত থাকবেন তাই একটা চেয়ার খালি রাখা। পাঠকদেরকে সাবধান করছি এমন বিভ্রান্তিকর গোষ্ঠীর দ্বারা প্রভাবিত না হতে। এদের পোস্টগুলো হবে কুরআন হাদীসের রেফারেন্স বিহীন। রেফারেন্স দিলেও ব্যাখ্যা থাকবে তাদের মনগড়া। বেশির ভাগ কথা থাকবে তাদের কোনো পীর বা গুরুর বক্তব্য। তাদের লেখায় নবীজির (সা) সুন্নাহ, সাহাবাদের (রা) আমল, তাবেয়ী-তাবে তাবীয়ীন, সালফে সালেহীনের আমলের খোঁজ পাওয়া যাবে না। এসব সিম্পটম দেখলে সতর্ক হবেন।
চলুন এবার জেনে নিই শবে বরাতে ভাগ্য নির্ধারনের বিশ্বাসের পেছনের কারণটা কী? কোন দলীলের ভিত্তিতে তারা এই রাতকে ভাগ্য নির্ধারনের রাত বলে অভিহিত করে? আমি যতটা সম্ভব সংক্ষেপে বর্ণনা করার চেষ্টা করছি। যেহেতু দালিলিক তথ্য প্রমাণ উপস্থাপনের ব্যাপার রয়েছে তাই লেখার কলেবর বৃদ্ধি পাওয়ায় আশা করি আপনার ধৈর্যচ্যুতি ঘটবে না।
- সূরা আদ দুখানের ৩ ও ৪ নাম্বার আয়াত হচ্ছে তাদের দলীল।
- সূরা দুখান শবে বরাত নয় শবে ক্বদরের দলিল এটা
- সূরা দুখানের ১-৫ আয়াত
অনুবাদঃ
হা মীম। সুস্পষ্ট কিতাবের কসম! নিশ্চয়ই আমি এটি (অর্থাৎ কুরআনকে) নাযিল করেছি বরকতময় রাতে; নিশ্চয়ই আমি সতর্ককারী। সে রাতে প্রত্যেক প্রজ্ঞাপূর্ণ বিষয়ে সিদ্ধান্ত অনুমোদিত হয়, আমারই নির্দেশে; নিশ্চয় আমি রাসূল প্রেরণকারী।
এখানে আল্লাহ বলেছেন, তিনি কুরআনকে একটি বরকতময় রাত্রিতে নাযিল করেছেন। এই মুবারক রজনীর ব্যাখ্যায় বিভিন্ন সাহাবী ও তাবিয়ীগণ বলেছেন যে, এ রাতটি হলো ‘লাইলাতুল ক্বদর’ বা মহিমান্বিত রজনী। বিখ্যাত সাহাবী ইবনু আব্বাস (রা), ইবনু উমার (রা) থেকে এরকম ব্যাখ্যা এসেছে। তাবেয়ীগণের মধ্যে থেকে আবু আব্দুর রহমান আল-সুলামী, মুজাহিদ বিন জাবর, হাসান বসরী, ক্বাতাদা ইবনু দি’আমা ও আব্দুর রহমান বিন যায়েদ বিন আসলাম বিশেষ ভাবে উল্লেখযোগ্য। তারা সকলেই বলেছেন যে, লাইলাতুম মুবারাকাহ অর্থ লাইলাতুল ক্বদর।
এ সকল সাহাবী ও তাবেয়ীর মতের বিপরীতে একজন মাত্র তাবেয়ী মত প্রকাশ করেছেন যে, এ আয়াতে বরকতময় রাত্রি বলতে শবে বরাত তথা শাবানের ১৫ তারিখকে বুঝানো হয়েছে। তিনি হচ্ছেন সাহাবী ইবনু আব্বাস (রা) এর খাদেম তাবেয়ী ইকরিমাহ। তিনি বলেন, এখানে মুবারক রজনী বলতে মধ্য শাবানের রাতকে বুঝানো হয়েছে। এ রাতে গোটা বছরের সকল বিষয়ের ফয়সালা হয় বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
অধিকাংশ বর্ণনাকারী এ বক্তব্যটিকে ইকরিমাহ এর বক্তব্য হিসাবে বর্ণনা করেছেন। দ্বিতীয় হিজরি শতকের একজন বর্ণনাকারী একে ইবনু আব্বাসের বক্তব্য বলে উল্লেখ করেছেন। আন-নাদর বিন ইসলামঈল নামক এক ব্যক্তি বলেন, তাকে মুহাম্মদ বিন সুক্কা বলেছেন, তাকে ইকরিমাহ বলেছেন ইবনু আব্বাস থেকে, তিনি উপরে উল্লেখিত আয়াতের ব্যাখ্যায় বলেন “মুবারক রজনী হল মধ্য শাবানের রাত। এতে মৃত্যু বরণকারীদের নাম বর্ণনা করা হয়, হাজ্বীদের তালিকা তৈরি করা হয়, অতঃপর কোনো বাড়তি-কমতি করা হয় না।”
