নদী নিয়ে ক্যাপশন, উক্তি, স্ট্যাটাস, ছন্দ ও কবিতা

নদী নাম ছোট হলেও এর বিশালতা অনেক। অনেকেই নদী নিয়ে উক্তি সংগ্রহ করতে চায়। যারা বাছাই করা উক্তি সংগ্রহ করতে চায়, তারা আজকের এই পোস্টে পেয়ে যাবে। এই পোস্টে আমরা তুলে ধরেছি নদী নিয়ে উক্তি, নদী নিয়ে স্ট্যাটাস, নদী নিয়ে ক্যাপশন, নদী নিয়ে ছন্দ ও নদী নিয়ে কবিতা। আমরা চেষ্টা করেছি ভালো কিছু উক্তি তুলে ধরার। আশা করা যায় আজকের এই পোস্ট থেকে আপনি খুব সহজে উক্তি গুলো সংগ্রহ করতে পারবেন। এবং আপনাদের কাছে ভালো লাগবে।

আমাদের বাংলাদেশ নদীমাতৃক দেশ। আমাদের সকলেরই এ বিষয়ে জানা আছে। আমাদের বাংলাদেশে ছোট বড় অনেক নদী বয়ে গেছে। বলা হয় বিশ্বের সবচেয়ে বেশি সংখ্যক নদী রয়েছে বাংলাদেশে। এর কারণে বাংলাদেশকে নদীমাতৃক দেশ বলা হয়। নদী নামটি ছোট হলেও এর বিশালতা অনেক। নদী পছন্দ করে না এরকম মানুষ খুব কমই রয়েছে। মন খারাপ থাকলে তারা যদি সময় পেয়ে নদীর পাশে দাঁড়ায়। তাদের দুঃখ কষ্ট কিছুটা সময়ের জন্য হলেও ভুলে থাকতে পারে। কারণ নদীর ঘাটের সৌন্দর্য মুগ্ধ করে দেয় সকলের মন। নদীর ঢেউ সাগরের মতন বিশাল নয় তবে এই ঢেউ দেখতে অনেক সুন্দর।

নদীর বিশালতা থেকে আমাদের অনেক কিছু শেখার ও জানার আছে। এখান থেকে আমরা শিখতে পারি জীবনে কোন কিছু অর্জন করতে হলে সময়কে মূল্য দিতে হবে। কথিত আছে সময় ও স্রোত কারো জন্য অপেক্ষা করে না। তাই আমাদের সবাইকে সময়কে গুরুত্ব দিতে হবে তাহলে অবশ্যই ভালো কিছু অর্জন করা যাবে।

নদী নিয়ে কবিদের উক্তি

অনেকেই নদীর বিশালতা দেখতে পছন্দ করে, নদীর ঢেউ দেখতে পছন্দ, নদীর স্রোত দেখতে পছন্দ করে। নদী তখন পরিপূর্ণ হয় যখন এর মাঝে পানি থাকে পানি ছাড়া নদী অপূর্ণ। নদী নিজস্ব গতিতে চলতে থাকে এবং সাগরের সাথে মিশে যায়। নদীর সৌন্দর্য দেখতে অনেকর ভালো লাগে তাই অনেকই নদী নিয়ে কবিদের উক্তি অনুসন্ধান করে থাকে। যা আজকের এই পোস্টে আমরা তুলে ধরেছি।

  • বড় ও সুন্দর নদীর ঠিক মাঝখানে আপনি কখনোই অসুখী থাকতে পারবেন না।
    — জিম হ্যারিসন
  • একটা নদী পাথরকে ভেদ করেও চলে যেতে পারে এর ক্ষমতার কারণে নয় জেদের কারণে।
    — জিম ওয়াটকিন্স
  • সেই রকম সচেতন থাকো শীতকালে নদী পার হওয়ার সময় যতটা থাকো।
    — লাওযি
  • ভালবাসা হলো নদীর মতো যখনই কোনো বাধা পাবে তখনই নতুন পথ খুজে নিবে।
    — ক্রিস্টাল মিডলেমাস
  • সাগর এবং নদী যেমন একই প্রকৃতির তেমনি জীবন ও মৃত্যুও হলো একই।
    — খালিল জিবরান
  • জীবন হল একটা ভ্রমণ এর মতো যেখানে সময় হলো নদী।
    — জিম বুচার
  • কোনো নদীই তার উৎসতে ফিরে আসে না তবে এর একটা শুরু রয়েছে।
    — প্রবাদ

