অনেকে আছেন যারা দুধের উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে জানতে চান। তাদের জন্য আজকের পোস্টে তুলে ধরা হয়েছে দুধের উপকারিতা ও অপকারিতা। আজকে আমরা কথা বলবো দুধের উপকারিতা ও অপকারিতা নিয়ে। বাঙালি দুধ প্রিয় মানুষ। তাই বাংলাদেশের বেশিরভাগ মানুষ দুধ খেতে ভালোবাসে। তাই অনেকে ইন্টারনেটে দুধের উপকারিতা ও দুধ খাওয়ার সঠিক সময় জানতে চেয়ে অনুসন্ধান করে। আজকের এই পোস্টে আমরা শিশুদের দুধ খাওয়ার উপকারিতা উল্লেখ করেছি। তাই আজকের এই পোস্ট থেকে দুধ উপকারিতা জেনে নিন।
Contents
গরুর দুধের উপকারিতা ও অপকারিতা
দুধের মধ্যে রয়েছে বিভিন্ন ভিটামিন। তাই এটা আমাদের শরীর গঠনে ভূমিকা রাখে। তাই আমাদের মাঝে অনেকেই আছে যারা সব সময় দুধ খেতে ভালোবাসে। তাদের জন্য আজকের এই পোস্ট এ দুধ খাওয়ার উপকারিতা তুলে ধরা হয়েছে।
১. ক্যালসিয়াম দাঁত ও হাড়ের গঠন মজবুত করে। দুধের ক্যালসিয়াম ও ভিটামিন ডি হাড় ও দাঁতে শোষিত হয়ে এদের গড়ন দৃঢ় করে। প্রতিদিন দুধ পান করলে দাঁত ক্ষয়ে যাওয়া, দাঁতে পোকা ও হলুদ ছোপ পড়া, হাড় ক্ষয়ের মতো সমস্যা থেকে মুক্তি মিলবে।
২. প্রতিদিন এক গ্লাস দুধ পানে অন্যান্য খাবারের চাহিদা অনেকাংশে মিটে যায়। নাস্তার সময় দুধ পান করলে অনেক সময় ধরে সেটা পেটে থাকে। ফলে ক্ষুধা কম থাকে। এছাড়া দুধ পানের ফলে দেহের অনেক ধরণের পুষ্টি চাহিদা পূরণ হয়। তাই ওজন বেড়ে যাওয়ার সমস্যায় ভুগলে এবং স্বাস্থ্যসম্মত উপায়ে কম সময়ে ওজন কমাতে চাইলে, প্রতিদিনের ডায়েটে দুধ রাখুন।
৩. দুধে থাকা ভিটামিন ও মিনারেল ফিটনেস বাড়ায় ও মানসিক চাপ দূর করতে সহায়তা করে। দুধ পানে ঘুমের উদ্রেক হয়, যার ফলে মস্তিষ্ক শিথিল থাকে ও মানসিক চাপমুক্ত হয়। সারাদিনের মানসিক চাপ দূর করে শান্তির ঘুম নিশ্চিত করতে প্রতিদিন রাতে এক গ্লাস কুসুম গরম দুধ পান করুন।
৪. দুধ শরীর রি-হাইড্রেট করতে সাহায্য করে। ডিহাইড্রেশনের সমস্যায় ভুগলে এক গ্লাস দুধ পান করে নিন। সুস্থ বোধ করবেন।
৫. কোষ্ঠকাঠিন্য সমস্যা থাকলে এবং দুধজাতীয় খাবারে অ্যালার্জি না থাকলে রাতে ঘুমনোর আগে প্রতিদিন এক গ্লাস গরম দুধ পান করুন।
৬. শরীরে ভিটামিন ডি ও ক্যালসিয়ামের মাত্রা ঠিক না থাকলে প্রি মেনস্ট্রুয়াল সিন্ড্রোম হতে পারে। তাই পিরিয়ডের সময় পেট ব্যথা ও অ্যাসিডিটির সমস্যা হলে খেয়ে নিন এক গ্লাস দুধ।
৭. দুধে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন যা মাংশপেশির গঠনে সহায়তা করে ও মাংশপেশির আড়ষ্টতা দূর করে। নিয়মিত ব্যায়ামের ক্ষেত্রে প্রতিদিন এক থেকে দুই গ্লাস দুধ খুবই উপকারী। শিশুদের মাংশপেশির গঠন উন্নত করতেও প্রতিদিন দুধ পান করা উচিত।
৮. প্রতিদিন আমরা এমন অনেক ধরণের খাবার খাই যার ফলে অ্যাসিডিটি হয় ও বুক জ্বালাপোড়া করে। এক্ষেত্রে সবচেয়ে সহজ সমাধান, প্রতিদিন দুধ পান। দুধ পাকস্থলী ঠাণ্ডা রাখে ও বুক জ্বালাপোড়ার সমস্যা দূর হয়।
৯. দুধে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ও মিনারেল রয়েছে, যা দেহের ইমিউন সিস্টেম উন্নত করে ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। প্রতিদিন দুধ পানে ত্বক নরম, কোমল ও মসৃণ হয়।
১০. দুধ কোলেস্টোরল নিয়ন্ত্রণে রাখে ও র*ক্ত পরিষ্কারের পাশাপাশি র*ক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি করে। সূত্র: মেডিকেল নিইজ টুডে।
দুধের পুষ্টিগুণ
দুধের সবটুকুই অপরিহার্য পুষ্টি গুণে ভরপুর। শিশু ও প্রাপ্ত বয়স্ক থেকে বৃদ্ধ বয়স পর্যন্ত সবারই প্রতিদিন এক গ্লাস দুধ পান করা উচিৎ।
