আমরা সাধারণত কমলা খেয়ে থাকি, কিন্তু এর গুনাগুন সম্পর্কে অনেকেই জানি না। এর মাঝে অনেকের জানতে ইচ্ছে হয় কমলা খাওয়ার উপকারিতা দিক। আবার অনেকের জানতে ইচ্ছা হয় কমলার ক্ষতিকর দিক। কমলার মৌসুম শীতকালে, শীতকালে বাজারে কমলার রপ্তানি বেশি হয়। এ সময় বাজারের রপ্তানি বেশি হওয়ার কারণে হাতের লাগালে দাম এসে পড়ে। এর ফলে অনেকেই এই ফলটি সংগ্রহ করতে পারে।
ফলটি দেখতে যেমন সুন্দর এটি খেতে অনেক মজা, এর সাথে গুণাগুণ তো রয়েছেই। তাহলে চলুন আজকের এই পোস্টে থেকে জেনে নেওয়া যাক কমলা খাওয়ার উপকারিতা দিক ও অপকারিতা দিক। আপনাদের বোঝানোর সুবিধার্থে কয়েকটি বিষয়ে বিভক্ত করে তুলে ধরেছি। আশা করি আপনারা খুব সহজেই জানতে পারবেন আজকের এই পোস্টে থেকে কমলার উপকারিতা দিক ও অপকারিতা দিক।
Contents
কমলা খাওয়ার নিয়ম
অনেকেই জানতে চাই কমলা খাওয়ার নিয়ম। সাধারণত কমলা খাওয়ার কারণ হচ্ছে এর পুষ্টি গুণের জন্য। কমলাতে রয়েছে ভিটামিন সি, ভিটামিন-এ, ফ্ল্যাভনয়েড, অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট, ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, পটাসিয়াম ও ডায়েটারি ফাইবার। এছাড়াও ঠাণ্ডা লাগা, কানের সমস্যা দূর করতে ভীষণ উপকারী। তাই আমাদের উচিত অপ্রয়োজনীয় খাদ্য যেগুলো কিনা শরীরের জন্য ক্ষতিকর ওই সমস্ত খাবার না খাওয়া। নিজের স্বার্থ অনুযায়ী যতটুকু সম্ভব নিয়মিত কমলা খাওয়া।
কমলা খাওয়ার উপকারিতা
শীতকালীন এই ফলটি চাহিদা অনেক। তবে সকল মৌসুমে এই ফলটি পাওয়া যায়। বিশেষ গুনাগুনের কারণে শরীর স্বাস্থ্য ভালো রাখতে সাহায্য করে। তাহলে চলুন কমলা খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক।
- যারা ভিটামিন সি এর অভাবে ভুগছেন তাদের জন্য কমলা খাওয়ার উপকারিতা অনেক। প্রথমে বলবো কমলাতে থাকা ভিটামিন নিয়ে। কমলা তে রয়েছে ভিটামিন সি, নিয়মিত কমলা খাওয়ার মাধ্যমে ভিটামিন সি এর চাহিদা সত্তর শতাংশ পূরণ হয়। শরীরে আয়রন অনেক প্রয়োজনীয় তাই আয়রনের প্রয়োজনীয়তা মেটাতে কমলা অনেক কার্যকার। এছাড়াও শরীরের ক্ষত সুস্থ করতে, শরীরের র*ক্তনালিকার গঠনে, তরুণাস্থি গঠনে, এবং কোলাজেন সঞ্চয়ে সাহায্য করে।
- রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়– কমলা তে থাকা ভিটামিন যা স্বাস্থ্যের জন্য খুবই উপকারী। কমলাতে থাকা ভিটামিন সি রয়েছে। তাই নিয়মিত কমলা খেলে শরীর সুস্থ সবল থাকে।
- ডাইবেটিস নিয়ন্ত্রণ রাখে– চিকিৎসকদের মতে কমলা খাওয়া অনেক উপকার। কমলাতে রয়েছে এন্টিঅক্সিডেন্ট ও ফাইবার র*ক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে ইনসুলিন উৎপাদনে সহায়তা করে।
- ত্বকের জন্য কমলা- ত্বকের জন্য কমলা অনেক উপকারী। যারা ত্বকের যত্ন করতে চান তারা নিয়মিত কমলা খেতে পারেন। কমলাতে রয়েছে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, এর ফলে ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়ায়। ত্বকের বলিরেখা দূর করে তারুণ্য ধরে রাখতে সাহায্য করে।
- কমলা দৃষ্টি শক্তি বাড়ায়– রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে তুলার পাশাপাশি। যাদের দৃষ্টি শক্তি দুর্বল তাদের জন্য কমলার উপকারিতা অনেক। কমলা দৃষ্টিশক্তি বাড়াতে সাহায্য করে। কমলাতে ভিটামিন সি, এর পাশাপাশি রয়েছে ভিটামিন এ, যা দৃষ্টিশক্তি বৃদ্ধি করার পাশাপাশি রাতকানা রোগ প্রতিরোধে সাহায্য করে। এছাড়াও বৃদ্ধ বয়সে চোখের বিভিন্ন সমস্যা প্রতিরোধে কমলা কার্যকর অনেক।
- ব্লাড সুগার নিয়ন্ত্রণে কমলার কার্যকারিতা– কমলাতে থাকা আঁশজাতীয় উপাদান, যা ব্লাডসুগার নিয়ন্ত্রণে করে। ব্লাড সুগার রোগীদের জন্য কমলার উপকারিতা অনেক।
- বদহজম দূর করার জন্য কমলার উপকারিতা– ফাইবারযুক্ত ফলের মধ্যে কমলা একটি বদহজম দূর করার পাশাপাশি পাচনতন্ত্রকে শক্তিশালী করে। ফাইবার মলকে স্বাভাবিক করে মল ত্যাগের প্রক্রিয়াকে সহজ করে তোলে ফলে কোষ্ঠকাঠিন্যের মতো সমস্যাও দূর হয়।