নদী নিয়ে উক্তি

  • নদীর মতো বাচতে শিখো পুরাতন বা অতীতকে ভুলে গিয়ে নতুন কে আলিংগন করে নাও।
    — সংগৃহীত

নদী নিয়ে ফেসবুক ক্যাপশন

আপনি যদি নদী নদী নিয়ে ফেসবুক ক্যাপশন দিতে চান। অন্যদের মাঝে নদীর বিশালতা নিয়ে শেয়ার করতে চান। তাহলে আজকের এই পোস্টে থাকা স্ট্যাটাস গুলো সংগ্রহ করে নিন। আমরা কিছু বাছাই করে স্ট্যাটাস তুলে ধরেছি। আশা করি আপনাদের কাছে ভালো লাগবে।

  • একটি নদী যা একটি গ্রামকে খাওয়ায়, এমন সমুদ্রের চেয়ে উত্তম যা কেবল দ্বীপের সজ্জিত করে।
    — মাতশোনা ধলিওয়েও
  • অশান্ত নদী জয় করার চেয়ে শান্ত সমুদ্র যাত্রা সহজ।
    — মাতশোনা ধলিওয়েও
  • একটি নৌকা একটি নদী পার হতে পারে, একটি জাহাজ একটি সমুদ্র পার হতে পারে, এবং একটি আত্মা মহাবিশ্বকে অতিক্রম করতে পারে।
    — মাতশোনা ধলিওয়েও
  • একটি নদী হলো, কোন মরুভূমিতে একটি সমুদ্র।
    — মাতশোনা ধলিওয়েও
  • একটি সুন্দর নদী একটি ময়লা সমুদ্রের চেয়ে ভাল।
    — মাতশোনা ধলিওয়েও
  • মাছ সমৃদ্ধ একটি ছোট নদী একটি শূন্য সমুদ্রের চেয়ে ভাল।
    — মাতশোনা ধলিওয়েও

নদী নিয়ে স্ট্যাটাস

  • একটি নদী সমুদ্রের দিকে তার পথ খুঁজে পাবে, ইতিবাচক হবে এবং মনোনিবেশ করবে ।
    — পুনশ্চ. জগদীশ কুমার

নদী নিয়ে প্রেমের ক্যাপশন

একটি পানির ফোটা তুচ্ছ করতে নেই। কেননা একটি পানির ফোঁটা থেকে হতে পারে নদী। তেমনি একটি ক্ষুদ্র বস্তু কখনো তুচ্ছ হয় না। একটি ক্ষুদ্র বস্তুও জীবনে অনেক কাজে লেগে যেতে পারে। তাই কখনো ছোট বস্তুকে তুচ্ছ করতে নেই। নদী নিয়ে লেখা অনেকেই খোঁজ করে থাকে। যারা নদী নিয়ে প্রেমের ক্যাপশন খোঁজ করছেন, তারা এই পোস্ট থেকে সংগ্রহ করে নিন।

  • সময় ও নদীর স্রোত কারো জন্য অপেক্ষা করে না ।
    — প্রচলিত প্রবাদ
  • ছোট ছোট স্রোত থেকে বড় বড় নদীর জন্ম হয়।
    — মাতশোনা ধলিওয়েও
  • নদীর এপাড় কহে ছাড়িয়া নিশ্বাস, ওপাড়েতে সর্ব সুখ আমার বিশ্বাস।
    — রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
  • একটি নদী কখনই হ্রদে পরিণত হতে চায় না এবং যে ব্যক্তি নদীর মতো প্রবাহিত হতে পছন্দ করে সে কখনও হ্রদের মতো স্থির হয়ে থাকতে চায় না ।
    — মেহমেট মুরাত ইল্ডান
  • একফোঁটা পানি কে তুচ্ছ করবেন না, কারন শীঘ্রই সে নদী হয়ে উঠতে পারে ।
    — ব্রুস মাবাঞ্জাবুগাবো

নদী নিয়ে লেখা

  • একটি শান্ত সাগর কখনই নদীর বন্যাতে ভয় পায় না।
    — মাতশোনা ধলিওয়েও
  • পিঁপড়ার কাছে একটি নদীই একটি সমুদ্র।
    — মাতশোনা ধলিওয়েও

