২৬ শে মার্চ স্বাধীনতা দিবস কবিতা | সেরা কবিতা | ছোট কবিতা

১৯৭১ সালের স্বাধীনতা দিবস নিয়ে অনেক বিখ্যাত কবিগণ কবিতা রচনা করে গেছেন। তাই আজকের এই স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে কবিতা তুলে ধরা হয়েছে আজকের এই পোস্টে। বাংলাদেশের মানুষ ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ পাকিস্তান হানাদার বাহিনীর দ্বারা নানান রকম পাশবিক নির্যাতনের শিকার হন। অন্যদিকে ১৯৭১ সালের ২৬ শে মার্চ থেকে বাঙালি পাকিস্তান হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে যু*দ্ধ শুরু করে। দীর্ঘ নয় মাস যু*দ্ধ করার পর ১৯৭১ সালের ডিসেম্বর মাসের ১৬ তারিখ বাংলাদেশ বিজয় লাভ করে।

তাই আজকে বাংলাদেশের সেই সকল মুক্তিযো*দ্ধাদের স্মরণ করার দিন। কারণ বাংলাদেশে চুক্তি স্বাক্ষরিত করার মাধ্যমে ২৬ শে মার্চ থেকে স্বাধীন ভাবে দেশ পরিচালনা করা শুরু করেছে। আজকের এই দিনে সবাই স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে কবিতা পেতে চায়। তাই সবার জন্য আজকের এই পোস্ট এ ভালো মানের কিছু কবিতা উল্লেখ করা হলো।

স্বাধীনতা দিবস কবিতা

অনেকেই আছেন যারা স্বাধীনতা দিবস কবিতা আবৃত্তি করতে ভালোবাসেন। তাদের জন্য আজকের এই পোস্টে আমরা খুঁজে খুঁজে সকল বিখ্যাত কবিদের স্বাধীনতা দিবস নিয়ে কবিতা উল্লেখ করেছি। আশা করছি উল্লেখিত স্বাধীনতা দিবসের কবিতা গুলো আপনাদের অনেক ভালো লাগবে।

স্বাধীনতা, এই শব্দটি কীভাবে আমাদের হলো

– নির্মলেন্দু গুণ

একটি কবিতা লেখা হবে তার জন্য অপেক্ষার উত্তেজনা নিয়ে

লক্ষ লক্ষ উন্মত্ত অধীর ব্যাকুল বিদ্রোহী শ্রোতা বসে আছে

ভোর থেকে জনসমুদ্রের উদ্যান সৈকতে: ‘কখন আসবে কবি?’

এই শিশু পার্ক সেদিন ছিল না,

এই বৃক্ষে ফুলে শোভিত উদ্যান সেদিন ছিল না,

এই তন্দ্রাচ্ছন্ন বিবর্ণ বিকেল সেদিন ছিল না।

তা হলে কেমন ছিল সেদিনের সেই বিকেল বেলাটি?

তা হলে কেমন ছিল শিশু পার্কে, বেঞ্চে, বৃক্ষে, ফুলের বাগানে

ঢেকে দেয়া এই ঢাকার হদৃয় মাঠখানি?

