বঙ্গবন্ধুর জন্মদিন রচনা | ১৭ মার্চ বঙ্গবন্ধুর জন্মদিন রচনা | ১৭ মার্চ এর রচনা

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান জন্মগ্রহণ করেন ১৯২০ সালের ১৭ মার্চ টুঙ্গিপাড়ায়। আজ তার জন্মদিন তাই আজকের পোষ্টে আমরা উল্লেখ করেছি বঙ্গবন্ধুর জন্মদিন রচনা। আপনারা যারা বঙ্গবন্ধুর জীবনী সংক্ষেপে রচনা পেতে চান। তাদের জন্য আজকের এই পোস্টের ছোটদের বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে রচনা তুলে ধরা হয়েছে। আমার মুজিব ১০০ শব্দের রচনা উল্লেখ করা হয়েছে আজকের পোস্টে। তাই সবার সাথে বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে রচনা প্রতিযোগিতা ২০২৪ অংশগ্রহণ করুন। কারণ আজকের পোষ্টে আপনারা পেতে চলেছেন বঙ্গবন্ধুর জীবনী বাংলা রচনা। অন্যদিকে আরো তুলে ধরা হয়েছে বঙ্গবন্ধুর জীবনী অনুচ্ছেদ রচনা।

বঙ্গবন্ধুর জন্মদিন রচনা

বাংলাদেশের সকল সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে বঙ্গবন্ধুর জন্মদিন রচনা প্রতিযোগিতা করা হয়। তাই আজকের এই পোস্টটি আপনাদের জন্য বঙ্গবন্ধুর জন্মদিন রচনা ১০০০/৫০০ শব্দ তুলে ধরা হয়েছে এই পোস্টে। নিজের পছন্দের রচনাটি সংগ্রহ করে নিতে পারেন নিচে থেকে।

১৭ মার্চ বঙ্গবন্ধুর জন্মদিন রচনা

ভূমিকা :

বাংলার ইতিহাসে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এক অনবদ্য নাম। তিনি বাংলাদেশের শ্রেষ্ঠ নেতা এবং বিশ্বের শ্রেষ্ঠ নেতাদের অন্যতম। তাঁর বলিষ্ঠ নেতৃত্বেই ১৯৭১ সালের ১৬ই ডিসেম্বর বাংলাদেশ স্বাধীন হয়। বাংলার এই অবিসংবাদিত নেতা আজীবন দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফুটাবার চেষ্টা করে গেছেন। তাই তাে কবি কণ্ঠে উচ্চারিত হয়—

“যতদিন রবে গৌরি, যমুনা, পদ্মা-মেঘনা বহমান
ততদিন রবে কীর্তি তােমার শেখ মুজিবুর রহমান।”

জন্ম ও শিক্ষা :

১৯২০ সালের ১৭ই মার্চ শেখ মুজিবুর রহমান গােপালগঞ্জ জেলার টুঙ্গিপাড়ায় এক মধ্যবিত্ত শিক্ষিত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। গ্রামের স্কুলে প্রাথমিক শিক্ষা শেষ করে শেখ মুজিব গােপালগঞ্জ মিশন স্কুলে ভর্তি হন এবং সেখান থেকেই তিনি মেট্রিকুলেশন পরীক্ষায় কৃতিত্বের সাথে উত্তীর্ণ হন। ১৯৪৭ সালে শেখ মুজিব কলকাতা ইসলামিয়া কলেজ থেকে গ্রাজুয়েশন ডিগ্রী লাভ করেন। ১৯৪৭ সালে ব্রিটিশ বিদায়ের পর শেখ মুজিব ঢাকা চলে আসেন এবং ঢাকা। বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন অনুষদে ভর্তি হন।

রাজনীতিতে দীক্ষা লাভ :

ছাত্র জীবনেই তাঁর রাজনীতিতে হাতে খড়ি ঘটে। অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে গিয়ে শেখ মুজিব অষ্টম শ্রেণির ছাত্র থাকাকালীন সময়ে প্রথম জেলে যান। পাকিস্তান আন্দোলনের সময়ে তিনি মুসলিম ছাত্র ফেডারেশনের নেতা হিসেবে বিশেষ অবদান রাখেন। তিনি দেখেছিলেন বাংলার জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামকে। তিনি সাহচর্যে এসেছিলেন বাংলার গৌরব ও গর্ব নেতাজী সুভাষ চন্দ্র বসু, শেরে বাংলা আবুল কাসেম ফজলুল হক, শহীদ সােহরাওয়ার্দী ও মজলুম জননেতা মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী প্রমুখের।

