আনারস সম্পর্কে অনেকের জনের নানান ধরনের চিন্তাভাবনা রয়েছে। অনেকেই আনারস সম্পর্কে সঠিক তথ্য জানতে চায়, এর মাঝে অনেকেই জানতে চায় আনারস খাওয়ার সঠিক সময়, আনারস খাওয়ার নিয়ম, আনারস খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতার দিকসহ আরো নানান বিষয়। আমরা এই পোস্টে কয়েকটি বিষয়ে বিভক্ত করে আপনাদের বোঝানোর সুবিধার্থে তুলে ধরেছি। আশা করি এই পোস্ট থেকে আপনি আনারস নিয়ে অনেক কিছু জানতে পারবেন। আনারস বিষয়ে জানার জন্য আর্টিকেলটি সম্পন্ন পরুন। আমাদের বাংলাদেশ আনারস নামে পরিচিত ও ইংরেজিতে পাইনাপেল নামে পরিচিত । আনারস সাধারণত বর্ষা মাসে পাওয়া যায়। বাংলাদেশ আনারসের উৎপাদন অনেক। বাংলাদেশের উত্তরবঙ্গের জেলাগুলোতে প্রচুর পরিমাণে আনারস চাষ করা হয়। এছাড়া বিভিন্ন জেলায় আনারসের চাষাবাদ রয়েছে।
সুস্বাদু এই ফলটি অনেকেরই পছন্দের একটি খাবার এই খাবারটি খেতেও যেমন অনেক স্বাদ তেমনি দেখতে অনেক সুন্দর। সুস্বাদু এই ফলটির অনেক গুনাগুন রয়েছে দেহের পুষ্টিসাধন এবং দেহকে সুস্থ, সবল ও রোগমুক্ত রাখার জন্য অনেক কার্যকারী। তাহলে চলুন জেনে নেওয়া যাক আনারস খাওয়ার উপকারিতা দিকগুলো।
Contents
আনারস খাওয়ার সঠিক সময়
ফল শরীর সুস্থ সবল রাখতে সাহায্য করে। তাই প্রত্যেকের উচিত প্রতিদিন অন্ততপক্ষে দুইশত গ্রামের মতন ফল খাওয়া। ফলেরে চাহিদা পূরণ করার জন্য আপনারা আনারসও খতে পারেন। এমন অনেক খাবার রয়েছে যেগুলো কিনা বাসি পেটে খাওয়া নিষেধ। তবে বিশেষ করে যে খাবারগুলো খেলে শরীরের পক্ষে ক্ষতিকর ওই ধরনের খাবার বাসি পেটে না খাওয়াই ভালো। কথিত আছে ভরা পেটে ফল আর খালি পেটে পানি। তাই বলা যায় খাওয়ার পর ফল খাওয়া ভালো। খালি পেটে আনারস খেলে যাদের গ্যাস্ট্রিক রয়েছে তাদের গ্যাস্ট্রিক সমস্যা আরো বেড়ে যেতে পারে। আবার কিমি রোগের ক্ষেত্রে বিষয়টা আলাদা খালি পেটে আনারস খেলে কিমি রোগ দূর হয়।
আনারস খাওয়ার নিয়ম
আনারস সুস্বাদু খাবারের পাশাপাশি এর গুনাগুন অনেক, আনারস ঔষধি হিসেবেও কাজ করে।
যাদের কিনা ঠান্ডা জ্বরের সমস্যা রয়েছে তাদের জন্য আনারস একটি কার্যকারী ফল। আনারসে থাকা অ্যাসকরবিক অ্যাসিড শরীরে ভিটামিন সি’র চাহিদা পূরণ করে, যা সংক্রমণ রোগ প্রতিরোধে খুব প্রয়োজন। এছাড়াও হার্ট ভালো রাখে, ক্ষত সারাতে, হজম ক্ষমতা বৃদ্ধি ও পেশির ব্যথাসহ র*ক্তকে হঠাৎ করে জমাট বাঁধতে দেয় না।
আনারসের পুষ্টিগুণ