জানি, সেদিনের সব স্মৃতি ,মুছে দিতে হয়েছে উদ্যত

কালো হাত৷ তাই দেখি কবিহীন এই বিমুখ প্রান্তরে আজ

কবির বিরুদ্ধে কবি,

মাঠের বিরুদ্ধে মাঠ,

বিকেলের বিরুদ্ধে বিকেল,

উদ্যানের বিরুদ্ধে উদ্যান,

মার্চের বিরুদ্ধে মার্চ …।

হে অনাগত শিশু, হে আগামী দিনের কবি,

শিশু পার্কের রঙিন দোলনায় দোল খেতে খেতে তুমি

একদিন সব জানতে পারবে; আমি তোমাদের কথা ভেবে

লিখে রেখে যাচ্ছি সেই শ্রেষ্ঠ বিকেলের গল্প।

সেই উদ্যানের রূপ ছিল ভিন্নতর।

না পার্ক না ফুলের বাগান, -এসবের কিছুই ছিল না,

শুধু একখন্ড অখন্ড আকাশ যেরকম, সেরকম দিগন্ত প্লাবিত

ধু ধু মাঠ ছিল দূর্বাদলে ঢাকা, সবুজে সবুজময়।

আমাদের স্বাধীনতা প্রিয় প্রাণের সবুজ এসে মিশেছিল

এই ধু ধু মাঠের সবুজে।

কপালে কব্জিতে লালসালু বেঁধে

এই মাঠে ছুটে এসেছিল কারখানা থেকে লোহার শ্রমিক,

লাঙল জোয়াল কাঁধে এসেছিল ঝাঁক বেঁধে উলঙ্গ কৃষক,

পুলিশের অস্ত্র কেড়ে নিয়ে এসেছিল প্রদীপ্ত যুবক।

হাতের মুঠোয় মৃত্যু, চোখে স্বপ্ন নিয়ে এসেছিল মধ্যবিত্ত,

নিম্ন মধ্যবিত্ত, করুণ কেরানী, নারী, বৃদ্ধ, বেশ্যা, ভবঘুরে

আর তোমাদের মত শিশু পাতা-কুড়ানীরা দল বেঁধে।

একটি কবিতা পড়া হবে, তার জন্যে কী ব্যাকুল

প্রতীক্ষা মানুষের: “কখন আসবে কবি?’ “কখন আসবে কবি?’

শত বছরের শত সংগ্রাম শেষে,

রবীন্দ্রনাথের মতো দৃপ্ত পায়ে হেঁটে

অত:পর কবি এসে জনতার মঞ্চে দাঁড়ালেন৷

তখন পলকে দারুণ ঝলকে তরীতে উঠিল জল,

হদৃয়ে লাগিল দোলা, জনসমুদ্রে জাগিল জোয়ার

সকল দুয়ার খোলা। কে রোধে তাঁহার বজ্রকন্ঠ বাণী?

গণসূর্যের মঞ্চ কাঁপিয়ে কবি শোনালেন তাঁর অমর-কবিতাখানি:

‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম,

এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম।’

সেই থেকে স্বাধীনতা শব্দটি আমাদের।

স্বাধীনতার কবিতা

অনেকেই আছেন যারা স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে কবিতা আবৃত্তি প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করেন। তাই অনেকের প্রয়োজন পড়ে স্বাধীনতা দিবস নিয়ে সেরা কিছু কবিতা আবৃত্তি করার। তাই আপনাদের জন্য স্বাধীনতার কবিতা তুলে ধরেছি আমরা।

