কক্সবাজার দর্শনীয় স্থান, যাওয়ার উপযুক্ত সময় ও বিস্তারিত তথ্য

কক্সবাজার জেলা বাংলাদেশের মধ্যে অন্যতম একটি জনপ্রিয় জেলা। বর্তমানে বাংলাদেশের সকল জেলা থেকে অসংখ্য মানুষ প্রতিদিন কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত ভ্রমণ করে থাকে। অন্যদিকে অনেকেই জানতে চায় কক্সবাজার কিসের জন্য বিখ্যাত। তাই আজকের এই পোস্টে কক্সবাজার থেকে ইনানী ভাড়া ও কক্সবাজার দর্শনীয় স্থান সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে।

আপনি হয়তো আপনার বন্ধু ও আপনার পরিবার নিয়ে কক্সবাজার জেলায় বিভিন্ন জনপ্রিয় দর্শনীয় স্থানে ভ্রমণ করতে চাচ্ছেন। কিন্তু কক্সবাজার জেলার বিভিন্ন জনপ্রিয় ভ্রমণ স্পট সম্পর্কে আপনার তেমন জানাশোনা নেই। তাই আজকের এই পোষ্টের সাহায্যে আপনারা খুব সহজেই কক্সবাজার ভ্রমণ করার দর্শনীয় স্থান সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য জানতে পারবেন। কক্সবাজার বিনোদন পার্ক সহ বিভিন্ন সমুদ্র সৈকতের বিস্তারিত তথ্য আজকের পোস্ট দেওয়া হয়েছে। অনেকেই আছেন যারা কোন বাজেটে কক্সবাজার বিভিন্ন জনপ্রিয় জায়গা গুলো ভ্রমণ করতে চান। তাদের জন্য আজকের এই পোস্টে কক্সবাজার দর্শনীয় স্থান সকল তথ্য দেয়া হয়েছে।

কক্সবাজার দর্শনীয় স্থান

কক্সবাজারের দূরত্ব চট্টগ্রাম থেকে ১৫২ কিলোমিটার ও ঢাকা থেকে ৪১৪ কিলোমিটার। বিশ্বের সবচেয়ে দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকত ছাড়াও এটি বাংলাদেশের সবচাইতে জনপ্রিয় একটি দর্শনীয় স্থান ও স্থাপনা। শুধুমাত্র দেশ নয় বিভিন্ন দেশের মানুষ বর্তমানে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত ভ্রমণ করে থাকে। তাই আপনাদেরকে জানাতে চাই, কক্সবাজারের জনপ্রিয় জায়গা গুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল- লাবনী বীচ, সুগন্ধা বীচ, কলাতলী বীচ, হিমছড়ি, ইনানী বিচ, মেরিন রোড, সেন্ট মার্টিন, রাম বৌদ্ধ বিহার, মহেশখালী, সোনাদিয়া দ্বীপ, কুতুবদিয়া দ্বীপ ইত্যাদি। কক্সবাজারের দর্শনের স্থান ও ঐতিহাসিক স্থাপনা সমূহের পরিপূর্ণ বিস্তারিত ভ্রমণ তথ্য পাবেন এখানে। কিভাবে এসব জায়গায় যাবেন ও কোথায় থাকবেন খরচ কেমন পড়বে ও ট্যুর প্ল্যান এর বিস্তারিত সকল তথ্য নিচে দেয়া হয়েছে।

কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত

কক্সবাজার ভ্রমণ করলে সবচাইতে জনপ্রিয় জায়গা হচ্ছে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত। ১২০ কিলোমিটার দৈর্ঘ্য বিশিষ্ট অখন্ড এই সাগর সৈকত দেশী বিদেশী সহ বিভিন্ন পর্যটকদের সাগরের মনোমুদ্ধ কর ঢেউ ও চারপাশের দারুন পরিবেশ সবাইকে আবদ্ধ করে রাখে। যারা কক্সবাজার ভ্রমণ করবেন তাদের জন্য যাওয়ার উপায় ও সেখানে থাকার বিস্তারিত তথ্য দেয়া হয়েছে।