সংগ্রামী জীবন :

শেখ মুজিব তদানীন্তন আওয়ামী মুসলিম লীগে যােগদান করেন। এ সময়ে তিনি মওলানা ভাসানীর সঙ্গে কাজ করার সুযােগ পান। দেশের আপামর জনসাধারণের ন্যায্য দাবি আদায় করতে গিয়ে শেখ মুজিব বহুবার কারারুদ্ধ হয়েছেন। যুবক বয়সে তিনি একবার মন্ত্রী হয়েছিলেন, কিন্তু দলকে শক্তিশালী করার জন্য তিনি মন্ত্রীত্ব ত্যাগ করেন। ১৯৬৬ সালে তিনি যখন আওয়ামী লীগের সভাপতি ছিলেন তখন জাতীয় মুক্তি ও স্বায়ত্তশাসনের জন্য ৬ দফা কর্মসূচি ঘােষণা করেন।

আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা :

পাকিস্তাসের সামরিক ডিক্টেটর বাঙালির গণতান্ত্রিক চেতনাকে নস্যাৎ ও ৬ দফার আন্দোলনকে স্তব্ধ করতে বাঙালির প্রাণপ্রিয় নেতা শেখ মুজিবের বিরুদ্ধে মিথ্যা রাষ্ট্রদ্রোহিতার মামলা দায়ের করে। এ মামলাই ইতিহাসে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা হিসেবে অভিহিত। ১৯৬৯ সালের জানুয়ারি মাসে পূর্ব বাংলায় গণ অভ্যুত্থান ঘটলে ষড়যন্ত্রকারীরা শেখ মুজিবকে মুক্তি দিতে বাধ্য হয়।

১৯৭০-এর নির্বাচন ও ১৯৭১-এর স্বাধীনতা ঘােষণা :

১৯৭০ সালের সাধারণ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ জাতীয় পরিষদের ১৬৯টি আসনের মধ্যে ১৬৭ টি আসনে বিজয়ী হয়ে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে। কিন্তু পশ্চিমা কর্তৃপক্ষ আওয়ামী লীগকে সরকার গঠন করতে না দিয়ে ষড়যন্ত্রের জাল বুনতে থাকে এবং ১৯৭১ সালে ২৫এ মার্চের কালােরাতে শুরু করে নৃশংস হত্যাযজ্ঞ। বঙ্গবন্ধুকে গ্রেফতার করে পশ্চিম পাকিস্তানে নিয়ে যাওয়া হয়। গ্রেফতারের আগে বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশের স্বাধীনতার একটি ঘােষণাপত্র চট্টগাম আওয়ামী লীগ নেতা হান্নান চৌধুরীর কাছে পাঠান। এ ঘঘাষণাপত্রই ২৬ ও ২৭ মার্চ যথাক্রমে হান্নান চৌধুরী ও মেজর জিয়া চট্টগ্রামের কালুরঘাট বেতার কেন্দ্র থেকে পাঠ করেন।

মুক্তি*যু*দ্ধ ও বঙ্গবন্ধু :

বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সমমনা রাজনৈতিক দল ও দেশের আপামর জনগণের সহযােগিতায় গড়ে তুলে মুক্তিবাহিনী, গঠন করে মুজিবনগর সরকার। দীর্ঘ ৯ মাস র*ক্তক্ষয়ী যু*দ্ধে ৩০ লক্ষ শহিদের র*ক্ত ও ২ লক্ষ মা-বােনের ইজ্জতের বিনিময়ে ১৯৭১ সালের ১৬ই ডিসেম্বর বাংলাদেশ স্বাধীন হয়। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান পশ্চিম পাকিস্তানের কারাগার থেকে মুক্ত হয়ে ১৯৭২ সালের ১০ই জানুয়ারি স্বদেশে প্রত্যাবর্তন করেন এবং যু*দ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশের হাল ধরেন শক্ত হাতে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাঙালি জাতির জনক হিসেবে বাংলাদেশ ও বিশ্বে লাভ করেন ব্যাপক পরিচিত।

শাসক হিসেবে বঙ্গবন্ধু :