২৬ মার্চ sadhinota dibosh

কনসেন্ট্রেশন ক্যাম্প

-রুদ্র মুহান্মদ শহীদুল্লাহ

তাঁর চোখ বাঁধা হলো।

বুটের প্রথম লাথি র*ক্তাক্ত করলো তার মুখ।

থ্যাতলানো ঠোঁটজোড়া লালা-র*ক্তে একাকার হলো,

জিভ নাড়তেই দুটো ভাঙা দাঁত ঝওে পড়লো কংক্রিটে।

মা…মাগো…চেঁচিয়ে উঠলো সে।

পাঁচশো পঞ্চান্নো মার্কা আধ খাওয়া একটা সিগারেট

প্রথমে স্পর্শ করলো তার বুক।

পোড়া মাংসের গন্ধ ছড়িয়ে পড়লো ঘরের বাতাসে।

জ্বলন্ত সিগারেটের স্পর্শ

আমারা কথা বলবো।

লাঠিচার্জ আমাদের ফেরাতে পারেনি

কাঁদানে গ্যাস আমাদের ফেরাতে পারেনি

র্ইাফেল আমাদের ফেরাতে পারেনি

মেশিন গান আমাদের ফেরাতে পারেনি –

আমারা এসেছি,

আমারা আমাদের গৃহহীনতার কথা বলবো।

কৃষক তোমাদের পক্ষে যাবে না

শ্রমিক তোমাদের পক্ষে যাবে না

ছাত্র তোমাদের পক্ষে যাবে না

সুন্দর তোমাদের পক্ষে যাবে না

স্বপ্ন তোমাদের পক্ষে যাবে না –

তারা সকলেই কষ্টে আছে

তারা সকলেই অনটনে আছে

তারা সকলেই বিক্ষোভের হাত তুলেছে।

তোমাদের পক্ষে যাবে কুকুর

তোমাদের পক্ষে যাবে সুবিধাভোগী

তোমাদের পক্ষে যাবে বিত্তবান নেকড়েরা।

বৃক্ষ তোমাদের অভিশাপ দিচ্ছে

শস্য তোমাদের অভিশাপ দিচ্ছে

র*ক্ত তোমাদের অভিশাপ দিচ্ছে

তোমাদের অভিশাপ দিচ্ছে পৃথিবীর সমস্ত শিশুরা।

লক্ষ মৃত্যু আমাদের ফেরাতে পারেনি

আমারা এসেছি।

আমারা আমাদের শিক্ষাহীনতার কথা বলবো

আমারা আমাদের চিকিৎসাহীনতার কথা বলবো

আমারা আমাদের গৃহহীনতার কথা বলবো

আমারা আমাদের বস্ত্রহীনতার কথা বলবো

আমারা আমাদের ক্ষুধা ও মৃত্যুর কথা বলবো।

আমরা তিতুমিরের বাঁশের কেল্লা থেকে এসেছি

আমরা সিপাহী আন্দোলনের দুর্গ থেকে এসেছি

আমরা তেভাগার কৃষক, নাচোলের যো*দ্ধা

আমরা চটকলের শ্রমিক, আমরা সূর্যসেনের ভাই

আমরা একাত্তরের স্বাধীনতাযু*দ্ধ থেকে এসেছি

কাঁধে স্টেন, কোমরে কার্তুজ, হাতে উন্মত্ত গ্রেনেড –

আমরা এসেছি।

স্বাধীনতার সেরা কবিতা

স্বাধীনতার সকল কবিতায় বাংলাদেশের নয় মাস র*ক্তক্ষয়ী যু*দ্ধের কথা উল্লেখ আছে। বাংলার মানুষ ভয় না পেয়ে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল পাকিস্তান হানাদার বাহিনীর উপর। পরবর্তীতে তারা ছিনিয়ে এনেছে একটি স্বাধীন দেশ যার নাম বাংলাদেশ। নিচে থেকে দেখুন স্বাধীনতার সেরা কবিতা

স্বাধীনতা দিবসের ছবি

অস্ত্র সমর্পণ

-হেলাল হাফিজ

মারণাস্ত্র মনে রেখো ভালোবাসা তোমার আমার।

নয় মাস বন্ধু বলে জেনেছি তোমাকে, কেবল তোমাকে।

বিরোধী নিধন শেষে কতোদিন অকারণে

তাঁবুর ভেতরে ঢুকে দেখেছি তোমাকে বারবার কতোবার।

মনে আছে, আমার জ্বালার বুক

তোমার কঠিন বুকে লাগাতেই গর্জে উঠে তুমি

বিস্ফোরণে প্রকম্পিত করতে আকাশ, আমাদের ভালবাসা

মুহূর্তেই লুফে নিত অত্যাচারী শত্রুর নি:শ্বাস।

মনে পড়ে তোমার কঠিন নলে তন্দ্রাতুর কপালের

মধ্যভাগ রেখে, বুকে রেখে হাত

কেটে গেছে আমাদের জঙ্গলের কতো কালো রাত!

মনে আছে, মনে রেখো

আমাদের সেই সব প্রেম-ইতিহাস।

অথচ তোমাকে আজ সেই আমি কারাগারে

সমর্পণ করে, ফিরে যাচ্ছি ঘরে

মানুষকে ভালোবাসা ভালোবাসি বলে।

যদি কোনোদিন আসে আবার দুর্দিন,

যেদিন ফুরাবে প্রেম অথবা হবে না প্রেম মানুষে মানুষে

ভেঙে সেই কালো কারাগার

আবার প্রণয় হবে মারণাস্ত্র তোমার আমার।

স্বাধীনতা নিয়ে ছোট কবিতা

আপনাদের মাঝে অনেকেই আছেন যারা স্বাধীনতা নিয়ে ছোট কবিতা পড়তে ভালোবাসেন। তাদের জন্য বাংলাদেশের বর্তমান প্রজন্মের অনেক কবি ছোট কবিতা লিখেছে। সেখান থেকে আপনাদের জন্য সবচাইতে ভালো মানের স্বাধীনতা নিয়ে ছোট কবিতা তুলে ধরেছে আমরা।

স্বাধীনতা দিবসের ইমেজ

এ লাশ আমরা রাখবো কোথায়

হুমায়ুন আজাদ

এ লাশ আমরা রাখবো কোথায় ?

তেমন যোগ্য সমাধি কই ?

মৃত্তিকা বলো, পর্বত বলো

অথবা সুনীল-সাগর-জল-

সব কিছু ছেঁদো, তুচ্ছ শুধুই !