কক্সবাজার যাওয়ার উপযুক্ত সময়

অনেকেই আছেন যারা সিজনাল সময়ে কক্সবাজার ভ্রমণ করতে চান। আমার মতে কক্সবাজার ভ্রমণের সবচাইতে দারুন সময় হচ্ছে শীতের শুরুতেই অর্থাৎ আপনি বছরের অক্টোবর মাসের থেকে কক্সবাজার ভ্রমণ করতে পারেন। কারণ এই সময় কক্সবাজারে বড় সকল জাহাজ ও শীপ চালু হয়ে থাকে। যেখানে কক্সবাজার গিয়ে আপনি খুব সহজেই সেখান থেকে সেন্টমার্টিন ভ্রমণ করতে পারবেন।

কক্সবাজার -এ যা যা করতে পারেন

ঢাকা থেকে কক্সবাজার সড়ক, রেলওয়ে ও বিমানের মাধ্যমে কক্সবাজার যেতে পারবেন। ঢাকা থেকে কক্সবাজার গামী বিভিন্ন বাস রয়েছে যাদের মধ্যে সৌদিয়া, এস আলম মার্সিডিজ ব্রেঞ্জ, গ্রীন লাইন হানিফ এন্টারপ্রাইজ, শ্যামলী পরিবহন, সোহাগ পরিবহন, এস আলম পরিবহন মর্ডান লাইন ইত্যাদি বাস উল্লেখযোগ্য। যেখানে বাসগুলোর শ্রেণী বেদে প্রতি সিটের ভাড়া 900 থেকে 2000 টাকা পর্যন্ত রয়েছে।

ঢাকা থেকে সরাসরি কক্সবাজার যাওয়ার কোন ট্রেন এখনো চালু হয়নি। তবে খুব শীঘ্রই ঢাকা থেকে কক্সবাজার যাওয়ার ট্রেন চালু হবে। ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম পর্যন্ত আপনাকে ট্রেনের মাধ্যমে যেতে হবে। ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম যাওয়ার জন্য যেসব আন্তঃনগর ট্রেন রয়েছে তাদের মধ্যে হচ্ছে সোনার বাংলা সুবর্ণ এক্সপ্রেস তিরনা নিশীথা মহানগর প্রভাতী গোধূলি ও চটলা মেইল ট্রেনে যাতায়াত করা যায়। পরবর্তীতে চট্টগ্রামের নতুন ব্রিজ এরিয়া থেকে দামপাড়া বাস স্ট্যান্ডে বাস পাবেন সেখানে। সেখানেও একেক গাছে একেকরকম ভাড়া নিবে অর্থাৎ 380 থেকে 550 টাকা। অন্যদিকে আপনি যদি চান তাহলে খুব সহজেই চট্টগ্রাম থেকে মাইক্রোবাস রিজার্ভ করে কক্সবাজার যেতে পারবেন।

বাংলাদেশ বিমান সহ নভোএয়ার ইউ এস বাংলা এয়ারলাইন্স ঢাকা থেকে সরাসরি কক্সবাজার ফ্লাইট পরিচালনা করে। যেখানে ঢাকা থেকে কক্সবাজার বিমান ভাড়া ৪,৫৯৯ থেকে ১২০০০ টাকা।

সেন্টমার্টিন

কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের পরেই জনপ্রিয় জায়গা হচ্ছে সেন্ট মার্টিন প্রবাল দ্বীপ। যারা কক্সবাজার ভ্রমণ করেছেন তাদের বেশিরভাগ মানুষ সেন্ট মার্টিন ভ্রমণ করেছেন। সেন্টমার্টিন বাংলাদেশের মূল ভূখণ্ডের সর্ব দক্ষিনে অবস্থান করছে। এটি কক্সবাজার জেলা শহর থেকে প্রায় ১২০ কিলোমিটার দূরে ১৭ বর্গ কিলোমিটারের একটি ক্ষুদ্র দ্বীপ। অনেকে হয়তো সেন্ট মার্টিনকে নারিকেল জিঞ্জিরা নামেও চিনে থাকেন। সেন্ট মার্টিন এর চারপাশে অপূর্ব প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও চারপাশে নীল পানির আকর্ষণীয় জায়গা। সারি সারি নারিকেল গাছ ও মাঝখানের এই দিকটা সকল মানুষের মন কেড়েছে।