- দুধ ভিটামিন ডি এবং ক্যালসিয়ামের গুরুত্বপূর্ণ উৎস হিসাবে বিবেচিত। দুধে রয়েছে প্রোটিন, কার্বোহাইড্রেট, চর্বি, ওমেগা – থ্রী, এছাড়া রয়েছে এছাড়া রয়েছে ওমেগা- সিক্স সহ অনেক গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। ভিটামিন এবং খনিজ পদার্থ উৎসের ভিত্তিতে দুধকে বলা হয় সুপার ফুড।
- এতে রয়েছে সব ধরনের প্রয়োজনীয় ভিটামিন এবং খনিজ পদার্থ যা শরীরের জন্য অপরিহার্য।
- এতে প্রচুর পরিমাণ vitamin B-12 রয়েছে, যা মস্তিষ্কের জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয়।
- অধিকিন্তু, এটি রিবোফ্লেভিনের একটি অতীব গুরুত্বপূর্ণ উৎস যা শরীরকে কর্মক্ষম থাকতে সহায়তা করে। এতে রয়েছে ফসফরাস, যা দেহের টিস্যু এবং কোষ মেরামতের জন্য দারূণ উপকারী।
প্রতিদিন গরুর দুধ খেলে কি হয়
- কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে রাখে।
- ঘুম ভালো হয়।
- হাড় মজবুত করে।
- সারাদিনের জন্য শক্তি অর্জন হয়।
- ত্বক সুন্দর করে
বাচ্চাদের গরুর দুধ খাওয়ানোর পদ্ধতি
কিছু বাচ্চাকে গরুর দুধ খাওয়ান শুরু করাতে তেমন কোন সমস্যা হয় না। আবার কেউ কেউ শুরুতে দুধ খেতে না চাইতে পারে কারন এর স্বাদ, বর্ণ মায়ের দুধের থেকে ভিন্ন হয়। যদি এমন হয় তবে শুরুতে বুকের দুধ বা ফর্মুলার সাথে গররু দুধ মিশিয়ে চেষ্টা করতে পারেন। এর পর আস্তে আস্তে তাতে গরুর দুধের অনুপাত বাড়াতে থাকুন।
- বাচ্চার জন্যে অন্যান্য খাবার তৈরিতে গরুর দুধ ব্যবহার করতে পারেন। এছাড়াও দুধ থেকে তৈরি বিভিন্ন খাদ্যদ্রব্য, যেমন পনির, দই, ইত্যাদি শিশুকে খাওয়াতে পারেন।
ছাগলের দুধের উপকারিতা
(১) হার্ট ভালো রাখে।
(২) ছাগলের দুধের পুষ্টিগুণ মায়ের দুধের কাছাকাছি।
(৩) ছাগলের দুধে এলার্জি প্রবণতা কম।
(৪) উচ্চ ক্যালসিয়াম সমৃদ্ধ।
(৫) ত্বকের যত্নে ছাগলের দুধ উপকারি।
(৬) ছাগলের দুধ ল্যাকটোজ অসহিষ্ণুতা।
(৭) ছাগলের দুধ হজম করা যায় সহজেই।
(৮) ছাগলের দুধে এলার্জি নিয়ন্ত্রণ করে।
(৯) হাড়ের গঠনকে শক্তিশালী করে।
(১০) ছাগলের দুধে কোলেস্টেরল কম।
(১১) বাড়ন্ত শিশুদের জন্য উপকারী
দুধের অপকারিতা
১। যাদের কিডনিতে পাথর হয়েছে তাদের দুধের ব্যাপারে সাবধানতা অবলম্বন করা উচিত। কিডনির পাথরের একটি উপাদান হচ্ছে ক্যালসিয়াম। আর দুধে প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম থাকে। তাই এ ধরনের রোগীর উচিত দুধ কম খাওয়া এবং রাতে একেবারেই দুধ না খাওয়া।
২। যাদের শরীরে ‘ল্যাক্টেজ’ (lactase) নামক এনজাইমের অভাব আছে, তাদের উচিত দুধ খাওয়ার ব্যাপারে সাবধান হওয়া
৩। যাদের ক্ষুদ্রান্ত্রের প্রথম অংশের আলসার তথা ডিউডেনাল আলসার আছে বা যাদের ‘কোলেসিসটিটিস’ (cholecystitis) তথা গলব্লাডারের সমস্যা আছে তাদের উচিত দুধ খাওয়ার ব্যাপারে সাবধান হওয়া। কারণ, দুধ এই দুই ধরনের রোগীর রোগ আরো বাড়িয়ে দিতে পারে।
৪। যাদের পেটে অপারেশান করা হয়েছে, তাদের দুধ খাওয়া ততদিন বারণ, যতদিন না তারা পুরোপুরি সুস্থ হয়ে উঠছেন। অর্থাৎ ঘা শুকিয়ে গেলে, তখন দুধ খাওয়া যাবে।
৫। যাদের শরীরে আয়রন বা লোহার অভাব পূরণের জন্য নিয়মিত আয়রন ট্যাবলেট খাচ্ছেন, তাদের উচিত দুধ না খাওয়া।
সর্বশেষ কথা
আশা করি আজকের পোস্ট এর সাহায্যে সবাই দুধের উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে জানতে পেরেছেন। আপনাদের যদি দুধের উপকারিতা ও অপকারিতা পোস্ট ভালো লেগে থাকে। তাহলে অবশ্যই সবার সাথে শেয়ার করবেন। যাতে সবাই দুধ খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে জানতে পারে। সাথে থাকার জন্য সবাইকে ধন্যবাদ।
আরও দেখুনঃ