আনারসে রয়েছে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন যা শরীরের পুষ্টির যোগদান করতে সাহায্য করে। আনারসে থাকা ভিটামিন গুলো শরীরের জন্য খুবই কার্যকরী। এতে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন এ, সি, ক্যালসিয়াম, ফসফরাস এবং পটাশিয়াম রয়েছে। ফলটিতে প্রচুর পরিমাণে আঁশ ও ক্যালোরি রয়েছে। এটি কলস্টেরল ও চর্বিমুক্ত।
- হজম শক্তি বাড়ায়– আনারস হজম শক্তি বৃদ্ধি করার ক্ষেত্রে অনেক কার্যকরী। যাদের হজম শক্তি কম তারা ফল এর তালিকা আনারস রাখতে পারেন। আনারসে থাকা ব্রোমেলিন যা আমাদের হজমশক্তিকে উন্নত করতে সাহায্য করে।
- দাঁত ও মাড়ির যত্নে– আনারস দাঁত ও মাড়ি মজবুত করে এছাড়া দাঁত ও মাড়ির ইনফেকশন দূর করে। দাঁতের যত্নে আনারস অনেক কার্যকর কারণ আনারসে রয়েছে ক্যালসিয়াম।
- পুষ্টির অভাব দূর করে– আনারসে রয়েছে ভিটামিন এ এবং সি, ক্যালসিয়াম, পটাশিয়াম ও ফসফরাস। এর জন্য শরীরে পুষ্টি বৃদ্ধি করে শরীর সুস্থ ও সরলর রাখে। পুষ্টির অভাব পূরণে কার্যকরী ভূমিকা পালন করে।
- ওজন কমানোর জন্য আনারসের গুরুত্ব– যাদের অতিরিক্ত মেদ রয়েছে তাদের জন্য আনারসের ভূমিকা অনেক। যারা শরীরের মেদ চর্বি কমাতে চায় তাদের জন্য আনারস অনেক কার্যকার। ওজন কমানোর জন্য প্রয়োজন ফাইবার যা আনারসে রয়েছে। আনারসে থাকা ফাইবার শরীরের অতিরিক্ত চর্বি মেদ কমাতে সাহায্য করে, তাই অন্যান্য ফলের সাথে আনারস খেতে পারেন।
- চোখের স্বাস্থ্য সুরক্ষায়– চোখের স্বাস্থ্য ভালো রাখার জন্য আনারসের ভূমিকা অনেক গবেষণায় দেখা গেছে। আনারস ম্যাক্যুলার ডিগ্রেডেশন হওয়া থেকে আমাদের রক্ষা করে। এই রোগটি আমাদের চোখের রেটিনা নষ্ট করে দেয় এবং আমরা ধীরে ধীরে অন্ধ হয়ে যাই। তাই বলাই যায় চোখে স্বাস্থ্য ভালো রাখার জন্য নিয়মিত আনারস খাওয়া খুবই জরুরী। প্রতিদিন আনারস খেলে এ রোগ হওয়ার সম্ভাবনা কমে যায় প্রায় ত্রিশ শতাংশ।
- ক্যান্সার ও হৃদরোগের উপকার করে– আনারস বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধ করার পাশাপাশি ক্যান্সার ও হৃদরোগের প্রতিরোধ করে থাকে। দেহের কোষের ওপর ফ্রি রেডিকেলের বিরূপ প্রভাবে ক্যানসার এবং হৃদরোগের মতো মারাত্মক রোগ দেখা দিতে পারে, যা প্রতিরোধ করে আনারস।