তাইতো রাখি না এ লাশ আজ

মাটিতে পাহাড়ে কিম্বা সাগরে,

হৃদয়ে হৃদয়ে দিয়েছি ঠাঁই।

রিপোর্ট ১৯৭১

আসাদ চৌধুরী

প্রাচ্যের গানের মতো শোকাহত, কম্পিত, চঞ্চল

বেগবতী তটিনীর মতো স্নিগ্ধ, মনোরম

আমাদের নারীদের কথা বলি, শোনো।

এ-সব রহস্যময়ী রমণীরা পুরুষের কণ্ঠস্বর শুনে

বৃক্ষের আড়ালে স’রে যায়-

বেড়ার ফোঁকড় দিয়ে নিজের রন্ধনে

তৃপ্ত অতিথির প্রসন্ন ভোজন দেখে

শুধু মুখ টিপে হাসে।

প্রথম পোয়াতী লজ্জায় অনন্ত হ’য়ে

কোঁচরে ভরেন অনুজের সংগৃহীত কাঁচা আম, পেয়ারা, চালিতা-

সূর্য্যকেও পর্দা করে এ-সব রমণী।

অথচ যোহরা ছিলো নির্মম শিকার

সকৃতজ্ঞ লম্পটেরা

সঙ্গীনের সুতীব্র চুম্বন গেঁথে গেছে-

আমি তার সুরকার- তার র*ক্তে স্বরলিপি লিখি।

মরিয়ম, যীশুর জননী নয় অবুঝ কিশোরী

গরীবের চৌমুহনী বেথেলহেম নয়

মগরেবের নামাজের শেষে মায়ে-ঝিয়ে

খোদার কালামে শান্তি খুঁজেছিলো,

অস্ফুট গোলাপ-কলি লহুতে রঞ্জিত হ’লে

কার কী বা আসে যায়।

বিপন্ন বিস্ময়ে কোরানের বাঁকা-বাঁকা পবিত্র হরফ

বোবা হ’য়ে চেয়ে দ্যাখে লম্পটের ক্ষুধা,

মায়ের স্নেহার্ত দেহ ঢেকে রাখে পশুদের পাপ।

পোষা বেড়ালের বাচ্চা চেয়ে-চেয়ে নিবিড় আদর

সারারাত কেঁদেছিলো তাহাদের লাশের ওপর।

এদেশে যে ঈশ্বর আছেন তিনি নাকি

অন্ধ আর বোবা

এই ব’লে তিন কোটি মহিলারা বেচারাকে গালাগালি করে।

জনাব ফ্রয়েড,

এমন কি খোয়াবেও প্রেমিকারা আসে না সহজ পায়ে চপল চরণে।

জনাব ফ্রয়েড, মহিলারা

কামুকের, প্রেমিকের, শৃঙ্গারের সংজ্ঞা ভুলে গ্যাছে।

রকেটের প্রেমে পড়ে ঝ’রে গ্যাছে

ভিক্টোরিয়া পার্কের গীর্জার ঘড়ি,

মুসল্লীর সেজদায় আনত মাথা

নিরপেক্ষ বুলেটের অন্তিম আজানে স্থবির হয়েছে।

বুদ্ধের ক্ষমার মূর্তি ভাঁড়ের মতন

ভ্যাবাচেকা খেয়ে প’ড়ে আছে, তাঁর

মাথার ওপরে

এক ডজন শকুন মৈত্রী মৈত্রী ক’রে

হয়তো বা উঠেছিলো কেঁদে।

স্বাধীনতা কবিতা লিরিক্স

আপনারা অনেকেই আছেন যারা স্বাধীনতা কবিতা ইউটিউব ভিডিও দেখে থাকেন। যার জন্য অনেকেই স্বাধীনতা কবিতা লিরিকস গুগলে অনুসন্ধান করেন। তাদের জন্য আজকের এই পোস্টে আমরা স্বাধীনতা কবিতার লিরিক্স উল্লেখ করেছি। নিজের পছন্দের স্বাধীনতা কবিতার লিরিক্স সংগ্রহ করে নিন।

