সুস্বাদু ফল আমড়া, কেননা টক ও মিষ্টি হওয়ার কারণে এই ফলটি সকলের চাহিদার মধ্যেই থাকে। ছোট বড় সকলের কাছে এই ফলটি অনেক প্রিয়। ফলটি আকারে ছোট তবে এই ফলটির স্বাদ অনেক ভালো। বাজারে প্রায় সময় এই ফলটি পাওয়া যায়। মরিচ গুঁড়া ও লবণের সংমিশ্রণে এই ফলটির স্বাদ আরো বৃদ্ধি পায়। অধিকাংশ মানুষ এই ফলটি মরিচ গুঁড়া ও লবণ দিয়ে খেতে পছন্দ করে।
এর পাশাপাশি এই ফলটি আচার করেও খাওয়া হয়। তবে এর গুনাগুন বা উপকারিতা সম্পর্কে অনেকেরই অজানা। টক মিষ্টি এই ফলটি আমাদের শরীরের জন্য কতটা উপকারিতা আজকের এই পোস্টে তুলে ধরা হবে। আপনাদের বোঝানোর সুবিধার্থে আজকের এই পোস্টে কয়েকটি বিষয়ে বিভক্ত করে আমড়া খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা তুলে ধরা হয়েছে। এর সাথে আরো অনেকেই জানতে চায় আমড়ার গুনাগুন, আমড়া ফলের উপকারিতা, আমড়া খাওয়ার উপকারিতা ও আমরা ফলের ছবি। যা আজকের এই পোস্টে তুলে ধরা হয়েছে। তাহলে চলুন জেনে নেওয়া যাক আমরা খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা দিকগুলো।
Contents
আমড়া গুনাগুন
টক ও মিষ্টি ফল হওয়ার কারণে অনেকের কাছেই প্রিয় এই ফল। এটি মূলত কাচা বেশি খাওয়া হয় এর পাশাপাশি আচার বানিয়ে খাওয়া হয়। মুখে রুচি বাড়িয়ে তোলার ক্ষেত্রে আমড়ার অনেক কার্যকারিতা রয়েছে। আমড়ার গুনাগুন আমাদের জেনে রাখা প্রয়োজন, তাহলে চলুন জেনে নেয়া যাক আমড়ার গুনাগুন সম্পর্কে।
আমড়াতে রয়েছে পুষ্টি উপাদান ভিটামিন সি রয়েছে । ১০০ গ্রাম আমড়া খেলে তা থেকে ১ দশমিক ১ গ্রাম প্রোটিন, ১৫ গ্রাম শ্বেতসার, শূন্য দশমিক ১০ গ্রাম স্নেহ জাতীয় পদার্থ এবং ৮০০ মাইক্রোগ্রাম ক্যারোটিন পাওয়া যায়। এ ছাড়াও ভিটামিনের মধ্যে ০.২৮ মিলিগ্রাম থায়ামিন, ০.০৪ মিলিগ্রাম রিবোফ্লাভিন, ৯২ মিলিগ্রাম ভিটামিন-সি পাওয়া সম্ভব। এছাড়াও রয়েছে ৫৫ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম এবং ৩.৯ মিলিগ্রাম লৌহ। আমড়ার খাদ্যশক্তি ৬৬ কিলোক্যালোরি। খনিজ পদার্থ বা মিনারেলসের পরিমাণ ০.৬ গ্রাম। এর পাশাপাশি প্রোটিন, ক্যালসিয়াম ও আয়রন।
আমড়া ফলের উপকারিতা
আমড়া ফল আমরা সকলেই চিনি। তবে এর উপকারিতা সম্পর্কে অনেকেই জানিনা। ডায়রিয়া, জ্বলাপোড়া, জ্বর, হজমের সমস্যায় ও কফসহ নানা রকম সমস্যা দূর করতে সহায়তা করে আমড়া। এছাড়াও আমড়ায় প্রচুর পরিমান ভিটামিন সি, আয়ারন, ক্যালসিয়াম আর আঁশ আছে, এর ফলে আমাদের শরীরের ভিটামিন ও ক্যালসিয়ামের অভাবে পূরণ করতে সাহায্য করে। আমড়া আমাদের শরীর-স্বাস্থ্য ভালো রাখার জন্য অনক কার্যকারী আমরা ঔষধি হিসেবে কাজ করে।
আমড়া আরো বেশ কিছু উপকারিতা রয়েছে এবং বিভিন্ন অসুখ দেখে দূরে রাখে। যেমন হাড়ের গঠন মজবুত করে, হজম শক্তি বৃদ্ধি করে, পেশী শক্তি বৃদ্ধি করে, মুখে রুচি বৃদ্ধি করে, ওজন কমায়, ত্বক উজ্জ্বল করে, ভিটামিন সি এর অভাব পূরণ করে, মূত্রবর্ধক, কোলেস্টেরলের মাত্রা কমায়। আরো বেশ কিছু উপকারিতা রয়েছে যা আমরা নিচে আলোচনা করব।
আমড়া খাওয়ার উপকারিতা
আমড়া টক মিষ্টি হওয়ার কারণে এই ফলটি অনেকের কাছে প্রিয়। এই ফল বিভিন্নভাবে খাওয়া যায় এর সাথে আচার বানিয়ে খাওয়া যায়। তবে আমড়া খাবার বেশ কিছু উপকারিতা রয়েছে যা আমরা এখন আলোচনা করব। আমড়া খাওয়া আমাদের জন্য কতটুকু উপকারী তা এখান থেকে জেনে নিতে পারবেন। তাহলে চলুন জেনে আমড়া খাওয়ার উপকারিতা দিকগুলো জেনে নেওয়া যাক।