নদী নিয়ে ক্যাপশন

নদী চায় সব সময় পানি থাকুক। নদীর সৌন্দর্য পরিপূর্ণতা পায় পানি থাকলে। পানি ছাড়া নদী অসহায় পানির মাঝে নদীর পরিপূর্ণতা। এখান থেকে আমরা শিখতে পারি জীবনের যা কিছু করি না কেন। তা অবশ্যই ভালো কিছুর উদ্দেশ্য করতে হবে। তাহলে জীবনের পরিপূর্ণতা আসবে। আমরা বাছাই করা কিছু নদী নিয়ে ক্যাপশন তুলে ধরেছি। আশা করা যায় আপনাদের কাছে ভালো লাগবে।

  • জীবন নামক নদীকে থামিয়ে দেয়া সত্যি কঠিন।
    — পাওলো কোয়েলহো
  • নদী কখনোই তার বিপরীতে যায় না তাই নদীর মতো হওয়ার চেষ্টা করো নিজের অতীতকে ভুলে যাও।
    — সংগৃহীত
  • গভীর নদী গুলোই সবচেয়ে কম শব্দ করে চলে।
    — কুইন্টাস রুফুস
  • নদীর মতো হও মুক্ত থাকো এবং প্রবাহিত হও।
    — জুলিয়ে কনোর
  • নদী যতই গভীর হয় সেটি ততই নিঃশব্দে প্রবাহিত হতে পারে।
    — কোরিয়ান প্রবাদ
  • সময় হলো নদীর মতো কেননা একবার তুমি যেই পানিকে স্পর্শ করেছো তা আর করতে পারবে না কারণ নদী বারবার একই পথ দিয়ে যায় না।
    — সংগৃহীত
  • নদী হও জলাশয় নয়।
    — জন সি. ম্যাক্সওয়েল

নদী নিয়ে ছন্দ

অনেকেই ছন্দ পড়তে পছন্দ করে। এর মাঝে অনেকে চায় নদী নিয়ে ছন্দ সংগ্রহ করতে। আমরা এই পোস্টে নদী নিয়ে কিছু ছন্দ তুলে ধরেছি। আশা করা যায় আপনাদের কাছে এই ছন্দ গুলো ভালো লাগবে। ছন্দ গুলো নিচে দেয়া হয়েছে সংগ্রহ করে নিন।

  • দুরন্ত নদীর বুকে, সখি, কি যে মত্ত ঢেউ জাগে!
    সেই ঢেউয়ের জল হয় যে র*ক্তিম অস্তরাগে;
    চলো হাঁটি অনুরাগে হাতটি ধরে নদীর তীরে,
    এই মৃত্তিকার তলে অন্তিম শয্যা পাতার আগে।
    — আনিস বিন ছিদ্দিক বিন মিয়ারাজ
  • নদীর বুকে হাঁটছে আলো
    আঁকছে বিকেল নতুন প্রেম,
    কাঁধের উপর ঠেকিয়ে মাথা,
    বাঁচছে হৃদয় বাঁচছে প্রেম ।
  • ছোট ছোট স্রোত থেকেই জন্ম নেয় বড় বড় নদী ।
  • একফোঁটা জল ও কখনো তুচ্ছ চোখে দেখা উচিত নয় কারণ সে শীঘ্রই নদী হয়ে উঠতে পারে ।
  • একটি নদী যা একটি গ্রামকে খাদ্য বিয়ে বাঁচিয়ে রাখে ,এমন সমুদ্রের চেয়ে অধিকতর উৎকৃষ্ট যা কেবলমাত্র দ্বীপের দ্বারাই সজ্জিত হয়ে থাকে।
  • অশান্ত নদী পার করা অপেক্ষা শান্ত সমুদ্র যাত্রা অনেক সহজ।
  • সব নদীরই একটি উৎস আছে কিন্তু কোনো নদী ই সেই উৎসে প্রত্যাবর্তন করে না।
  • বিশালাকার এবং নয়নাভিরাম নদীর মাঝখানে এসে মানুষ কখনোই অসুখী থাকতে পারে না।

নদীর সৌন্দর্য নিয়ে কবিতা

কবিতা পড়তে অনেকেই পছন্দ করে এর এর মাঝে অনেকেই নদী নিয়ে কবিতা সংগ্রহ করতে চায় বা পড়তে চায়। তাই আমরা এই পোস্টে নদী নিয়ে কবিতা তুলে ধরেছি। আশা করা যায় এই কবিতাটি আপনাদের কাছে ভালো লাগবে।