স্বাধীনতা তুমি
রবিঠাকুরের অজর কবিতা, অবিনাশী গান।
স্বাধীনতা তুমি
কাজী নজরুল ঝাঁকড়া চুলের বাবরি দোলানো
মহান পুরুষ, সৃষ্টিসুখের উল্লাসে কাঁপা-
স্বাধীনতা তুমি
শহীদ মিনারে অমর একুশে ফেব্রুয়ারির উজ্জ্বল সভা
স্বাধীনতা তুমি
পতাকা-শোভিত শ্লোগান-মুখর ঝাঁঝালো মিছিল।
স্বাধীনতা তুমি
ফসলের মাঠে কৃষকের হাসি।
স্বাধীনতা তুমি
রোদেলা দুপুরে মধ্যপুকুরে গ্রাম্য মেয়ের অবাধ সাঁতার।
স্বাধীনতা তুমি
মজুর যুবার রোদে ঝলসিত দক্ষ বাহুর গ্রন্থিল পেশী।
স্বাধীনতা তুমি
অন্ধকারের খাঁ খাঁ সীমান্তে মুক্তিসেনার চোখের ঝিলিক।
স্বাধীনতা তুমি
বটের ছায়ায় তরুণ মেধাবী শিক্ষার্থীর
শানিত কথার ঝলসানি-লাগা সতেজ ভাষণ।
স্বাধীনতা তুমি
চা-খানায় আর মাঠে-ময়দানে ঝোড়ো সংলাপ।
স্বাধীনতা তুমি
কালবোশেখীর দিগন্তজোড়া মত্ত ঝাপটা।
স্বাধীনতা তুমি
শ্রাবণে অকূল মেঘনার বুক
স্বাধীনতা তুমি পিতার কোমল জায়নামাজের উদার জমিন।
স্বাধীনতা তুমি
উঠানে ছড়ানো মায়ের শুভ্র শাড়ির কাঁপন।
স্বাধীনতা তুমি
বোনের হাতের নম্র পাতায় মেহেদীর রঙ।
স্বাধীনতা তুমি বন্ধুর হাতে তারার মতন জ্বলজ্বলে এক রাঙা পোস্টার।
স্বাধীনতা তুমি
গৃহিণীর ঘন খোলা কালো চুল,
হাওয়ায় হাওয়ায় বুনো উদ্দাম।
স্বাধীনতা তুমি
খোকার গায়ের রঙিন কোর্তা,
খুকীর অমন তুলতুলে গালে
রৌদ্রের খেলা।
স্বাধীনতা তুমি
বাগানের ঘর, কোকিলের গান,
বয়েসী বটের ঝিলিমিলি পাতা,
যেমন ইচ্ছে লেখার আমার কবিতার খাতা।

স্বাধীনতা কবিতা কাজী নজরুল ইসলাম

বাংলাদেশের স্বাধীনতা নিয়ে কাজী নজরুল ইসলাম একটি বিখ্যাত কবিতা লিখেছেন। যার ফলে অনেকেই প্রতিবছর স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে কাজী নজরুল ইসলামের কবিতা পাওয়ার জন্য অনুসন্ধান করে।তাদের জন্য আজকের এই পোস্টের স্বাধীনতা দিবসের কবিতা কাজী নজরুল ইসলামের তুলে ধরেছে আমরা।

র্তমানের কবি আমি ভাই, ভবিষ্যতের নই ‘নবী’,
কবি ও অকবি যাহা বলো মোরে মুখ বুঁজে তাই সই সবি!
কেহ বলে, ‘তুমি ভবিষ্যতে যে
ঠাঁই পাবে কবি ভবীর সাথে হে!
যেমন বেরোয় রবির হাতে সে চিরকেলে-বাণী কই কবি?’
দুষিছে সবাই, আমি তবু গাই শুধু প্রভাতের ভৈরবী!

কবি-বন্ধুরা হতাশ হইয়া মোর লেখা প’ড়ে শ্বাস ফেলে!
বলে, কেজো ক্রমে হচ্ছে অকেজো পলিটিক্সের পাশ ঠেলে’।
পড়ে না ক’ বই, ব’য়ে গেছে ওটা।
কেহ বলে, বৌ-এ গিলিয়াছে গোটা।
কেহ বলে, মাটি হ’ল হয়ে মোটা জেলে ব’সে শুধু তাস খেলে!
কেহ বলে, তুই জেলে ছিলি ভালো ফের যেন তুই যাস জেলে!

গুরু ক’ন, তুই করেছিস শুরু তলোয়ার দিয়ে দাড়ি চাঁছা!
প্রতি শনিবারী চিঠিতে প্রেয়সী গালি দেন, ‘তুমি হাঁড়িচাঁচা!’
আমি বলি, ‘প্রিয়ে, হাটে ভাঙি হাঁড়ি!’
অমনি বন্ধ চিঠি তাড়াতাড়ি।
সব ছেড়ে দিয়ে করিলাম বিয়ে, হিন্দুরা ক’ন, আড়ি চাচা!’
যবন না আমি কাফের ভাবিয়া খুঁজি টিকি দাড়ি, নাড়ি কাছা!