- ক্যান্সার প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে– কমলাতে রয়েছে কমলাতে ডি-লিমোনিনএক প্রকার যৌগ। এর ফলে ক্যান্সার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে তোলে। এটি ফুসফুসের ক্যান্সার, স্তন ক্যান্সার এবং স্কিন ক্যান্সার প্রতিরোধে সাহায্য করে। তাই বলা যায় ক্যান্সার রোগ নিয়ন্ত্রণ রাখার জন্য কমলা খাওয়া অত্যন্ত জরুরি।
- হৃদরোগের উপশম ঘটায়– কমলাতে রয়েছে নানান ধরনের ভিটামিন এর মধ্যে খনিজ উপাদান রয়েছে ও ভিটামিন সি এবং পটাশিয়াম। তাই হৃদরোগের জন্য অনেক উপকারী। পটাশিয়াম উচ্চ র*ক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে ফলে হার্ট এট্যাক এবং স্ট্রোকের ঝুঁকি কমে যায়। আর ভিটামিন সি কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণ করে হার্টকে সুস্থ রাখে।
কমলা বেশি খেলে কি হয়
অতিরিক্ত কমলা খাওয়া ভালো নয়। তবে দিনে একটি বা দুটি খাওয়া যেতে পারে। কমলা বেশি খেলে বমি ও বুক জ্বালা করা হতে পারে। যাদের র*ক্তে পটাশিয়ামের মাত্রা বেশি তারা কমলা খাওয়ার আগে ডাক্তারের পরামর্শ নিন। কমলাতে যদিও পটাশিয়ামের মাত্রা খুবই কম তবুও ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে খাওয়া উচিত। শরীরে মিনারেলের পরিমাণ বেশি, তাদের হাইপারক্যালেমিয়ার সমস্যা দেখা দিতে পারে।
কমলা খেলে কি ঠান্ডা লাগে
অনেকেই জানতে চাই কমলা খেলে ঠান্ডা লাগে কিনা। যারা ভাবছেন কমলা খেলে ঠান্ডা লাগে তাদের উদ্দেশ্যে বলা যায় এটি তাদের ভুল ধারণা। কমলা একটি শীতকালীন ফল তবে এটি সারা বছরই পাওয়া যায়। শীতকালীন সময় বিভিন্ন কারণে ঠান্ডা লাগতে পারে।
- কমলা ঠান্ডা লাগা থেকে বিরত রাখে, তাই যারা ভাবছেন কমলা খেলে ঠান্ডা লাগবে কিনা। তাদের অবশ্যই জেনে রাখা উচিত কমলা ঠান্ডা সারাতে অনেকের কার্যকর। যারা ঠান্ডার সমস্যায় ভুগছেন তাদের জন্য কমলা অনেক কার্যকার। এছাড়াও শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও বাড়ায় , ত্বক শুষ্ক ও ম্লান দূর করে। হজমশক্তি বাড়ায়। কমলা এমন একটি ফল যা শরীর সুস্থ রাখে এবং ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়ায়।
কমলা খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা
আমরা উপরে জানতে পেরেছি কমলা খাওয়ার উপকারিতা দিকগুলো। এখন আমরা জেনে নেব কমলা খাবার কিছু ক্ষতিকর দিক।
- কমলার উপকারিতা দিকের পাশাপাশি রয়েছে এর ক্ষতিকর দিক। কমলাতে রয়েছে প্রচুর ভিটামিন যা শরীরের জন্য খুবই কার্যকর। তবে কিছু বিষয় রয়েছে যা শরীরের জন্য ক্ষতিকর। অতিরিক্ত কমলা খেলে বদহজম, ডায়রিয়া, পেটব্যথা, গলা, বুক পেট জ্বলা । যাদের র*ক্তে পটাশিয়ামের মাত্রা বেশি তারা কমলা খাওয়ার আগে ডাক্তারের পরামর্শ নিন। কারণ কমলা পটাশিয়াম যুক্ত। তাই যারা হার্ট ও কিডনি রোগে আক্রান্ত তাদের অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে।
- এছাড়াও শিশুদের বেশি কমলা খাওয়ানো উচিত নয়। কারণ এতে পেট ব্যথা এবং সিনকোপের মতো সমস্যা দিতে পারে। কমলাতে থাকা অ্যাসকরবিক এসিড এবং সাইট্রিক এসিড ক্ষেত্রবিশেষে অম্বলের কারণ হতে পারে। এছাড়াও অতিরিক্ত কমলা খেলে ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বাড়তে পারে। তাই এ সমস্ত কারণে কমলা খাবার ক্ষেত্রে অবশ্যই সতর্ক হওয়া উচিত।
শেষ কথা
আমরা চেষ্টা করেছি আজকের এই পোস্টে কমলার উপকারিতা দিক ও অপকারিতা দিকগুলো তুলে ধরার। আশা করা যায় আজকের এই পোস্টে থাকে খুব সহজে জানতে পেরেছেন কমলার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে। আপনারা যদি আরো স্বাস্থ্য বিষয় জানতে চান তাহলে আমাদের ওয়েবসাইটের ভিজিট করে দেখতে পারেন। আমাদের ওয়েবসাইটে স্বাস্থ্য বিষয়ে আরো বিভিন্ন আর্টিকেল রয়েছে যা আপনাদের উপকারে আসতে পারে।
Read More