নদী
– রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

  • ওরে তোরা কি জানিস কেউ
    জলে কেন ওঠে এত ঢেউ ।
    ওরা দিবস – রজনী নাচে ,
    তাহা শিখেছে কাহার কাছে ।
    শোন্‌ চলচল্‌ ছলছল্‌
    সদাই গাহিয়া চলেছে জল ।
    ওরা কারে ডাকে বাহু তুলে ,
    ওরা কার কোলে ব’সে দুলে ।
  • সদা হেসে করে লুটোপুটি ,
    চলে কোন্‌খানে ছুটোছুটি ।
    ওরা সকলের মন তুষি
    আছে আপনার মনে খুশি ।
    আমি বসে বসে তাই ভাবি ,
    নদী কোথা হতে এল নাবি ।
    কোথায় পাহাড় সে কোন্‌খানে ,
    তাহার নাম কি কেহই জানে ।
  • কেহ যেতে পারে তার কাছে ,
    সেথায় মানুষ কি কেউ আছে ।
    সেথা নাহি তরু নাহি ঘাস ,
    নাহি পশুপাখিদের বাস ,
    সেথা শবদ কিছু না শুনি ,
    পাহাড় বসে আছে মহামুনি ।
    তাহার মাথার উপরে শুধু
    সাদা বরফ করিছে ধু ধু ।
  • সেথা রাশি রাশি মেঘ যত
    থাকে ঘরের ছেলের মতো ।
    শুধু হিমের মতন হাওয়া
    সেথায় করে সদা আসা – যাওয়া ,
    শুধু সারা রাত তারাগুলি
    তারে চেয়ে দেখে আঁখি খুলি ।
    শুধু ভোরের কিরণ এসে
    তারে মুকুট পরায় হেসে ।
  • সেই নীল আকাশের পায়ে
    সেথা কোমল মেঘের গায়ে
    সেথা সাদা বরফের বুকে
    নদী ঘুমায় স্বপনসুখে ।
    কবে মুখে তার রোদ লেগে
    নদী আপনি উঠিল জেগে ,
    কবে একদা রোদের বেলা
    তাহার মনে পড়ে গেল খেলা ।
    সেখায় একা ছিল দিনরাতি ,
    কেহই ছিল না খেলার সাথি ।
  • সেথায় কথা নাহি কারো ঘরে ,
    সেথায় গান কেহ নাহি করে ।
    তাই ঝুরু ঝুরু ঝিরি ঝিরি ।
    নদী বাহিরিল ধীরি ধীরি ।
    মনে ভাবিল , যা আছে ভবে
    সবই দেখিয়া লইতে হবে ।
    নীচে পাহাড়ের বুক জুড়ে
    গাছ উঠেছে আকাশ ফুঁড়ে ।
  • তারা বুড়ো বুড়ো তরু যত
    তাদের বয়স কে জানে কত ।
    তাদের খোপে খোপে গাঁঠে গাঁঠে
    পাখি বাসা বাঁধে কুটো – কাঠে ।
    তারা ডাল তুলে কালো কালো
    আড়াল করেছে রবির আলো ।
    তাদের শাখায় জটার মতো
    ঝুলে পড়েছে শেওলা যত ।
    তারা মিলায়ে মিলায়ে কাঁধ
    যেন পেতেছে আঁধার – ফাঁদ ।
  • তাদের তলে তলে নিরিবিলি
    নদী হেসে চলে খিলিখিলি ।
    তারে কে পারে রাখিতে ধরে ,
    সে যে ছুটোছুটি যায় সরে ।
    সে যে সদা খেলে লুকোচুরি ,
    তাহার পায়ে পায়ে বাজে নুড়ি ।
    পথে শিলা আছে রাশি রাশি ,
    তাহা ঠেলে চলে হাসি হাসি ।
  • পাহাড় যদি থাকে পথ জুড়ে
    নদী হেসে যায় বেঁকেচুরে ।
    সেথায় বাস করে শিং – তোলা
    যত বুনো ছাগ দাড়ি – ঝোলা ।
    সেথায় হরিণ রোঁয়ায় ভরা
    তারা কারেও দেয় না ধরা ।
    সেথায় মানুষ নূতনতর ,
    তাদের শরীর কঠিন বড়ো ।