মৌ-লোভী যত মৌলবী আর ‘ মোল্‌-লা’রা ক’ন হাত নেড়ে’,
‘দেব-দেবী নাম মুখে আনে, সবে দাও পাজিটার জাত মেরে!
ফতোয়া দিলাম- কাফের কাজী ও,
যদিও শহীদ হইতে রাজী ও!
‘আমপারা’-পড়া হাম-বড়া মোরা এখনো বেড়াই ভাত মেরে!
হিন্দুরা ভাবে,‘ পার্শী-শব্দে কবিতা লেখে, ও পা’ত-নেড়ে!’

আনকোরা যত নন্‌ভায়োলেন্ট নন্‌-কো’র দলও নন্‌ খুশী।
‘ভায়োরেন্সের ভায়োলিন্‌’ নাকি আমি, বিপ্লবী-মন তুষি!
‘এটা অহিংস’, বিপ্লবী ভাবে,
‘নয় চর্‌কার গান কেন গা’বে?’
গোঁড়া-রাম ভাবে নাস্তিক আমি, পাতি-রাম ভাবে কন্‌ফুসি!
স্বরাজীরা ভাবে নারাজী, নারাজীরা ভাবে তাহাদের আঙ্কুশি!

নর ভাবে, আমি বড় নারী-ঘেঁষা! নারী ভাবে, নারী-বিদ্বেষী!
‘বিলেত ফেরনি?’ প্রবাসী-বন্ধু ক’ন, ‘ এই তব বিদ্যে, ছি!’
ভক্তরা বলে, ‘নবযুগ-রবি!’-
যুগের না হই, হজুগের কবি
বটি ত রে দাদা, আমি মনে ভাবি, আর ক’ষে কষি হৃদ্‌-পেশী,
দু’কানে চশ্‌মা আঁটিয়া ঘুমানু, দিব্যি হ’তেছে নিদ্‌ বেশী!

কি যে লিখি ছাই মাথা ও মুণ্ডু আমিই কি বুঝি তার কিছু?
হাত উঁচু আর হ’ল না ত ভাই, তাই লিখি ক’রে ঘাড় নীচু!
বন্ধু! তোমরা দিলে না ক’ দাম,
রাজ-সরকার রেখেছেন মান!
যাহা কিছু লিখি অমূল্য ব’লে অ-মূল্যে নেন! আর কিছু
শুনেছ কি, হুঁ হুঁ, ফিরিছে রাজার প্রহরী সদাই কার পিছু?

বন্ধু! তুমি ত দেখেছ আমায় আমার মনের মন্দিরে,
হাড় কালি হ’ল শাসাতে নারিনু তবু পোড়া মন-বন্দীরে!
যতবার বাঁধি ছেঁড়ে সে শিকল,
মেরে মেরে তা’রে করিনু বিকল,
তবু যদি কথা শোনে সে পাগল! মানিল না ররি-গান্ধীরে।
হঠাৎ জাগিয়া বাঘ খুঁজে ফেরে নিশার আঁধারে বন চিরে’!

আমি বলি, ওরে কথা শোন্‌ ক্ষ্যাপা, দিব্যি আছিস্‌ খোশ্‌-হালে!
প্রায় ‘হাফ’-নেতা হ’য়ে উঠেছিস্‌, এবার এ দাঁও ফস্‌কালে
‘ফুল’-নেতা আর হবিনে যে হায়!
বক্তৃতা দিয়া কাঁদিতে সভায়
গুঁড়ায়ে লঙ্কা পকেটেতে বোকা এই বেলা ঢোকা! সেই তালে
নিস্‌ তোর ফুটো ঘরটাও ছেয়ে, নয় পস্তাবি শেষকালে।

বোঝে না ক’ যে সে চারণের বেশে ফেরে দেশে দেশে গান গেয়ে,
গান শুন সবে ভাবে, ভাবনা কি! দিন যাবে এবে পান খেয়ে!
রবে না ক’ ম্যালেরিয়া মহামারী,
স্বরাজ আসিছে চ’ড়ে জুড়ি-গাড়ী,
চাঁদা চাই, তারা ক্ষুধার অন্ন এনে দেয়, কাঁদে ছেলে-মেয়ে।
মাতা কয়, ওরে চুপ্‌ হতভাগা, স্বরাজ আসে যে, দেখ্‌ চেয়ে!

ক্ষুধাতুর শিশু চায় না স্বরাজ, চায় দুটো ভাত, একটু নুন,
বেলা ব’য়ে যায়, খায়নি ক’ বাছা, কচি পেটে তার জ্বলে আগুন।
কেঁদে ছুটে আসি পাগলের প্রায়,
স্বরাজের নেশা কোথা ছুটে যায়!
কেঁদে বলি, ওগো ভগবান তুমি আজিও আছে কি? কালি ও চুন
কেন ওঠে না ক’ তাহাদের গালে, যারা খায় এই শিশুর খুন?