সদ্য স্বাধীনপ্রাপ্ত যু*দ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশে অনেক কিছুর অভাব ছিল। বিশেষকরে দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা ছিল খুবই নাজুক। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তাঁর বলিষ্ঠ নেতৃত্বে অল্পদিনের মধ্যেই দেশকে মােটামুটি একটা ভালাে অবস্থার মধ্যে নিয়ে আসতে সক্ষম হন। তিনি যখন ব্যাপক অর্থনৈতিক সংস্কারে হাত দেন ঠিক সে মুহূর্তে (১৯৭৫ সালের ১৫ই আগস্ট) তাঁকে সপরিবারে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়।

উপসংহারঃ

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ছিলেন ভাগ্যাহত বাঙালি জাতির মুক্তির অকুতােভয় অগ্রদূত। তাঁর বলিষ্ঠ ও সাহসী নেতৃত্বেই ১৯৭১ সালের ১৬ই ডিসেম্বর বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে। আর তাইতাে বলা যায়, ব্যক্তি মুজিবের মৃত্যু হলেও মুজিবাদর্শের মৃত্যু নেই।

১৭ মার্চ এর রচনা

১৭ই মার্চ উপলক্ষে যারা রচনা পেতে চান। তাদের জন্য আজকের এই পোস্ট টা তুলে ধরা হয়েছে সবচাইতে ভালো মানের 17 ই মার্চ রচনা। আপনি যদি 17 ই মার্চ রচনা প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করতে চান। তাহলে নিচে থেকে 17 ই মার্চের বঙ্গবন্ধুর জন্মদিন রচনা দেখিনিন।

১৭ মার্চ কেন পালন করা হয়

১৭ মার্চ রচনা

সূচনা:

বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। তিনি হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি, তিনি বাঙালি জাতির স্থপতি, তিনি ভাষা সৈনিকও বটে। এদেশের গণমানুষের মুক্তির সংগ্রামে তিনিই ছিলেন অগ্রনায়ক বীরসেনানি। তার বলিষ্ঠ নেতৃত্বেই দীর্ঘ নয়মাস যু*দ্ধের পর বাঙালি অর্জন করেছে স্বাধীন ও সার্বভৌম বাংলাদেশ। তার এ অবদান বাঙালি জাতি শ্রদ্ধার সঙ্গে আজীবন স্মরণ রাখবে।

জন্ম ও বংশ পরিচয়:

১৯২০ সালের ১৭ই মার্চ গােপালগঞ্জ জেলার টুঙ্গিপাড়ায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান জন্ম গ্রহণ করেন। ? বাবা-মা অতি শখ করে তাঁকে ‘খােকা’ বলে ডাকত। এই ‘খােকা’ই পরবর্তীতে বিশ্বের একজন সার্বজনীন নেতা হিসেবে আবির্ভূত হয়েছিলেন। টুঙ্গিপাড়ায় শেখ পরিবারের প্রতিষ্ঠাতা শেখ বােরহান উদ্দিন। তাঁর পূর্বপুরুষ শেখ আউয়াল ছিলেন শেখ মুজিবের অষ্টম পূর্বপুরুষ । কথিত আছে যে, তিনি হযরত বায়েজিদ বােস্তামি (রা.)-এর সঙ্গী বা শিষ্য হিসেবে ইরাক থেকে ভারতবর্ষে আগমন করেন। এ শেখ পরিবারে পিতা-মাতার আদুরে সন্তান শেখ মুজিব ।

পিতা-মাতা:

বঙ্গবন্ধুর পিতার নাম শেখ লুৎফর রহমান এবং মাতা হলেন সায়রা খাতুন । পিতা-মাতার তত্ত্ববধানে আপন গৃহেই তার হতেখড়ি হলেও তিনি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে শিক্ষালাভ করেন।

শিক্ষাজীবন:

শেখ মুজিবুর রহমান ১৯২৭ সালে মাত্র সাত বছর বয়সে গিমাডাঙ্গা প্রাথমিক বিদ্যালয়ে তাঁর ছাত্রজীবনের সূচনা ঘটে । এরপর, গােপালগঞ্জের সীতানাথ একাডেমি এবং পরবর্তীতে পিতার কর্মস্থল মাদারীপুরে ইসলামিয়া হাই স্কুলে চতুর্থ শ্রেণিতে ভর্তি করানাে হয়। অবশ্য অসুস্থতার জন্য প্রায় তিন বছর পড়াশুনা করতে পারেননি। এসময় থেকেই তিনি চোখে চশমা পরেন এবং তা তার জীবনের শেষদিন পর্যন্তও অব্যাহত ছিল। ১৯৩৭ সালে গােপালগঞ্জ মিশন হাইস্কুলে ভর্তি হন; এ স্কুল থেকেই তিনি এন্ট্রাস বা প্রবেশিকা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন।