    তাদের চোখ দুটো নয় সোজা ,
    তাদের কথা নাহি যায় বোঝা ।
  • তারা পাহাড়ের ছেলেমেয়ে
    সদাই কাজ করে গান গেয়ে ।
    তারা সারা দিনমান খেটে
    আনে বোঝাভরা কাঠ কেটে ।
    তারা চড়িয়া শিখর -‘ পরে
    বনের হরিণ শিকার করে ।
    নদী যত আগে আগে চলে
    ততই সাথি জোটে দলে দলে ।
    তারা তারি মতো , ঘর হতে
    সবাই বাহির হয়েছে পথে ।
  • পায়ে ঠুনু ঠুনু বাজে নুড়ি ,
    যেন বাজিতেছে মল চুড়ি ।
    গায়ে আলো করে ঝিকিঝিক ,
    যেন পরেছে হীরার চিক ।
    মুখে কলকল কত ভাষে
    এত কথা কোথা হতে আসে ।
    শেষে সখীতে সখীতে মেলি
    হেসে গায়ে গায়ে হেলাহেলি ।
  • শেষে কোলাকুলি কলরবে
    তারা এক হয়ে যায় সবে ।
    তখন কলকল ছুটে জল —
    কাঁপে টলমল ধরাতল ,
    কোথাও নীচে পড়ে ঝরঝর —
    পাথর কেঁপে ওঠে থরথর ,
    শিলা খান্‌ খান্‌ যায় টুটে —
    নদী চলে পথ কেটে কুটে ।
    ধারে গাছগুলো বড়ো বড়ো
    তারা হয়ে পড়ে পড়ো – পড়ো ।
  • কত বড়ো পাথরের চাপ
    জলে খসে পড়ে ঝুপঝাপ ।
    তখন মাটি – গোলা ঘোলা জলে
    ফেনা ভেসে যায় দলে দলে ।
    জলে পাক ঘুরে ঘুরে ওঠে ,
    যেন পাগলের মতো ছোটে ।
    শেষে পাহাড় ছাড়িয়ে এসে
    নদী পড়ে বাহিরের দেশে ।
  • হেথা যেখানে চাহিয়া দেখে
    চোখে সকলি নূতন ঠেকে ।
    হেথা চারি দিকে খোলা মাঠ ,
    হেথা সমতল পথঘাট ।
    কোথাও চাষিরা করিছে চাষ ,
    কোথাও গোরুতে খেতেছে ঘাস ।
    কোথাও বৃহৎ অশথ গাছে
    পাখি শিস দিয়ে দিয়ে নাচে ।
  • কোথাও রাখাল ছেলের দলে
    খেলা করিছে গাছের তলে ।
    কোথাও নিকটে গ্রামের মাঝে
    লোকে ফিরিছে নানান কাজে ।
    কোথাও বাধা কিছু নাহি পথে ,
    নদী চলেছে আপন মতে ।
    পথে বরষার জলধারা
    আসে চারি দিক হতে তারা ,
    নদী দেখিতে দেখিতে বাড়ে ,
    এখন কে রাখে ধরিয়া তারে ।
  • তাহার দুই কূলে উঠে ঘাস ,
    সেথায় যতেক বকের বাস ।
    সেথা মহিষের দল থাকে ,
    তারা লুটায় নদীর পাঁকে ।
    যত বুনো বরা সেথা ফেরে
    তারা দাঁত দিয়ে মাটি চেরে ।
    সেথা শেয়াল লুকায়ে থাকে ,
    রাতে হুয়া হুয়া করে ডাকে ।
  • দেখে এইমতো কত দেশ ,
    কে বা গনিয়া করিবে শেষ ।
    কোথাও কেবল বালির ডাঙা ,
    কোথাও মাটিগুলো রাঙা রাঙা ,
    কোথাও ধারে ধারে উঠে বেত ,
    কোথাও দুধারে গমের খেত ।
    কোথাও ছোটোখাটো গ্রামখানি ,
    কোথাও মাথা তোলে রাজধানী —
    সেথায় নবাবের বড়ো কোঠা ,
    তারি পাথরের থাম মোটা ।
  • তারি ঘাটের সোপান যত ,
    জলে নামিয়াছে শত শত ।
    কোথাও সাদা পাথরের পুলে
    নদী বাঁধিয়াছে দুই কূলে ।
    কোথাও লোহার সাঁকোয় গাড়ি
