আজকে আমরা কথা বলবো ঘুম না আসার কারন নিয়ে। বাঙালি ঘুম প্রিয় মানুষ। তাই বাংলাদেশের বেশিরভাগ মানুষ ঘুমাতে ভালোবাসে। অনেকেরি ঘুম ভাল হয় না। তাই অনেকে ইন্টারনেটে ঘুম না আসার কারন জানতে চেয়ে অনুসন্ধান করে। আজকের এই পোস্টে আমরা ঘুম না আসার কারন উল্লেখ করেছি। তাই আজকের এই পোস্ট থেকে ঘুম না আসার কারন জেনে নিন। আরও জানতে পারবেন ঘুম না আসলে করনীয়।
Contents
ঘুম না আসার কারন
আপনারা যারা ঘুম না আসার কারন জানার জন্য ইন্টারনেটে অনুসন্ধান করেন। আজকের পোষ্টটি তাদের জন্য। এখানে আপনাদের জন্য ঘুম না আসার কারন দেওয়া হয়েছে। আপনারা এখান থেকে ঘুম না আসার কারন সমুহ জানতে পারবেন।
১। রাতে ঠিকমতো ঘুম না আসার অন্যতম একটি কারণ হচ্ছে— ঘুমাতে যাওয়ার আগে চা, কফি বা নিকোটিন জাতীয় কিছু সেবন করা। সারাদিন কাজের শেষে যদি মনে করেন যে, এগুলো পান করে কিছুটা রিল্যাক্স হবেন, তা হলে আপনি ভুল ভাবছেন। বরং সেটিই হতে পারে আপনার রাতে ঠিকমতো ঘুম না হওয়ার কারণ।
২।দীর্ঘস্থায়ী শারীরিক সমস্যা যেমন- শ্বাসকষ্ট, অ্যাসিডিটি, দীর্ঘমেয়াদি ব্যথা, হরমোন ও থায়রয়েড ও স্নায়বিক সমস্যা যেমন- পারকিনসন ইত্যাদি থেকে ঘুমের সমস্যা দেখা দেয়।
৩।গবেষণা থেকে জানা গেছে, গর্ভাবস্থায় প্রায় ৭৮ শতাংশেরই নিদ্রাহীনতার সমস্যা দেখা দেয়। গর্ভধারণের তিন মাসের মাথায় এই ধরনের সমস্যা হয়। কারণ এই সময় সন্তান বৃদ্ধি পায় এবং শরীরের ওপর চাপ সৃষ্টি হয়।
৪।মানসিক চাপ ঘুমের সমস্যা সৃষ্টি করে। উদ্বেগ ও হতাশা অনিদ্রার সৃষ্টি করে। এমনটা দেখা দিলে থেরাপি নেওয়ার প্রয়োজন। অতিরিক্ত ক্যাফেইন, নিকোটিন ও অ্যাল্কোহল ঘুমের সমস্যা সৃষ্টি করে। দীর্ঘস্থায়ী স্বাস্থ্য সমস্যার ঝুঁকি থাকে।
৫।উদ্বেগ জনিত সমস্যার কারণে দেওয়া ওষুধ, উচ্চ র*ক্ত চাপের জন্য আলফা, বেটা এবং আর্থ্রাইটিসের কারণে দেওয়া স্টেরয়েডের জন্য অনিদ্রার সমস্যা দেখা দিতে পারে।
ঘুম না আসলে কোন দোয়া পড়তে হয়
আজকে আমরা আমাদের পোস্টে ঘুম না আসলে কন দোয়া পড়তে হয় তা উল্লেখ করেছি। এখান থেকে আপনারা ঘুম না আসলে কন দোয়া পড়তে হয় তা জানতে পারবেন। প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ঘোষিত একটি দোয়া রয়েছে যা ঘুমের আগে পড়লে ঘুম চলে আসবে। যে দোয়া পড়তে তিনি সাহাবি হজরত খালেদ ইবনে ওয়ালিদকে পরামর্শ দিয়েছিলেন। হাদিসে এসেছে-
হজরত সুলাইমান ইবনে বুরাইদা রাহমাতুল্লাহি আলাইহি বর্ণনা করেন, হজরত খালেদ ইবনে ওয়ালিদ আল-মাখজুমি রাদিয়াল্লাহু আনহু রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে অভিযোগ দায়ের করে বলেন, ‘হে আল্লাহর রাসুল! দুঃশ্চিন্তা ও মানসিক চাপের কারণে আমি রাতে ঘুমাতে পারি না।
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাকে বললেন, যখন তুমি বিছানায় আশ্রয় গ্রহণ করো (ঘুমাতে যাও) তখন বলো-
اللَّهُمَّ رَبَّ السَّمَوَاتِ السَّبْعِ وَمَا أَظَلَّتْ وَرَبَّ الأَرَضِينَ وَمَا أَقَلَّتْ وَرَبَّ الشَّيَاطِينِ وَمَا أَضَلَّتْ كُنْ لِي جَارًا مِنْ شَرِّ خَلْقِكَ كُلِّهِمْ جَمِيعًا أَنْ يَفْرُطَ عَلَىَّ أَحَدٌ مِنْهُمْ أَوْ أَنْ يَبْغِيَ عَلَىَّ عَزَّ جَارُكَ وَجَلَّ ثَنَاؤُكَ وَلاَ إِلَهَ غَيْرُكَ وَلاَ إِلَهَ إِلاَّ أَنْتَউচ্চারণ : আল্লাহুম্মা রাব্বাস সামাওয়াতিস সাবয়ি ওয়া মা আজাল্লাত ওয়া রাব্বাল আরদিনা ওয়া মা আকাল্লাত ওয়া রাব্বাশ শায়াত্বিনি ওয়া মা আদাল্লাত কুন লি ঝারাম মিন শাররি খালক্বিকা কুল্লিহিম ঝামিআ। আইঁইয়াফরুত্বা আলাইয়্যা আহাদুম মিনহুম আও আইঁইয়াবগিয়া আলাইয়্যা আয্যা ও ঝাল্লা ছানাউকা ওয়া লা ইলাহা গাইরুকা ও লা ইলাহা ইল্লা আংতা।’ (মুসলিম, মিশকাত)
অর্থ : “হে আল্লাহ! সাত আকাশের প্রভু এবং যার ওপর তা ছায়া বিস্তার করেছে, সাত জমিনের প্রভু এবং যা কিছু তা উত্থাপন করেছেন, আর শয়তানদের প্রতিপালক এবং এরা যাদেরকে বিপথগামী করেছে!