মহেশখালী

কক্সবাজার জেলার অন্যতম ভ্রমণ স্পট হচ্ছে মহেশখালী জেলার একটি দ্বীপ। কক্সবাজার থেকে এটি প্রায় ১২ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। এখানে ১৫৫৯ সালের প্রচন্ড ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাসের কারণে মূল ভূখণ্ড থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে এই দ্বীপের সৃষ্টি হয়। প্রতি বছর অসংখ্য মানুষ এই জায়গায় ভ্রমণ করে থাকে। আমাদের জানামতে বৌদ্ধ সেন মহেশ্বর থেকে প্রায় ২০০ বছর আগে এই জায়গার নামকরণ করা হয়। অন্যদিকে এই মহেশখালী উপজেলায় সোনাদিয়া মাতারবাড়ি ও ধলঘাটা নামে তিনটি ছোট ছোট দ্বীপ রয়েছে। তাই আপনি চাইলে কক্সবাজার থেকে চার থেকে পাঁচ ঘন্টা সময় ব্যয় করলে মহেশখালী দ্বীপে ঘুরে আসতে পারবেন।

ইনানী সমুদ্র সৈকত

অসংখ্য মানুষ রয়েছে যারা কক্সবাজার ভ্রমণ করার পর ইনানী সমুদ্র সৈকত যেতে চায়। তাদেরকে জানাতে চাই কক্সবাজার থেকে প্রায় 23 কিলোমিটার দূরে অবস্থিত ইনানী সমুদ্র সৈকত। অন্যদিকে আরও জেনে খুশি হবেন যে ভাটার সময় ইনানী সমুদ্র সৈকতে সেন্ট মার্টিনের মত প্রবাল পাথরের দেখা মিলে। তবে এখানে কক্সবাজারের মত সাগরত উত্তাল থাকে না আর এই শান্ত সাগরেই পর্যটকদের আরো বেশি আনন্দ দেয়।

হিমছড়ি

কক্সবাজার যারা গিয়েছেন কিন্তু হিমছড়ি যাননি এমন লোক খুঁজে পাওয়া কষ্টকর। কারণ কক্সবাজার থেকে 12 কিলোমিটার দূরে পাহাড়ের কোলে অবস্থিত হিমছড়ি। এখানে হিমছড়ির ছোট বড় ঝর্ণা পাহাড় আর ফটোগ্রাফিক সমুদ্রতর পর্যটকদের মনে আরো আকর্ষণীয় করে তুলেছে এই পরিবেশ কে। শীতল পানির ঝরনা ও মেরিন ড্রাইভ রোড মানুষের মনে আরো আনন্দ বাড়িয়ে দিয়েছে। আপনারা চাইলে বছরের যে কোন সময় হিমছড়ির ভ্রমণ করতে পারবেন।

ছেঁড়া দ্বীপ, সেন্টমার্টিন

ছেড়া দ্বীপ সেন্ট মার্টিনে অবস্থিত। প্রবাল দ্বীপ সেন মার্টিন থেকে প্রায় ৫ কিলোমিটার দক্ষিণে সেরা দ্বীপ অবস্থান করছে। সেখানকার মানুষের কাছে ছেড়া দ্বীপটি ছেড়া দিয়া বা সিরা দিয়া নামে পরিচিত। যারা ভ্রমণ করেন তাদের কাছে সাগরের নীল ঢেউ যখন পাথরের গায়ে আছে পরে তখন এক দারুণ বিশ্বের অবতারণা হয়।

কক্সবাজার দর্শনীয় স্থানসমূহের মধ্যে আরো জনপ্রিয় জায়গা গুলোর মধ্যে রয়েছে –

  • সোনাদিয়া দ্বীপ,
  • রেডিয়েন্ট ফিস ওয়ার্ল্ড,
  • শাহ পরীর দ্বীপ,
  • রামু রাবার বাগান,
  • নিভৃতে নিসর্গ পার্ক,
  • লামাপাড়া খিয়াং,
  • ইনানী রয়েল রিসোর্ট,
  • ম্যাথিনের কূপ,
  • মারমেড বীচ রিসোর্ট,
  • শামলাপুর সমুদ্র সৈকত,
  • আদিনাথ মন্দির,
  • কুতুবদিয়া দ্বীপ,
  • মেরিন ড্রাইভ রোড ইত্যাদি।

আমরা চেষ্টা করেছি কক্সবাজার দর্শনীয় স্থানসমূহের নাম ও বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরার জন্য। আপনাদের যদি কক্সবাজারের দর্শনীয় স্থান সম্পর্কে কোন জিজ্ঞাসা থাকে তাহলে কমেন্ট করে আমাদের জানাতে পারেন। আমরা যত দ্রুত সম্ভব আপনার প্রশ্নের উত্তর দিয়ে সাহায্য করবো।

Leave a Comment