    চলে ধকো ধকো ডাক ছাড়ি ।
    নদী এইমতো অবশেষে
    এল নরম মাটির দেশে ।
    হেথা যেথায় মোদের বাড়ি
    নদী আসিল দুয়ারে তারি ।
    হেথায় নদী নালা বিল খালে
    দেশ ঘিরেছে জলের জালে ।
  • কত মেয়েরা নাহিছে ঘাটে ,
    কত ছেলেরা সাঁতার কাটে ;
    কত জেলেরা ফেলিছে জাল ,
    কত মাঝিরা ধরেছে হাল ,
    সুখে সারিগান গায় দাঁড়ি ,
    কত খেয়া – তরী দেয় পাড়ি ।
    কোথাও পুরাতন শিবালয়
    তীরে সারি সারি জেগে রয় ।
    সেথায় দু – বেলা সকালে সাঁঝে
    পূজার কাঁসর – ঘণ্টা বাজে ।
  • কত জটাধারী ছাইমাখা
    ঘাটে বসে আছে যেন আঁকা ।
    তীরে কোথাও বসেছে হাট ,
    নৌকা ভরিয়া রয়েছে ঘাট ।
    মাঠে কলাই সরিষা ধান ,
    তাহার কে করিবে পরিমাণ ।
    কোথাও নিবিড় আখের বনে
    শালিক চরিছে আপন মনে ।
  • কোথাও ধু ধু করে বালুচর
    সেথায় গাঙশালিকের ঘর ।
    সেথায় কাছিম বালির তলে
    আপন ডিম পেড়ে আসে চলে ।
    সেথায় শীতকালে বুনো হাঁস
    কত ঝাঁকে ঝাঁকে করে বাস ।
    সেথায় দলে দলে চখাচখী
    করে সারাদিন বকাবকি ।
    সেথায় কাদাখোঁচা তীরে তীরে
    কাদায় খোঁচা দিয়ে দিয়ে ফিরে ।
  • কোথাও ধানের খেতের ধারে
    ঘন কলাবন বাঁশঝাঁড়ে
    ঘন আম – কাঁঠালের বনে
    গ্রাম দেখা যায় এক কোণে ।
    সেথা আছে ধান গোলাভরা ,
    সেথা খড়গুলা রাশ – করা ।
    সেথা গোয়ালেতে গোরু বাঁধা
    কত কালো পাটকিলে সাদা ।
  • কোথাও কলুদের কুঁড়েখানি ,
    সেথায় ক্যাঁ কোঁ ক’রে ঘোরে ঘানি ।
    কোথাও কুমারের ঘরে চাক ,
    দেয় সারাদিন ধরে পাক ।
    মুদি দোকানেতে সারাখন
    বসে পড়িতেছে রামায়ণ ।
    কোথাও বসি পাঠশালা – ঘরে
    যত ছেলেরা চেঁচিয়ে পড়ে ,
    বড়ো বেতখানি লয়ে কোলে
    ঘুমে গুরুমহাশয় ঢোলে ।
  • হেথায় এঁকে বেঁকে ভেঙে চুরে
    গ্রামের পথ গেছে বহু দূরে ।
    সেথায় বোঝাই গোরুর গাড়ি
    ধীরে চলিয়াছে ডাক ছাড়ি ।
    রোগা গ্রামের কুকুরগুলো
    ক্ষুধায় শুঁকিয়া বেড়ায় ধুলো ।
    যেদিন পুরনিমা রাতি আসে
    চাঁদ আকাশ জুড়িয়া হাসে ।
  • বনে ও পারে আঁধার কালো ,
    জলে ঝিকিমিকি করে আলো ।
    বালি চিকিচিকি করে চরে ,
    ছায়া ঝোপে বসি থাকে ডরে ।
    সবাই ঘুমায় কুটিরতলে ,
    তরী একটিও নাহি চলে ।
    গাছে পাতাটিও নাহি নড়ে ,
    জলে ঢেউ নাহি ওঠে পড়ে ।
  • কভু ঘুম যদি যায় ছুটে
    কোকিল কুহু কুহু গেয়ে উঠে ,
    কভু ও পারে চরের পাখি
    রাতে স্বপনে উঠিছে ডাকি ।
    নদী চলেছে ডাহিনে বামে ,
    কভু কোথাও সে নাহি থামে ।
    সেথায় গহন গভীর বন ,
    তীরে নাহি লোক নাহি জন ।
    শুধু কুমির নদীর ধারে