আমরা ত জানি, স্বরাজ আনিতে পোড়া বার্তাকু এনেছি খাস!
কত শত কোটি ক্ষুধিত শিশুর ক্ষুধা নিঙাড়িয়া কাড়িয়া গ্রাস
এল কোটি টাকা, এল না স্বরাজ!
টাকা দিতে নারে ভুখারি সমাজ।
মা’র বুক হ’তে ছেলে কেড়ে খায়, মোরা বলি, বাঘ, খাও হে ঘাস!
হেরিনু, জননী মাগিছে ভিক্ষা ঢেকে রেখে ঘরে ছেলের লাশ!

বন্ধু গো, আর বলিতে পারি না, বড় বিষ-জ্বালা এই বুকে!
দেখিয়া শুনিয়া ক্ষেপিয়া গিয়াছি, তাই যাহা আসে কই মুখে।
র*ক্ত ঝরাতে পারি না ত একা,
তাই লিখে যাই এ র*ক্ত-লেখা,
বড় কথা বড় ভাব আসে না ক’ মাথায়, বন্ধু, বড় দুখে!
অমর কাব্য তোমরা লিখিও, বন্ধু, যাহারা আছ সুখে!

পরোয়া করি না, বাঁচি বা না-বাঁচি যুগের হুজুগ কেটে গেলে,
মাথায় উপরে জ্বলিছেন রবি, রয়েছে সোনার শত ছেলে।
প্রার্থনা ক’রো যারা কেড়ে খায় তেত্রিশ কোটি মুখের গ্রাস,
যেন লেখা হয় আমার র*ক্ত-লেখায় তাদের সর্বনাশ!

শহীদদের প্রতি

__আসাদ চৌধুরী

তোমাদের যা বলার ছিল

বলছে কি তা বাংলাদেশ ?

শেষ কথাটি সুখের ছিল ?

ঘৃণার ছিল ?

নাকি ক্রোধের,

প্রতিশোধের,

কোনটা ছিল ?

নাকি কোনো সুখের

নাকি মনে তৃপ্তি ছিল

এই যাওয়াটাই সুখের।

তোমরা গেলে, বাতাস যেমন যায়

গভীর নদী যেমন বাঁকা

স্রোতটিকে লুকায়

যেমন পাখির ডানার ঝলক

গগনে মিলায়।

সাঁঝে যখন কোকিল ডাকে

কারনিসে কি ধুসর শাখে

বারুদেরই গন্ধস্মৃতি

ভুবন ফেলে ছেয়ে

ফুলের গন্ধ পরাজিত

স্লোগান আসে ধেয়ে।

তোমার যা বলার ছিল

বলছে কি তা বাংলাদেশ ?