- হজম শক্তি বৃদ্ধি করে– যাদের হজম শক্তি দুর্বল তাদের নিয়মিত আমরা খাওয়া উচিত। আমরা খাবার মাধ্যমে হজম শক্তি বৃদ্ধি করা যায়। আমরা প্রচুর পরিমাণ ফাইবার থাকার কারণে হজম শক্তির বৃদ্ধি হয়। হজম শক্তি দুর্বল থাকার কারণে যে সমস্যা গুলি দেখা দিতে পারে, গ্যাস, কোষ্ঠকাঠিন্য। এই সমস্যা দূর করার ক্ষেত্রে আমড়ার ভূমিকা রয়েছে অনেক। আর নিয়মিত খাবারের পর আমড়া খেলে তা ডায়াবেটিস ও হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে পারে অনেকটাই।
- ভিটামিন সি এর অভাব পূরণ করে– ভিটামিন সি এর অভাবে হাড়, দাঁত সমস্যা সহ আরো বিভিন্ন ধরনের সমস্যা দেখা দেয়। ভিটামিন সি এর ঘাটতি পূরণ করার ক্ষেত্রে আমড়ার ভূমিকা রয়েছে। আমড়াতে থাকা ভিটামিন সি মানুষের দেহের প্রোটিন কোলাজেন উৎপাদনে সহায়তা করে ত্বকের উজ্জ্বলতা, দৃঢ়তা বজায় রাখতে এবং ত্বকের বলিরেখা প্রতিরোধেও অনেক ভালো কাজ করে।
- কোলেস্টেরলের মাত্রা কমায়– র*ক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা বেশি থাকলে স্ট্রোক ও হৃদরোগের ঝুঁকি থাকে। আমড়া এ সমস্যা থেকে দূরে রাখে অনেকটাই। আমড়া র*ক্তের ক্ষতিকর কোলেস্টেরলের মাত্রা কমিয়ে স্ট্রোক ও হৃদরোগের হাত থেকে রক্ষা করে।
- ওজন কমায়– দেখা যায় অনেকই অতিরিক্ত মেদ কমানোর জন্য খাবার তালিকা কমিয়ে থাকে। যাদের অতিরিক্ত মেদ রয়েছে তাদের ক্ষেত্রে আমড়ার উপকারিতা রয়েছে। আমড়াতে ক্যালরির মাত্রা কম থাকায় ওজন কমাতে সাহায্য করে। প্রতি ১০০ গ্রাম আমড়ায় ২৯ ক্যালরি থাকে। এছাড়াও আমড়াতে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার বা খাদ্যআঁশ থাকে। বদহজম ও কোষ্ঠকাঠিন্য প্রতিরোধে করে।
- হার মজবুত করে– হার মজবুত করার জন্য প্রয়োজন ক্যালসিয়াম যা আমড়াতে রয়েছে। নিয়মিত আমড়া খেতে পারলে ক্যালসিয়ামের অভাব পূরণ হয়। ফলে হাড়ের যে কোনো রোগ দূর করা ছাড়াও হাড়কে শক্তিশালী রাখতেও সাহায্য করে এটি।
- হৃদরোগ প্রতিরোধ করে– আমড়ায় প্রচুর অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকে। গবেষণায় দেখা গেছে যে, আমড়া সার্বিক কোলেস্টেরলের মাত্রা কমায়। তাই আমড়া খাওয়া সার্বিক হৃদস্বাস্থ্যের জন্যই উপকারী। তাই বলা যায় আমরা এই উপকারিতা পাওয়ার জন্য আমরা হওয়া উচিত।
- পেশী শক্তি বৃদ্ধি করে– পেশী দুর্বলতা কমিয়ে পেশির শক্তি বৃদ্ধি করে। আমড়াতে রয়েছে থিয়ামিন নামের একটি উপাদান যা শরীরের পেশি সংকোচন ও স্নায়ু সংকেত সঞ্চালনে সহায়তা করে।
- ত্বক সুস্থ রাখে– অনেকের ব্রণ এর কারণে বিভিন্ন ধরনের মেডিসিন খেয়ে থাকে। তবে এই সমস্যা দূর করতে আমড়ার উপকারিতা রয়েছে। আমড়াতে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন সি থাকে শরীর-স্বাস্থ্য ভালো রাখার পাশাপাশি ত্বক সুস্থ রাখতে সাহায্য করে। ত্বকের ব্রণ কমাতে, ত্বক উজ্জ্বল রাখতেও আমড়া দারুণ উপকার করে থাকে। শরীর-স্বাস্থ্য ভালো রাখার পাশাপাশি ত্বকের যত্নেও আমড়া খাওয়া যেতে পারে।