    সুখে রোদ পোহাইছে পাড়ে ।
  • বাঘ ফিরিতেছে ঝোপে ঝাপে ,
    ঘাড়ে পড়ে আসি এক লাফে ।
    কোথাও দেখা যায় চিতাবাঘ ,
    তাহার গায়ে চাকা চাকা দাগ ।
    রাতে চুপিচুপি আসে ঘাটে ,
    জল চকো চকো করি চাটে ।
    হেথায় যখন জোয়ার ছোটে ,
    নদী ফুলিয়ে ঘুলিয়ে ওঠে ।
  • তখন কানায় কানায় জল ,
    কত ভেসে আসে ফুল ফল ।
    ঢেউ হেসে ওঠে খলখল ,
    তরী করি ওঠে টলমল ।
    নদী অজগরসম ফুলে
    গিলে খেতে চায় দুই কূলে ।
    আবার ক্রমে আসে ভাঁটা পড়ে ,
    তখন জল যায় সরে সরে ।
    তখন নদী রোগা হয়ে আসে ,
    কাদা দেখা দেয় দুই পাশে ।
  • বেরোয় ঘাটের সোপান যত
    যেন বুকের হাড়ের মতো ।
    নদী চলে যায় যত দূরে
    ততই জল ওঠে পুরে পুরে ।
    শেষে দেখা নাহি যায় কূল ,
    চোখে দিক হয়ে যায় ভুল ।
    নীল হয়ে আসে জলধারা ,
    মুখে লাগে যেন নুন – পারা ।
  • ক্রমে নীচে নাহি পাই তল ,
    ক্রমে আকাশে মিশায় জল ,
    ডাঙা কোন্‌খানে পড়ে রয় —
    শুধু জলে জলে জলময় ।
    ওরে একি শুনি কোলাহল ,
    হেরি একি ঘন নীল জল ।
    ওই বুঝি রে সাগর হোথা ,
    উহার কিনারা কে জানে কোথা ।
    ওই লাখো লাখো ঢেউ উঠে
    সদাই মরিতেছে মাথা কুটে ।
  • ওঠে সাদা সাদা ফেনা যত
    যেন বিষম রাগের মতো ।
    জল গরজি গরজি ধায় ,
    যেন আকাশ কাড়িতে চায় ।
    বায়ু কোথা হতে আসে ছুটে ,
    ঢেউয়ে হাহা করে পড়ে লুটে ।
    যেন পাঠশালা – ছাড়া ছেলে
    ছুটে লাফায়ে বেড়ায় খেলে ।
  • হেথা যতদূর পানে চাই
    কোথাও কিছু নাই , কিছু নাই ।
    শুধু আকাশ বাতাস জল ,
    শুধুই কলকল কোলাহল ,
    শুধু ফেনা আর শুধু ঢেউ —
    আর নাহি কিছু নাহি কেউ ।
    হেথায় ফুরাইল সব দেশ ,
    নদীর ভ্রমণ হইল শেষ ।
  • হেথা সারাদিন সারাবেলা
    তাহার ফুরাবে না আর খেলা ।
    তাহার সারাদিন নাচ গান
    কভু হবে নাকো অবসান ।
    এখন কোথাও হবে না যেতে ,
    সাগর নিল তারে বুক পেতে ।
  • তারে নীল বিছানায় থুয়ে
    তাহার কাদামাটি দিবে ধুয়ে ।
    তারে ফেনার কাপড়ে ঢেকে ,
    তারে ঢেউয়ের দোলায় রেখে ,
    তার কানে কানে গেয়ে সুর
    তার শ্রম করি দিবে দূর ।
    নদী চিরদিন চিরনিশি
    রবে অতল আদরে মিশি ।

শেষ কথা

আমরা চেষ্টা করেছি আজকের এই পোস্টে নদী নিয়ে উক্তি, স্ট্যাটাস তুলে ধরার। আশা করা যায় আজকের এই পোস্ট থেকে আপনি আপনার কাঙ্খিত উক্তি, স্ট্যাটাস গুলো সংগ্রহ করতে পেরেছেন যদি এই পোস্ট আপনাদের কাছে ভালো লেগে থাকে তাহলে আমাদের ওয়েবসাইট ডিলিট করে দেখতে পারেন বিভিন্ন ধরনের উক্তি রয়েছে যা আপনাদের কাছে ভালো লাগতে পারে।

আরও দেখুনঃ

Leave a Comment