এই স্কুল পরিদর্শনে আসেন হােসেন শহিদ সােহরাওয়ার্দী এবং শেরে বাংলা এ.কে. ফজলুল হক । তাদের সংস্পর্শে থেকেই শেখ মুজিব রাজনীতির প্রতি অনুর*ক্ত হয়ে ওঠেন। কলকাতা ইসলামিয়া কলেজ থেকে বিএ পাশ করেন। এসময় থেকেই তিনি সক্রিয় রাজনীতির সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নকালীন তিনি পাকিস্তান সরকারের দুঃশাসনের বিরুদ্ধে আন্দোলনে লিপ্ত হন। এজন্য ১৯৪৮ সালে পাকিস্তান সরকার তাঁকে গ্রেফতার করেন। ফলে তাঁর আইন পড়া সম্ভব হয়নি। উল্লেখ করা প্রয়ােজন যে, কলকাতা থাকাকালীন শেখ মুজিবুর রহমান রাজনীতিক নানা সংকটে আন্দোলন-সংগ্রামে যুক্ত হন।

রাজনীতিতে শেখ মুজিবুর রহমান :

ইসলামিয়া কলেজের বেকার হােস্টেলে অবস্থানকালেই শেখ মুজিব অনেক প্রখ্যাত রাজনীতিক ব্যক্তিদের সংস্পর্শে আসেন। এঁদের তৎকালীন অবিভক্ত বাংলার মুখ্যমন্ত্রী হােসেন শহিদ সােহরাওয়ার্দী, প্রখ্যাত রাজনীতিক নেতা শেরে বাংলা এ.কে. ফজলুল হক ছাড়াও নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসু, মওলানা ভাসানীর সাহচর্যে আসেন । প্রথমত উল্লেখ করা প্রয়ােজন যে, পাকিস্তান সৃষ্টির পরপরই নানা ধরনের বৈষম্যের শিকার হয় পূর্ব পাকিস্তানের মানুষ । ১৯৪৮ সালে সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের বাংলা ভাষাকে অবজ্ঞা করে উর্দুকে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা হিসেবে ঘােষণা করা হয়। মাতৃভাষা বাংলার অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য রাজনীতিবিদ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের নিয়ে গঠিত হয় সর্বদলীয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ। তৎকালীন যেসব ছাত্র ও তরুনদের প্রচেষ্টায় এ পরিষদ গঠিত হয় তাদের মধ্যে বিশিষ্ট ছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।

১৯৪৮ সালের ১১ই মার্চ ভাষার দাবিতে ধর্মঘট ডাকা হলে শেখ মুজিবুর রহমান, অলি আহাদ, কাজী গােলাম মাহবুবসহ আরও অনেক ছাত্রনেতা গ্রেপ্তার হন। বঙ্গবন্ধু বাঙালির অধিকার আদায়ের জন্য সংগ্রাম করেন। ফলে তাঁকে বারবার জেল-জুলুম সইতে হয়। জীবনের অধিকাংশ সময়ই তাঁর কেটেছে কারাগারের আবদ্ধ প্রাঁচীরে । ১৯৪৯ সালে পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগ গঠনের সময় তিনি কারাবন্দি থাকা অবস্থায় সংগঠনে যুগা সম্পাদক নির্বাচিত হন। এরপর ১৯৫৩ সালে তাঁকে আওয়ামী মুসলিম লীগের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত করা হয়। এরই ধারাবাহিকতায় ১৯৫৪ সালে অনুষ্ঠিত সাধারণ নির্বাচনে তিনি যুক্তফ্রন্টের প্রার্থী হিসেবে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন এবং প্রাদেশিক সরকারের কৃষি ও বনমন্ত্রী মনােনীত হন।

১৯৫৮ সালের ৭ অক্টোবর পাকিস্তানের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট ইস্কান্দার মীর্জা এক অধ্যাদেশের মাধ্যমে কেন্দ্রীয় ও প্রাদেশিক মন্ত্রিসভা বাতিল করে দেশে সামরিক শাসন জারি করেন এবং প্রধান সেনাপতি জেনারেল আইয়ুব খানকে প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক নিযুক্ত করা হয়। কিছুদিন পরেই আইয়ুব খান ইস্কান্দার মীর্জাকে ক্ষমতাচ্যুত করেন । এ সময় শেখ মুজিবসহ অন্যান্য নেতাকে গ্রেফতার করে তাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন মামলা দায়ের করা হয় । কিন্তু এ মামলায় শেখ মুজিবুর রহমান নির্দোষ প্রমাণিত হলে ১৯৫৯ সালের ১৭ ডিসেম্বর তাকে মুক্তি দেওয়া হয়। এ ধরনের অসংখ্য বাধা-বিপত্তি আর হাজারাে প্রতিকূলতা অতিক্রম করে শেখ মুজিবের রাজনীতিক জীবন অতিবাহিত হয়। ১৯৫৬ সালের ৫ই ফেব্রুয়ারি লাহােরে বিরােধীদলের এক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।