- হাড়ের সুস্থতার জন্য আনারসের ভূমিকা– হাড় মজবুত রাখার জন্য প্রয়োজন হয় ক্যালসিয়াম। আনারসে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম যা হাড়ের গঠন মজবুত করে। আনারসে রয়েছে প্রচুর পরিমাণ ক্যালসিয়াম ম্যাংগানিজ। ক্যালসিয়াম হাড়ের গঠনে বেশ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে এবং ম্যাংগানিজ হাড়কে করে তোলে মজবুত। তাই অন্যান্য খাবারের পাশাপাশি যদি প্রতিদিন আনারস খেতে পারেন তাহলে হাড়ের মজবুত করে তুলতে পারবেন।
- আনারস র*ক্ত পরিষ্কার রাখে– প্রত্যেকের জন্য র*ক্ত পরিষ্কার রাখা খুবই প্রয়োজনীয়। শরীরের র*ক্ত পরিষ্কার রাখার ক্ষেত্রে আনারসের গুরুত্ব অনেক। আনারস র*ক্ত পরিষ্কার করে হৃদপিণ্ডকে কাজ করতে সাহায্য করে। হৃৎপিণ্ড আমাদের শরীরে অক্সিজেনযুক্ত র*ক্ত সরবরাহ করে। এছাড়াও হৃৎপিণ্ডের নানা রকম অসুখে থেকে আনারস দেয় সুরক্ষা।
বাচ্চাদের আনারস খাওয়ার নিয়ম
শিশুদের খাবার খাওয়ানোর আগে সেই খাবারের গুণাগুণ সম্পর্কে জেনে নেওয়া জরুরী। বা নিরাপত্তা জেনে রাখা অবশ্যই প্রয়োজন। আপনি যে খাবার খাওয়াচ্ছেন সে খাবার দ্বারা শিশুর কোনো ক্ষতি হচ্ছে কিনা সে বিষয়ে আপনার অবশ্যই জ্ঞান রাখতে হবে।
- বাচ্চাদের আনারস খাওয়ার আগে কয়েকটি বিষয় খেয়াল রাখা উচিত। এটি এখনও শিশুর পাচনতন্ত্রে কঠিন হতে পারে।যদিও এটি এলার্জিকারক বলে জানা যায় না,তবে আনারসের সাথে প্রস্তুত শিশু খাদ্য আম্লিক হয় যা শরীরে মাঝেমধ্যে সমস্যার কারণ হয়ে ওঠে।আনারস মধ্যস্থ এই অ্যাসিডের দরুণ শিশুর মুখের চারপাশে র্যাশ হতে পারে তার সূক্ষ্ম ত্বকের কারণে।
- ছয় মাস বয়স অতিক্রম করলেই তাকে আনারস দেওয়া উচিত একবারে অল্প পরিমাণ নিয়ে সেটিকে অন্য খাবারের সাথে চটকে।আনারসের ওয়েজ বা মোটা খন্ডগুলি অত্যন্ত আঁশ যুক্ত হওয়ায় সেগুলু বাচ্চার গলায় বিষম লাগার মত বিপত্তির কারণ হতে পারে।
আনারসের উপকারিতা ও অপকারিতা
আমরা উপরে জেনেছি আনারস খাওয়ার উপকারিতা দিকগুলো। এখন আমরা জেনে নিব আনারসের অপকারিতা দিকগুলো। তাহলে চলুন জেনে নেওয়া যাক আনারসের উপকারিতা দিকগুলো। আনারসের যেমন উপকার দিকগুলো খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তেমনি এর অপকারিতা দিকগুলো আমাদের মাথায় রাখতে হবে।
- র*ক্তে চিনির পরিমাণ বৃদ্ধি পায়– আনারসে চিনির পরিমাণ বেশি থাকার ফলে র*ক্তে চিনির পরিমাণ বেড়ে যাওয়া সম্ভাবনা থাকে। আনারসের দুই টি চিনি উপাদান সুক্রোজ এবং ফ্রুক্টোজ যা ডায়বেটিস রোগীদের জন্য ক্ষতিকর। কিন্তু দেহের ক্ষতি, এটি খাওয়ার উপর নির্ভর করে। এবং আনারসের মধ্যে অতিরিক্ত চিনি আমাদের দেহে র*ক্তের চিনির পরিমাণ বাড়িয়ে দেয়। তাই আনারস বেশি না খেয়ে সপ্তাহে দুই দিন খেতে পারেন।