এ সনদের রাবী আন-নাদর ইবনু ইসমাঈল কুফার একজন গল্পকার ওয়ায়েজ ছিলেন। তিনি ব্যক্তিগত ভাবে সৎ হলেও হাদীস বর্ণনার ক্ষেত্রে তার ভুলের কারণে মুহাদ্দীসগণ তাকে দুর্বল বলে আখ্যা দিয়েছেন। ইবনু হিব্বান তার সম্পর্কে বলেছেন তার ভুল খুব মারাত্মক, যে কারণে তিনি পরিত্যক্ত বলে গণ্য হয়েছেন। এসব কারণে মুহাদ্দীসগণ বলেছেন ইকরিমাহ ব্যক্তিগত ভাবে মুবারক রজনী বলতে শবে বরাতকে বুঝতেন। কিন্তু এই মতকে সাহাবী ইবনু আব্বাসের (রা) মত হিসাবে যে বর্ণনা করা হয়েছে সেটা ভুল। ইবনু আব্বাস (রা) মুবারক রজনী বলতে লাইলাতুল ক্বদরকেই বুঝতেন।
প্রসিদ্ধ মুফাসসিরগণ ইকরিমাহ (রহ) এর এই মতকে গ্রহণ করেন নি। কেউ কেউ তাফসীরে ইকরিমাহ এর মতটিকেও উল্লেখ করেছেন কিন্তু কোনো মন্তব্য করেন নি। আর অধিকাংশ মুফাসসির ইকরিমাহ এর এ মতটি বাতিল বলে উল্লেখ করেছেন এবং অন্যান্য সাহাবী ও তাবেয়ীর মতটিই সঠিক বলে গ্রহণ করেছেন। তাঁরা বলেন যে, সঠিক মত হলো, এখানে মুবারক রজনী বলতে লাইলাতুল ক্বদরকে বুঝানো হয়েছে। এটিই যে সঠিক মত তার প্রমাণ হচ্ছে কুরআনের অপর কিছু আয়াত ও অসংখ্য সহীহ হাদীস।
এই ভারত উপমহাদেশের যারাই ভাগ্য রজনী বলে শবে বরাতকে বুঝে থাকেন তারা উপরে উল্লেখিত একজন মাত্র তাবেয়ী ইকরিমাহ (রহ) এর মতকে গ্রহন করেছেন। ঐ মতটা বিশুদ্ধ নয় এবং ঐ মতটিকে মুফাসসিরগণ বাতিল করে দিয়েছেন অপরাপর কুরআনের আয়াত ও হাদীসের দলিলের দ্বারা। এরপরেও ঠিক কিসের আশায় কী চিন্তা করে এই মতের উপর তারা অটল আছেন আর মানুষকে তাদের দিকে ডাকছেন আল্লাহই ভাল জানেন। তাদের ভাগ্য রজনীর গল্প শুনে এদেশের মানুষ ঝাপিয়ে পড়ছে কবরস্থানে, মাজারে শিরক বিদআতের মাধ্যমে তাদের ভাগ্যকে ফেরাতে! আল্লাহ মাফ করুন!
উপরে উল্লেখিত সূরা দুখানের ৩-৪ নং আয়াতে শুধু বলা হয়েছে একটি বরকতময় রাতে কুরআন নাযিল করা হয়েছে। আর ঐ রাতেই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো নির্ধারিত হয়। কিন্তু কোন মাসের কোন রাত্রিতে নাযিল করেছেন তা ঐ আয়াতে উল্লেখ হয় নি। কুরআনের একটি বৈশিষ্ট্য হচ্ছে কুরআনের একটা আয়াতের ব্যাখ্যা অন্য কোনো আয়াতে পাওয়া যায়।
- সূরা বাক্বারার ১৮৫ নাম্বার আয়াতে আল্লাহ স্পষ্ট করে বলেছেন কুরআন কোন মাসে অবতীর্ণ করা হয়েছে।
- সূরা বাক্বারা ১৮৫ রমজান মাসে কুরআন নাযিল হয়েছে
- সূরা বাক্বারা, আয়াত ১৮৫
অনুবাদঃ
রমযান মাস, এতে মানুষের দিশারী এবং সৎপথের স্পষ্ট নিদর্শন ও সত্যাসত্যের পার্থক্যকারী রূপে কুরআন অবতীর্ণ করা হয়েছে। অতএব তোমাদের মধ্যে যে কেউ এ মাস পাবে সে যেন তাতে রোযা পালন করে। আর যে অসুস্থ অথবা মুসাফির থাকে, তাকে অন্য দিনে এ সংখ্যা পূরণ করতে হবে। আল্লাহ তোমাদের (জন্য যা) সহজ (তা) করতে চান, তিনি তোমাদের কষ্ট চান না। যেন তোমরা (রোযার) নির্ধারিত সংখ্যা পূরণ করে নিতে পার এবং তোমাদেরকে যে সুপথ দেখিয়েছেন, তার জন্য তোমরা আল্লাহর তকবীর পাঠ (মহিমা বর্ণনা) কর এবং যেন তোমরা কৃতজ্ঞ হতে পার।