বঙ্গবন্ধু পূর্ব-পাকিস্তানে বাঙালির সব ধরনের অধিকার ফিরে পাওয়ার জন্য ৬ দফা কর্মসূচি উপস্থাপন করেন। ৬ দফা আন্দোলনকে দমন করার জন্য পাকিস্তানি শাসকরা শেখ মুজিবুর ও অন্যান্য নেতার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে । এই ঐতিহাসিক আগরতলা মামলায় পাকিস্তানি শাসকদের মূল ষড়যন্ত্র হলাে শেখ মুজিবুর রহমান ও সংশ্লিষ্ট নেতৃবৃন্দকে গােপন বিচারের মাধ্যমে ফাঁসি দেওয়া। এভাবে নেতৃত্বহীন অবস্থায় সমস্ত আন্দোলন-সংগ্রামকে থামিয়ে দেওয়াই তাদের মূল লক্ষ । ১৯৬৯ সালের জানুয়ারি থেকে শুরু করে ২৫ শে মার্চ পর্যন্ত সংঘটিত গণঅভ্যুত্থানের জোয়ারে আইয়ুব খানের স্বৈরশাসনের ভিত্তি গড়ে ওঠে। ২২ শে ফেব্রুয়ারি আইয়ুব খান আগরতলা মামলা প্রত্যাহার করে সব রাজবন্দিকে নিঃশর্ত মুক্তি দিতে বাধ্য হয়। কারামুক্ত শেখ মুজিবুর রহমানকে রেসকোর্স ময়দানে বিশাল গণসংবর্ধনা দেওয়া হয়। এ সমাবেশে ছাত্র-সংগ্রাম পরিষদের পক্ষ থেকে তাঁকে ‘বঙ্গবন্ধু’ উপাধিতে ভূষিত করা হয় ।

১৯৭০ সালের সাধারণ নির্বাচনে শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে আওয়ামীলীগ পাকিস্তান জাতীয় পরিষদের শতকরা আশিভাগ আসনে বিজয়ী হয়। কিন্তু তাঁকে সরকার গঠন করতে দেওয়া হয়না। বাধ্য হয়ে তিনি পাকিস্তান সরকারের বিরুদ্ধে অসহযােগ আন্দোলনের ডাক দেন। এভাবেই মুক্তি*যু*দ্ধের সূচনা হয়।

মুক্তি*যু*দ্ধ :

১৯৭১ সালের ৭ মার্চ রেসকোর্স ময়দানে এক বিশাল জনসমুদ্রে দাঁড়িয়ে বাংলার এ অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান দীপ্তকণ্ঠে উচ্চারণ করেন- ‘এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম মুক্তির সংগ্রাম।’ এ ঘােষণার ফলে পাকিস্তানি শাসকগােষ্ঠীর ভিত কেঁপে ওঠে। ২৫ শে মার্চ রাতে বাঙালির উপর অতর্কিতে ঝাঁপিয়ে পড়ে পাকিস্তানি এ শাসকগােষ্ঠী ঘুমন্ত মানুষের উপর বর্বর পাকিস্তানি বাহিনী নির্বিচার গণহত্যা চালায়। পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী ২৬শে মার্চ প্রথম প্রহরে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘােষণা করেন এবং আপামর বাঙালিকে মুক্তি*যু*দ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ার আহবান জানান।