২৬ শে মার্চ স্বাধীনতা দিবস কবিতা

সংগ্রাম চলবেই

– সিকান্দার আবু জাফর

র*ক্তচোখের আগুন মেখে ঝলসে যাওয়া আমার বছরগুলো

আজকে যখন হাতের মুঠোয় কণ্ঠনালীর খুন পিয়াসী ছুরি

কাজ কি তবে আগলে রেখে বুকের কাছে কেউটে সাপের ঝাপি

আমার হাতেই নিলাম আমার নির্ভরতার চাবি

তুমি আমার আকাশ থেকে সরাও তোমার ছায়া

তুমি বাংলা ছাড়ো

অনেক মাপের অনেক জুতোর দামে তোমার হাতে

দিয়েছি ফুল হৃদয় সুরভিত

সে ফুল খুঁজে পায়নি তোমার চিত্তরসের ছোঁয়া

পেয়েছে শুধু কঠিন জুতোর তলা

আজকে যখন তাদের স্মৃতি অসন্মানের বিষে

তিক্ত প্রানে শ্বাপদ নখের জ্বালা

কাজ কি চোখের প্রসন্নতায় লুকিয়ে রেখে প্রেতের অট্টহাসি

আমার কাঁধেই নিলাম তুলে আমার যত বোঝা

তুমি আমার বাতাস থেকে মুছো তোমার ধূলো

তুমি বাংলা ছাড়ো

একাগ্নতার স্বপ্ন বিনিময়ে মেঘ চেয়েছি

ভিজিয়ে নিতে যখন পোড়া মাটি

বারে বারেই তোমার খরা আমার খেতে বসিয়ে গেছে ঘাঁটি

আমার প্রীতি তোমার প্রতারনা

যোগ বিয়োগে মিলিয়ে

নিলে তোমার লাভের জটিল অন্কগুলো

আমার কেবল হাড় জুড়ালো হতাশ শ্বাসের ধূলো

আজকে যখন খুঁড়তে গিয়ে নিজের কবরখানা

আপন খুলির কোদাল দেখে সর্বনাশা বজ্র দিয়ে গড়া

কাজ কি দ্বিধায় বিষন্নতায় বন্দী রেখে ঘৃনার অগ্নিগিরি

আমার বুকেই ফিরিয়ে নেব ক্ষীপ্ত বাঘের থাবা

তুমি আমার জল স্থলের মাদুর থেকে নামো

তুমি বাংলা ছাড়ো

স্বাধীনতা দিবস নিয়ে কবিতা

বন্দী শিবির থেকে

__শামসুর রাহমান

ঈর্ষাতুর নই, তবু আমি

তোমাদের আজ বড় ঈর্ষা করি। তোমরা সুন্দর

জামা পরো, পার্কের বেঞ্চিতে বসে আলাপ জমাও,

কখনো সেজন্যে নয়। ভালো খাও দাও,

ফুর্তি করো সবান্ধব

সেজন্যেও নয়।

বন্ধুরা তোমরা যারা কবি,

স্বাধীন দেশের কবি, তাদের সৌভাগ্যে

আমি বড়ো ঈর্ষান্বিত আজ।

যখন যা খুশি

মনের মতো শব্দ কী সহজে করো ব্যবহার

তোমরা সবাই।

যখন যে শব্দ চাও, এসে গেলে সাজাও পয়ারে,

কখনো অমিত্রাক্ষরে, ক্ষিপ্র মাত্রাবৃত্তে কখনো-বা।

সেসব কবিতাবলী, যেন রাজহাঁস

দৃপ্ত ভঙ্গিমায় মানুষের

অত্যন্ত নিকটে যায়, কুড়ায় আদর।

অথচ এদেশে আমি আজ দমবদ্ধ

এ বন্দী-শিবিরে

মাথা খুঁড়ে মরলেও পারি না করতে উচ্চারণ

মনের মতন শব্দ কোনো।

মনের মতন সব কবিতা লেখার

অধিকার ওরা

করেছে হরণ।

প্রকাশ্য রাস্তায় যদি তারস্বরে চাঁদ, ফুল, পাখি

এমনকি নারী ইত্যাকার শব্দাবলী

করি উচ্চারণ, কেউ করবে না বারণ কখনো।

কিন্তু কিছু শব্দকে করেছে

বেআইনী ওরা

ভয়ানক বিস্ফোরক ভেবে।

স্বাধীনতা নামক শব্দটি

ভরাট গলায় দীপ্ত উচ্চারণ করে বারবার

তৃপ্তি পেতে চাই। শহরের আনাচে কানাচে

প্রতিটি রাস্তায়

অলিতে-গলিতে,

রঙিন সাইনবোর্ড, প্রত্যেক বাড়িতে

স্বাধীনতা নামক শব্দটি আমি লিখে দিতে চাই

বিশাল অক্ষরে।

স্বাধীনতা শব্দ এত প্রিয় যে আমার

কখনো জানিনি আগে। উঁচিয়ে বন্দুক,

স্বাধীনতা, বাংলাদেশ- এই মতো শব্দ থেকে ওরা

আমাকে বিচ্ছিন্ন করে রাখছে সর্বদা।

অথচ জানেনা ওরা কেউ

গাছের পাতায়, ফুটপাতে

পাখির পালকে কিংবা নারীর দু’চোখে

পথের ধুলায়

বস্তির দুরন্ত ছেলেটার

হাতের মুঠোয়

সর্বদাই দেখি জ্বলে স্বাধীনতা নামক শব্দটি।

আমরা চেষ্টা করেছি আজকের এই পোস্টের স্বাধীনতা দিবসের কবিতা উল্লেখ করার জন্য। আশা করি আপনাদের স্বাধীনতা দিবসের সেরা কবিতা ও ছোট কবিতা ভালো লেগেছে। তাই সবার সাথে স্বাধীনতা দিবসের কবিতা শেয়ার করুন যাতে সবাই স্বাধীনতা দিবস নিয়ে কবিতা ফেসবুকে শেয়ার করতে পারে।

Read More

Leave a Comment