তুমি আমাকে তোমার সব সৃষ্টিকুলের অনিষ্টতা থেকে রক্ষার জন্য আমার প্রতিবেশী হয়ে যাও, যাতে সেগুলোর কোনোটি আমার ওপর বাড়াবাড়ি করতে না পারে অথবা আমার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করতে না পারে। সম্মানিত তোমার প্রতিবেশী, সুমহান তোমার প্রশংসা। তুমি ছাড়া কোন ইলাহ নেই, তুমি ব্যতিত আর কোনো মাবুদ নেই।’
হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, যদি কেউ ঘুমানোর সময় আয়াতুল কুরসি পাঠ করে, তাহলে শয়তান তার কাছে আসতে পারে না।’ (বুখারি, মুসলিম, মিশকাত)
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে প্রচন্ড মানসিক চাপ ও অস্বস্তিতে এ দোয়া পড়ে ঘুম লাভের তাওফিক দান করুন। আর ঘুমের মাধ্যমে শারীরিক প্রশান্তি লাভে হাদিসের আমল যথাযথ করার তাওফিক দান করুন। করুন। আমিন।
ঘুম না হলে কি রোগ হয়
অনেকেরি ঘুম কম হয় । তারা ঘুম কম হলে বা না হলে কোন রগ হয় কিনা তা জানার জন্য ইন্টারনেট এ অনুসন্ধান করে থাকে। তাদের জন্য এখানে ঘুম না হলে কোন রোগ হয় কি না তা দেওয়া হল –
১. পর্যাপ্ত ঘুম না হলে বা কম হলে উচ্চ র*ক্তচাপের সমস্যা বাড়তে পারে। চিকিৎসকদের মতে, ঘুম না হলে শরীরের ‘লিভিং অরগানিজমগুলো ঠিকমতো কাজ করতে পারে না। নষ্ট হতে পারে শরীরের হরমোনের ভারসাম্য। বাড়তে পারে উচ্চ র*ক্তচাপ ও হাইপার টেনশন।
২. ঘুম কম হলে হার্টের সমস্যা হতে পারে। ঘুমের সময় হৃৎপিণ্ড ও র*ক্তনালি বিশ্রাম পায়। তাই ঘুম কম হলে প্রতিনিয়ত কার্ডিওভাসকুলার সমস্যা বাড়তে থাকে। ফলে হার্টের সমস্যা বাড়তে থাকে।
৩. ঘুম পর্যাপ্ত না হলে ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বাড়ে। দীর্ঘদিন রাতে না ঘুমানো বা কম ঘুমানোর ফলে শরীরে ইনসুলিন উৎপাদন ব্যাহত হয়। তাই ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বাড়ে।
৪. ঘুম শরীরের ক্ষতি পূরণ ও শক্তি সঞ্চয়ের একটি পন্থা। তাই ঘুম কম হলে তা শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা নষ্ট হয়। আমরা যখন ঘুমাই, তখন আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার জন্য দায়ী ‘লিভিং অরগানিজম’ (Living organisms)। কিন্তু আমরা না ঘুমালে এই ‘লিভিং অরগানিজম’গুলো কাজ করতে পারে না। ফলে ক্রমশ আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমতে থাকে।
৫. মস্তিষ্কে ওরেক্সিন নামের একটি নিউরোট্রান্সমিটার আছে, যা মস্তিষ্ককে সচল রাখতে সহায়তা করে। প্রতিদিন পর্যাপ্ত ঘুম না হলে ওরেক্সিন উৎপাদনের গতি মন্থর হয়ে যায়।
৬. প্রতিদিন পর্যাপ্ত ঘুম না হলে বাড়তে পারে হজমের সমস্যা। না ঘুমালে শরীরের পাচন ক্রিয়ায় সাহায্যকারী অঙ্গ-প্রত্যঙ্গগুলো সঠিকভাবে কাজ করতে পারে না। ফলে খাবার হজমে সহায়ক পাচক রসগুলো উপযুক্ত মাত্রায় নিঃসরণে বাধা পায়।