তিনি চূড়ান্ত বিজয় অর্জন না হওয়া পর্যন্ত যু*দ্ধ চালিয়ে যাওয়ার জন্য বলে । মৃত্যুকে তুচ্ছ করে সর্বস্তরের মানুষ দেশমাতৃকাকে শত্রুমুক্ত করতে বিশেষ করে বাঙালি আর্মি, পুলিশ, ইপিআর, আনসারসহ লক্ষ লক্ষ ছাত্র-যুবক তরুণেরা অস্ত্র আর ট্রেনিং এর জন্য পাড়ি জমায় প্রতিবেশী রাষ্ট্র ভারতে। ভারত সরকারের সর্বাত্মক সাহায্য-সহযােগিতায় বাঙালি বীর সন্তানেরা হানাদার পাকিস্তানি বাহিনীকে পরাজিত করতে সক্ষম হয়। নয় মাসে তিরিশ লক্ষ শহিদের বিনিময়ে ১৬ই ডিসেম্বর অর্জিত হয় স্বাধীনতার র*ক্তিম সূর্য। বঙ্গবন্ধু স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম রাষ্ট্রপতি। তিনিই জাতিসংঘে বাংলায় প্রথম ভাষণ দেন। এভাবে শুধু বাঙালি জাতি নয়, বাংলা। ভাষার মর্যাদাকেও তিনি বিশ্বে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। তাঁর অনন্য ব্যক্তিত্ব বিশ্বে অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত হয়ে আছে ।

ব্যক্তিত্ব :

বাঙালি জাতির আশা-আকাঙ্ক্ষার মূর্ত প্রতীক ছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। তাঁর বলিষ্ঠ ব্যক্তিত্ব, দৃঢ় মনােবল, সাহসী উদ্যোগ বাংলাদেশের মুক্তি*যু*দ্ধে অপরিসীম অনুপ্রেরণার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছিল । এছাড়া যু*দ্ধোত্তর বাংলাদেশ বিনির্মাণে তাঁর সাহসী উদ্যোগের পাশাপাশি সহানুভূতিশীল অনুভূতির পরিচয় পাওয়া যায়। তিনি অবলীলায় গুরুতর অপরাধীকেও ক্ষমা করে দিয়েছিলেন। আবার তাঁর ‘বজ্রকণ্ঠ’ অন্যায়, অবিচার, শােষণ ও জুলুমের বিরুদ্ধে সােচ্চার ছিল। অন্যদিকে, দেশবাসী তথা মানুষের জন্য সীমাহীন ভালােবাসা বিশ্ববাসীকে দারুণভাবে সাড়া দিয়েছিল । শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য তিনি আন্তর্জাতিক ‘জুলিও-কুরি’ শান্তির পদকে ভূষিত হন। কিন্তু তারপরেও কিছু কুলাঙ্গার, পাষণ্ড, নিষ্ঠুর, বর্বরের হাতে তাকে সপরিবারে প্রাণ দিতে হয়। এর চেয়ে বড়াে দুর্ভাগ্য বাঙালি জাতির জন্য আর কী হতে পারে ।

পরলােকগমন :

১৯৭৫ সালের ১৫ই আগস্ট কতিপয় বিপথগামী সেনাসদস্যের আক্রমণে ও নিষ্ঠুর আঘাতে সর্বকালের শ্রেষ্ঠ বাঙালির প্রাণপ্রিয় এ নেতা সপরিবারে নিহত হন। টুঙ্গিপাড়ায় পারিবারিক কবরস্থানে তাকে সমাহিত করা হয় । যে-মাটির প্রীতি আর প্রেমে তিনি জন্ম নিয়েছিলেন, বেড়ে উঠেছিলেন, সেই মাটির কোমল স্পর্শে আর শান্তির স্পর্শে তিনি শেষশয্যা গ্রহণ করেছেন।

উপসংহার:

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান শত নিপীড়ন-নির্যাতনের বিরুদ্ধে কোনােদিনই মাথানত করেনি। তিনি তার জীবন দিয়ে তাই প্রমাণ করেছেন । পৃথিবীর মানচিত্রে বাংলাদেশ, বাংলাভাষাকে মর্যাদার আসনে অধিষ্ঠিত করেছেন। তাই সহস্র প্রতিকূলতায় দৃঢ়তায় উচ্চারণ করেছেন, আমি বাঙালি। বাঙালি মন-মননের যথার্থ উপলব্ধিতে কবির কথা ।

  • যতদিন রবে পদ্মা-যমুনা-গৌরী-মেঘনা বহমান, ততদিন রবে কীর্তি তােমার শেখ মুজিবুর রহমান।

আশা করি আজকের পোস্ট এর সাহায্যে আপনারা বঙ্গবন্ধুর জন্মদিন নিয়ে রচনা পেয়েছেন। আপনাদের যদি রচনাটি ভালো লেগে থাকে তাহলে অবশ্যই সবার সাথে শেয়ার করুন। যাতে সবাই এই রচনা থেকে বঙ্গবন্ধুর জন্মদিন সম্পর্কে তথ্য গ্রহণ করতে পারে।

Read More

Leave a Comment