- বাতের ব্যথার ঝুকি– যাদের আগে থেকেই বাতের ব্যথা রয়েছে তাদের জন্য আনারস খাওয়া অনেক ঝুঁকিপূর্ণ। এছাড়াও বাতের ব্যথা দেখা দিতে পারে। আপনি যখন আনারস খাবেন তখন এটি আপনার গ্যাস্ট্রোইনটেস্টিনাল নালীর কাছে পৌঁছানোর পর এটি অ্যালকোহলে পরিনত হয়। এবং এই কারণে মানুষের দেহে বাতের ব্যথা শুরু হতে পারে।
- এলার্জি সমস্যা দেখা দিতে পারে– যাদের এলার্জি রয়েছে বা এলার্জি সমস্যায় ভুগছেন তাদের ক্ষেত্রে আনারস খাওয়া অনেকটাই ঝুঁকিপূর্ণ। আনারস খাওয়ার ফলে দেহে অ্যালার্জি দেখা দিতে পারে তবে এতে সকলের ক্ষেত্রেই নয়। কিছু মানুষের ক্ষেত্রে দেখা যায় যাদের আগে থেকে এলার্জি সমস্যা রয়েছে। এছাড়া খাওয়ার ফলে অ্যালার্জীর উপসর্গ হল ঠোঁট ফুলে যাওয়া ও গলায় সুরসুরি বোধ হওয়া। তাই আনারস খাবার ক্ষেত্রে আনারস লবন পানি দিয়ে ভালোভাবে ধুয়ে নেওয়া উচিত এতে করে এই সমস্যা হওয়ার সম্ভবনা দূর হয় অনেকটাই।
আনারসের ক্ষতিকর দিক
আনারসের বেশ কিছু ক্ষতিকর দিক রয়েছে যা জেনে রাখা খুবই প্রয়োজন। অনেকের নানান ধরনের সমস্যা থাকে যাদের এই ধরনের সমস্যা রয়েছে। তাদের জন্য আনারসের ক্ষতিকর দিকগুলো জেনে ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করে খাওয়া উচিত।
- দাঁতের সমস্যা দেখা দিতে পারে– যাদের দাঁতে কেবেটি এর সমস্যা রয়েছে তাদের দাঁত ব্যথা ও তার শিরশির দেখা দিতে পারে।
- ওষুধের প্রতিক্রিয়া– আনারসে আছে ব্রমিলেইন যা দিয়ে ওষুধ বানানো হয়ে থাকে এবং কোন রোগীর প্রয়োজন পরলে তাকে তা দেয়া হয়ে থাকে। তাছাড়া আপনি যদি কোন কারণে অ্যান্টিবায়োটিক ও অ্যান্টিকনভালসেন্ট ব্যবহার করে থাকেন তাহলে। আনারস খেতে ডাক্তাররা নিষেধ করে থাকেন। কেননা পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে।
- কাঁচা আনারস মুখ ও গলার জন্য ক্ষতিকর– কাঁচা আনারসে আছে অনেক বেশি পরিমানে এসিডিটি যা আমদের মুখের ভিতর ও গলায় শ্লেষ্মা তৈরি করে। এবং ফলটি খাওয়ার পর মাঝে মাঝে অনেকের পেটে ব্যথাও হতে পারে।
শেষ কথা
এই পোস্টে তুলে ধরার চেষ্টা করেছি আনারসের উপকারিতা ও অপকারিতা দিকগুলো তুলে ধরার। আশা করি এই পোস্ট থেকে খুব সহজে জানতে পেরেছেন আনারসের উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে। আমাদের ওয়েবসাইটের বিভিন্ন ধরনের আর্টিকেল রয়েছে। যেগুলো পড়লে আপনাদের উপকারে আসবে আমাদের ওয়েবসাইট করে দেখতে পারেন।
আরও দেখুনঃ