- মূত্রবর্ধক– আমড়ার রসে অনেক ঔষধি গুণাগুণ পাওয়া যায়। এটি মূত্রবর্ধক হিসেবে কাজ করে পর্যাপ্ত প্রস্রাবের মাধ্যমে মানুষের শরীর থেকে তরল বের করে দিতে সহায়তা করে। ফলে শরীর থেকে সোডিয়াম কমে গিয়ে উচ্চর*ক্তচাপের ঝুঁকি কমে যায়। এ ছাড়া এটি সর্দি-কাশি ও জ্বরের সমস্যা দূর করতেও অনেক উপকারী ভূমিকা পালন করে। তাই বলা যায় নিয়মিত আমড়া খাওয়া যেতে পারে।
- মুখের রুচি বৃদ্ধি করে– মুখের রুচি বৃদ্ধি করার পাশাপাশি ক্ষুধা বৃদ্ধি করতে অনেক কার্যকারীতা রয়েছে আমড়ার। তাই যাদের মুখের রুচি কম তারা নিয়মিত আমরা খেতে পারলে এ সমস্যা থেকে অনেকটাই মুক্তি পাবে।
এছাড়াও সর্দি, কাশি, কফ, ইনফ্লুয়েঞ্জা রোগের জীবাণুর বিরুদ্ধে কাজ করে। তাই বলা যায় আমড়ার এই বিশেষ গুনাগুন পাওয়ার জন্য খাদ্য তালিকায় আমরা রাখা উচিত। এতে করে শরীর সুস্থ ও সরল থাকবে ও বিভিন্ন রোগ থেকে রক্ষা পাওয়া যাবে।
আমড়া খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা
আমড়া খাওয়া আমাদের জন্য বিশেষ উপকারী। আমরা খাবার মাধ্যমে শরীরের বিভিন্ন রোগ থেকে মুক্ত থাকা যায় এবং শরীর স্বাস্থ্য ভালো রাখা যায়। আমরা বিভিন্ন রোগ থেকে দূরে রাখার পাশাপাশি ত্বকের যত্নেও অনেক কার্যকরী। যা আমরা উপরে আলোচনা করেছি। এর পাশাপাশি এখন তুলে ধরব আমরা খাওয়ার অপকারিতা এ বিষয়গুলো অবশ্যই খেয়াল রাখা উচিত।
- আমড়া ওজন কমাতে সাহায্য করে। যারা ওজন বাড়াতে চায় তাদের অতিরিক্ত আমড়া খাওয়া উচিত নয়। আমড়াতে ক্যালরির মাত্রা কম থাকায় ওজন কমাতে সাহায্য করে। তাই যারা ওজন বৃদ্ধি করতে চায় তাদের ক্ষেত্রে অতিরিক্ত আমড়া খাওয়া যাবেনা।
- আমরা টক মিষ্টি ফল। টক হওয়ার কারণে খালি পেটে খাওয়া যাবেনা। খালি পেটে খেলে সমস্যা হতে পারে পেট ব্যথা বা বদহজম হওয়ার মত সমস্যা দেখা দিতে পারে।
- এই ফলটির ভরা পেটে খেতে হবে যেমন সকালে নাস্তার পর বা দুপুর বা বিকেল বেলায়, এমন সময় ফলটি খাওয়া ভালো। এই ফলটি সাধারণত লবণ ও মরিচের গুঁড়া সংমিশ্রণে খাওয়া হয়। এক্ষেত্রে দেখা যায় ফলটির পুরোপুরি পুষ্টিগুণণ কাজে লাগে না।
আমড়া ফলের ছবি
অনেকেই আমড়ার ছবি সংগ্রহ করতে চায়। তাই আমরা এই পোস্টে আমড়ার ছবি তুলে ধরেছি। আশা করি আজকের এই পোস্টে থাকা আমড়ার ছবিটি আপনাদের কাছে ভালো লাগবে।
শেষ কথা
আমরা চেষ্টা করেছি আমড়ার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে তুলে ধরার। আশা করা যায় এ পোস্ট থেকে আপনি খুব সহজেই জানতে পেরেছেন। আমাদের ওয়েবসাইটে স্বাস্থ্য বিষয়ে বিভিন্ন ধরনের আর্টিকেল রয়েছে। আপনারা চাইলে সেগুলো করতে পারেন। এই আর্টিকেল গুলো পড়ার মাধ্যমে আপনাদের উপকারে আসবে।
আরও দেখুনঃ
- তরমুজ খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা
- জাম খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা
- কমলা খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা – কমলা খাওয়ার আগে যে বিষয়গুলো জানা প্রয়োজন
- জলপাইয়ের উপকারিতা ও অপকারিতা – এখান থেকে জেনে নিন খুব সহজেই
- মাল্টার উপকারিতা ও অপকারিতা – জেনে নিন মালটার যত গুনাগুন
- কাঁঠাল খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা
- আপেল খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা – আপেল খাওয়ার ক্ষেত্রে যা জানা দরকার