ইকরিমাহ এর মতটি যে ভুল, তা প্রমাণের জন্য উপরের আয়াতটি একটা দলিল। কারণ এখানে স্পষ্ট করে বলা হয়েছে কুরআন নাযিল হয়েছে রমজান মাসে। তাই কুরআনের এই আয়াতকে মেনে নিয়ে, সূরা দুখানে কুরআন নাযিলের রাতকে শাবানের ১৫ তারিখ বলার কোনো সুযোগ নাই।
চলুন এবার দেখে নেয়া যাক সূরা ক্বদরে আল্লাহ কী বলেছেন।
- সূরা ক্বদর – ক্বদরের রাতে কুরআন নাযিল হয়েছে
- সূরা ক্বদর
অনুবাদঃ
নিশ্চয়ই আমি একে (অর্থাৎ কুরআনকে) নাযিল করেছি লাইলাতুল ক্বদর এ (তথা মর্যাদাপূর্ণ রাত্রিতে)। তুমি কি জান লাইলাতুল ক্বদর কী? লাইলাতুল ক্বদর হচ্ছে এক হাজার মাসের চেয়েও উত্তম। সে রাতে ফেরেশতাগণ ও রূহ (জিবরাইল) প্রত্যেক কাজে তাদের প্রতিপালকের অনুমতিক্রমে অবতীর্ণ হয়। সে রাত আদ্যপান্ত শান্তি – ফজরের আবির্ভাব পর্যন্ত।
এখানেও বলা হয়েছে ক্বদরের রাতে কুরআন নাযিল করা হয়েছে। আর ক্বদরের রাত যে রমজান মাসের শেষ দশ দিনের কোনো একদিন তা অসংখ্য হাদীস দ্বারা প্রমাণিত।
‘আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমরা রমযানের শেষ দশকের বেজোড় রাতে লাইলাতুল ক্বদ্রের অনুসন্ধান কর। [সহীহ বুখারী ২০১৭]
এসব আয়াত আর হাদীসের প্রেক্ষিতে মুফাসসীরগণ (অর্থাৎ যারা কুরআনের ব্যাখ্যা বিশ্লেষণের ব্যাপারে অভিজ্ঞ) তারা এই মর্মে উপনীত হয়েছেন যে, কুরআন রমজান মাসে নাযিল হয়েছে (সূরা বাক্বারা ১৮৫)। আর তা বিশেষ করে লাইলাতুল ক্বদরের মর্যাদাপূর্ণ রাতে নাযিল হয়েছে (সূরা ক্বদর)। আর এই মর্যাদা পূর্ণ রাতই হচ্ছে বরকতময় রাত এবং এই রাতেই ভাগ্য লিপিবদ্ধ করা হয় (সূরা দুখান ৩-৪)। অতএব যারা শাবানের ১৫ তারিখকে ভাগ্য রজনী বলে দাবী করছেন বা বিশ্বাস করছেন এই বিশ্বাসটা কুরআন হাদীসের সাথে সাংঘর্ষিক। কিন্তু সূরা দুখানের বরকতময় রাতকে লাইলাতুল ক্বদরের রাত বলে ধরে নিলে তা কোনো আয়াত বা হাদীসের সাথে সাংঘর্ষিক হয় না। আর এটাই সর্বসম্মতক্রমে বিশুদ্ধ মত যে, সূরা দুখানে উল্লেখ করা বরকতময় রাতে কুরআন নাযিল ও ভাগ্য নির্ধারনের কথার দ্বারা, শবে ক্বদরকেই বুঝানো হয়েছে।
এজন্য একজন ইসলামী প্রাজ্ঞ ব্যক্তি বলেছিলেন “শবে ক্বদর একটা মজলুম রাত! কারণ এই রাতের ফজিলত ও মাহাত্ম লোকজন শবে বরাতকে দিয়ে দিয়েছে!”। আসলেই তাই! লাইলাতুল ক্বদরের যে মাহাত্ম ও মর্যাদা, সেটা উল্লেখ করে কুরআনে আলাদা সূরা পর্যন্ত নাযিল হয়েছে। কিন্তু এদেশের মানুষজন আদীকাল থেকে কেন যেন শবে বরাত নামে অজ্ঞান! এই রাতে ভাগ্য লেখা হওয়ার কথায় দিশেহারা! কয়শ রাকাত নামাজ পড়তে হবে, কোন রাকাতে কয়বার সূরা ইখলাস পড়তে হবে এ নিয়ে চিন্তা দুশ্চিন্তার শেষ নাই। প্রতি শবে বরাতের আগে অন্তত কয়েক ডজন প্রশ্নের মুখোমুখি হই। “শবে বরাতের নামাজ কয় রাকাত পড়তে হবে? শবে বরাতের নামাজের নিয়ত কী? শবে বরাতের নামাজের নিয়ম কী?” ইত্যাদি! আল্লাহ আমাদেরকে সঠিক বুঝ দান করুন। আল্লাহ আমাদেরকে কমন সেন্স দান করুন।
আরও জানুনঃ