রাতে ঘুম ভেঙ্গে যাওয়ার কারন
যাদের রাতে ঘুম ভেঙ্গে যায়। তারা এখান থেকে রাতে ঘুম ভেঙ্গে যাওয়ার কারন ও প্রতিকার জানতে পারবেন। তাই নিচ থেকে জেনে নিন রাতে ঘুম ভেঙ্গে যাওয়ার কারন ও তার প্রতিকার –
- ঘর বেশি গরম বা ঠাণ্ডা হলে, কোনো শব্দ হলে কিংবা অজানা উৎস থেকে আলো আসলেই ঘুম ভেঙে যেতে পারে। তাই রাতে নির্ভেজাল ঘুম পেতে ঘর হওয়া চাই আরামদায়ক মাত্রায় ঠাণ্ডা, নীরব এবং অন্ধকার।
- দুঃস্বপ্ন, হৃদস্পন্দন বেড়ে যাওয়ার কারণে ঘুম ভাঙতে পারে।
- ঘুমের সমস্যা, হৃদস্পন্দন বেড়ে যাওয়া, অতিরিক্ত ঘাম হওয়া, অস্বস্তি, আতঙ্ক ইত্যাদি সাধারণ কিছু ঘটনা যা অতিরিক্ত ‘থাইরক্সিন’য়ের ফলাফল।
- স্লিপ অ্যাপনিয়া’ বা অনিদ্রা একটি অতি সাধারণ সমস্যা বর্তমান সময়ে, যাতে সব বয়সের মানুষই আক্রান্ত হতে পারেন। এই সমস্যায় ঘুমের মধ্যে রোগীর শ্বাস-প্রশ্বাসের গতি কমে যায় কিংবা একেবারে বন্ধ হয়ে যায়। ‘কন্টিনিউয়াস পজিটিভ এয়ারওয়ে প্রেশার’ (সিপিএপি) হল এই সমস্যার চিকিৎসা পদ্ধতি।
- রেস্টলেস লেগ সিন্ড্রোম’ নামক এই সমস্যায় পায়ে অস্বস্তিকর অনুভুতি হতে থাকে অনবরত এবং পা নড়াচড়া না করে থাকা যায়। সন্ধ্যায় কিংবা রাতে এমনকি ঘুমের মাঝেও এই সমস্যা আক্রমণ করতে পারে। শরীরে লৌহের অভাবেও এই সমস্যা দেখা দিতে পারে। পেশি শিথিল করে এমন কাজ যেমন গরম পানি দিয়ে গোসল করা এই সমস্যার সমাধান দিতে পারে।
ঘুম না আসলে করনীয়
যাদের ঘুম আসে না তাদের ঘুম না আসলে করনীয় সম্পর্কে জানা খুবি প্রয়োজন। তাই আজকের পোস্টে আমরা ঘুম না আসলে করনীয় সম্পর্কে আলছনা করেছি। খুব বেশি ঘুমের সমস্যা দেখা দিলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। থেরাপি, জীবন যাত্রার পরিবর্তন এমনকি প্রাকৃতিক কিছু কৌশল অনুসরণ করেও অনিদ্রার সমস্যা নিয়ন্ত্রণ করা যায়।
- প্রাকৃতিক উপায়: ঘুমানোর আগে আরামাদায়ক পরিবেশ সৃষ্টি করুন ও মন ভালো রাখে এমন কাজ করুন। রাতে ঘুমানো আগে মোবাইল ব্যবহার না করে আরাম করে এক কাপ ক্যামোমাইল চা পান করুন, আরাম অনুভূত হবে।
- নিয়মিত শরীরচর্চা: গবেষণায় দেখা গেছে, সপ্তাহে পাঁচ দিন কমপক্ষে ৩০ মিনিট শরীরচর্চা করা হলে ঘুমের মান উন্নত হয়।
- ধ্যান: ধ্যান মানুষের মনকে শান্ত রাখে ও মানসিক চাপ কমাতে সাহায্য করে। নিয়ম মেনে ধ্যান করা হলে ঘুম ভালো হয়।
সর্বশেষ কথা
আশা করি আজকের পোস্ট এর সাহায্যে সবাই ঘুম না আসার কারন এবং ঘুম না আলসে করনীয় সম্পর্কে জানতে পেরেছেন। আপনাদের যদি ঘুম না আসার কারন এবং ঘুম না আলসে করনীয় পোস্ট ভালো লেগে থাকে। তাহলে অবশ্যই সবার সাথে শেয়ার করবেন। যাতে সবাই ঘুম না আসার কারন এবং ঘুম না আলসে করনীয় সম্পর্কে জানতে পারে। সাথে থাকার জন্য সবাইকে ধন্যবাদ।
আরও দেখুন